You are currently viewing আখেনের যুদ্ধ – নাহিদা সুলতানা ইলা

আখেনের যুদ্ধ – নাহিদা সুলতানা ইলা

 


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের একটি প্রধান কর্ম ছিলো আখেন যুদ্ধ। আমেরিকান ও জার্মান বাহিনী দ্বারা সংগটিত হয় আখেন যুদ্ধ। আমেরিকান বাহিনীদেরকে বলা হতো মিত্রবাহিনী,জার্মান বাহিনীদেরকে বলা হতো অক্ষশক্তি বাহিনী।

এই আখেন যুদ্ধ শুরু হয় ১৯৪৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে।কিন্তু ১৯৪৪ সালের ৬-ই জুন মিত্রবাহিনী পরিচালনা করে “অপারেশন ওভারলর্ড” যা “নরম্যান্ডি অবতরণ” বা ডি-ডে নামেও পরিচিত। নরম্যান্ডি আক্রমণের আগেই মিত্রবাহিনীরা তাদের পরিকল্পনা করে কিভাবে সমগ্র উপকূল বরাবর বিস্তৃতভাবে জার্মানদের ধাওয়া করে ফ্রান্সের ভিতর অগ্রসর হবে (ব্রড ফ্রন্ট পরিকল্পনা), নাকি জার্মান কেন্দ্র বার্লিনে সরাসরি হামলা করে এই একটি জায়গায় তারা তাদের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে হামলা চালাবে ( ন্যারো ফ্রন্ট পরিকল্পনা)। যদি মিত্রবাহিনীরা অপারেশন “গুডউড” এর সময় নরম্যান্ডি সমুদ্রতট কায়েন এলাকাতে জার্মানদের রক্ষাব্যূহ ভেদ করতে পারতো তাহলে “ন্যারো ফ্রন্ট পরিকল্পনাটি” বাস্তবায়ন করা যেত।

কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তব পরিস্থিতি ছিলো অন্যরকম। ব্রিটিশ এবং কানাডিয়ান সেনাবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত “২১তম যুগ্ম বাহিনী ” অপারেশন কোবরা চালাতে চালাতে বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস ও উত্তর জার্মানির দিকে ধাবিত হয়।যা ছিলো ব্রড ফ্রন্ট পরিকল্পনার অংশ।

এরপর ১৫ আগস্ট মিত্রবাহিনী “অপারেশন ড্রাগুন” পরিচালনা করে যা ছিলো ট্যুলো এবং কান নগরীর মধ্যবর্তী ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চল। অপারেশন ড্রাগুন এর দায়িত্বে ছিলেন ‘মার্কিন ৭ম সেনাবাহিনী’ এবং ‘ফরাসি ১ম সেনাবাহিনী’ এর সমন্বয়ে গঠিত “৬ষ্ঠ যুগ্ম বাহিনী”। এই বাহিনী সেপ্টেম্বরের মধ্যভাগে দক্ষিণে অগ্রসর হতে হতে ব্রাডলির বাহিনীর সাক্ষাৎ লাভ করর।ডেভার্সের বাহিনী কর্তৃক ভুমধ্যসাগরীয় মিত্রবাহিনী সদর দপ্তর থেকে স্থানান্তরিত হয়।মিত্রবাহিনী ফ্রান্সের যত অভ্যন্তরে প্রবেশ করে তাদের রসদ সরবরাহ তত কঠিন হতে থাকে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে মিত্রদের সম্মুখ রণাঙ্গন জার্মান সীমান্তে গিয়ে পৌছে।

মিত্রবাহিনীরা কোন স্থানে আক্রমণ করবে তা অনুমান করা অসম্ভব ছিলো তাই জার্মান সেনাদের অর্থাৎ অক্ষশক্তি বাহিনীদের সমগ্র সমুদ্র উপকূল জুড়ে ছড়িয়ে দেয়া হলো। জার্মান ট্যাংকবাহিনী “প্যানজার” এর অধিকাংশ দ্রুতগতির যানবাহন নিয়োজিত করা হয়। সেনাবাহিনীর প্রতিটি দলে যানবাহন বহর নিযুক্ত করা হয়। জার্মান সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর কর্তৃক বিভক্তকৃত জার্মান সেনাদের ৩ ভাগের ১ ভাগ “যুগ্ম বাহিনী-বি” এর সাথে “১১শ প্যানজার বিভাগ” ও “২য় এস.এস. প্যানজার বিভাগ- ডাস রাইখ নিযুক্ত হয়ে ফ্রান্সের মন্ট্যুবান নগরীকে এবং “৯ম প্যানজার বিভাগ” রোন ব-দ্বীপ এলাকাকে ঘিরে রাখে। অবশেষে পাল্টা আক্রমনে জার্মান সীমান্তে অসংস্থানকে পুনর্গঠিত করে এবং “কোন মার পকেটে” অবস্থানরত জার্মানদের পরাস্ত করে।

“অপারেশন গ্রেনেড” জার্মানদের বিলম্বিত করলে তারা রুর নদীর উজানে অবস্থিত বাঁধ ভেঙ্গে দিয়ে চারপাশে উপত্যকা অঞ্চল প্লাবিত করে দেয়। জার্মান ফিল্ড মার্শাল ‘গার্ড ফন রুনস্টেট’ রাইন নদীর পিছনে সেনা প্রত্যাহারের জন্য হিটলারের অনুমতি চান।কিন্তু হিটলার বুঝতে পারে এই সময় শত্রুদের প্রতিরোধ করা মানে অনিবার্য পরাজয়কে বিলম্বিত করা মাত্র।তাই হিটলার জার্মান ফিল্ড মার্শালকে তার সৈন্যদের অবস্থান ধরে রেখে যুদ্ধ চালিয়ে যাবার নির্দেশ দেন।

“রাইনল্যান্ডের” যুদ্ধে জার্মান বাহিনীর যে অংশ রাইনের পশ্চিম তীরে অবস্থান করছিলো তারা শোচনীয়ভাবে পরাজিত ও পরাস্ত হয়। ২,৮০,০০০ জার্মান সেনা মিত্রবাহিনীদের হাতে আটক হয়। এসমস্ত যুদ্ধে জার্মানদের মোট ক্ষয়ক্ষতির সংখ্যা ছিলো প্রায় ৪,০০,০০০ সেনা।

১৯৪৫ সালের ৪-ই এপ্রিল হিটলারের পার্বত্য বাসস্থান বের্গফ নগরী দখল করে নেয়। ৪-ই মে নেদারল্যান্ডস, উত্তর পশ্চিম জার্মানি ও ডেনমার্কে অবস্থানরত সকল জার্মান সেনা ব্রিটিশ ফিল্ড মার্শাল মন্টগামির কাছে আত্মসমর্পণ করে।৫-ই মে জার্মান “যুগ্ম বাহিনী-জি” মার্কিন সেনাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে।আত্মসমর্পণকারী বাহিনীদের প্রধানদের মধ্যে অন্যতম ছিলো গ্র্যান্ড অ্যাডমিরাল কার্ল ডনিটজ, যিনি ছিলেন জার্মানির নতুন প্রেসিডেন্ট, ৩য় রাখাইনের রাষ্ট্রপ্রধান। এতে করে ইউরোপে আনুষ্ঠানিক ভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।

 

লিখেছেন,

নাহিদা সুলতানা ইলা

 

 

Leave a Reply