You are currently viewing আশাপূর্ণা দেবী

আশাপূর্ণা দেবী

আশাপূর্ণা দেবী

ঔপন্যাসিক, ছোটোগল্পকার ও শিশুসাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবী ১৯০৯ সালের ৮ জানুয়ারি উত্তর কলকাতার পটলডাঙায় মাতুলালয়ে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পৈত্রিক নিবাস হুগলি জেরার বেগমপুর গ্রামে। তাঁর পিতা হরেন্দ্রনাথ গুপ্ত , মাতা সরলাসুন্দরী দেবী। বাবা হরেন্দ্রনাথ গুপ্ত ছিলেন কমার্শিয়াল আর্টিস্ট । সে যুগের জনপ্রিয় বাংলা পত্রিকাগুলিতে ছবি আঁকতেন তিনি। গুপ্ত-পরিবারের আদি নিবাস ছিল হুগলি জেলার বেগমপুরে। যদিও আশাপূর্ণা দেবীর জীবনের সঙ্গে এই অঞ্চলটির কোনও প্রত্যক্ষ যোগ ছিল না। তাঁর ছোটবেলা কেটেছে উত্তর কলকাতাতেই ঠাকুরমা নিস্তারিনী দেবীর পাঁচ পুত্রের একান্নবর্তী সংসারে। পরে হরেন্দ্রনাথ যখন তাঁর আপার সার্কুলার রোডের (বর্তমান আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় রোড) নিজস্ব বাসভবনে উঠে আসেন আশাপূর্ণার বয়স তখন সাড়ে পাঁচ বছর। কিন্তু বাল্যের ওই কয়েকটি বছর তাঁর মনে গভীর ছাপ রেখে যায়।

প্রথাগত শিক্ষার সৌভাগ্য আশাপূর্ণার হয়নি ঠাকুরমার কঠোর শাসনে। তবে মা সরলাসুন্দরী ছিলেন একনিষ্ঠ সাহিত্য-পাঠিকা। সেই সাহিত্যপ্রীতি তিনি তাঁর কন্যাদের মধ্যেও সঞ্চারিত করতে চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি। বাড়িতে সে যুগের সকল প্রসিদ্ধ গ্রন্থের একটি সমৃদ্ধ ভাণ্ডারও ছিল। এই অনুকূল পরিবেশে মাত্র ছয় বছর বয়স থেকেই পাঠ্য ও অপাঠ্য নির্বিশেষে পুরোদমে পড়াশোনা শুরু করে দেন আশাপূর্ণা। মাত্র ১৫ বছর বয়সে ১৯২৪সালে কালিদাশ গুপ্তের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পর ধীরে ধীরে তাঁর জীবনের ধারা বদলে যায়। স্বামীর উৎসাহে সাহিত্য জগতে প্রবেশ করেন তিনি। অল্প সময়ের মধ্যেই প্রতিষ্ঠা পেয়ে যান। তাঁর কলম দিয়ে একে একে বেরিয়ে আসে কালজয়ী সব উপন্যাস।

বিংশ শতাব্দীর বাঙালি জীবন, বিশেষত সাধারণ মেয়েদের জীবনযাপন ও মনস্তত্ত্বের চিত্রই ছিল তাঁর রচনার মূল উপজীব্য। ব্যক্তিজীবনে নিতান্তই এক আটপৌরে মা ও গৃহবধূ আশাপূর্ণা ছিলেন পাশ্চাত্য সাহিত্য ও দর্শন সম্পর্কে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞা। বাংলা ছাড়া দ্বিতীয় কোনও ভাষায় তাঁর জ্ঞান ছিল না। বঞ্চিত হয়েছিলেন প্রথাগত শিক্ষালাভেও। কিন্তু গভীর অন্তর্দৃষ্টি ও পর্যবেক্ষণশক্তি তাঁকে দান করে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখিকার আসন। তাঁর প্রথম প্রতিশ্রুতি-সুবর্ণলতা-বকুলকথা উপন্যাসত্রয়ী বিশ শতকের বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ রচনাগুলির অন্যতম বলে বিবেচিত হয়। তাঁর একাধিক কাহিনি অবলম্বনে রচিত হয়েছে জনপ্রিয় চলচ্চিত্র।

আশাপূর্ণাদেবীর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলী —

প্রথম রচনা : বিবাহ, সাহিত্য জীবন : প্রথম পর্ব,পুত্রশোক, সাহিত্য জীবন : দ্বিতীয় পর্ব, সাহিত্য জীবন : তৃতীয় পর্ব, সাহিত্য জীবন : চতুর্থ পর্ব, সাহিত্য জীবন : শেষ পর্ব, প্রয়াণ। প্রথম প্রতিশ্রুতি, সুবর্ণলতা, বকুলকথা, নিলয়-নিবাস, দিব্যহাসিনীর দিনলিপি, সিঁড়ি ভাঙা অঙ্ক, চিত্রকল্প, দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তরে, লীলা চিরন্তন, চাবি বন্ধ সিন্দুক, অগ্নিপরীক্ষা, আর এক আশাপূর্ণা, এই তো সেদিন, অলয় আদিত্যের ইচ্ছাপত্র রহস্য, গজ উকিলের হত্যা রহস্য, ভুতুড়ে কুকুর, রাজকুমারের পোশাকে, মনের মুখ, মধ্যে সমুদ্র, যাচাই, ভুল ট্রেনে উঠে, নিমিত্তমাত্র, কখনো কাছে কখনো দূরে, নষ্টকোষ্ঠী, মজারু মামা, ষড়যন্ত্রের নায়ক, চশমা পাল্টে যায়, বিশ্বাস-অবিশ্বাস, কাঁটাপুকুর লেনের কমলা, নেপথ্য নায়িকা,জনম্ জনম্‌কে সাথী, লঘু ত্রিপদী, শৃঙ্খলিতা, সানগ্লাস, শুক্তিসাগর, সুখের চাবি, সুয়োরানীর সাধ, সুরভি স্বপ্ন, যার বদলে যা, বালির নীচে ঢেউ, বলয়গ্রাস, যোগবিয়োগ, নির্জন পৃথিবী, ছাড়পত্র, প্রথম লগ্ন, সমুদ্র নীল আকাশ নীল, উত্তরলিপি, তিনছন্দ, মুখররাত্রি, আলোর স্বাক্ষর, জীবন স্বাদ, আর এক ঝড়, নদী দিক হারা ইত্যাদি।

দেড় হাজার ছোটগল্প ও আড়াইশো-র বেশি উপন্যাসের রচয়িতা আশাপূর্ণা সম্মানিত হয়েছিলেন জ্ঞানপীঠ পুরস্কার সহ দেশের একাধিক সাহিত্য পুরস্কার, অসামরিক নাগরিক সম্মান ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রিতে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে প্রদান করেন পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ সম্মান রবীন্দ্র পুরস্কার। ভারত সরকার তাঁকে ভারতের সর্বোচ্চ সাহিত্য সম্মান সাহিত্য অকাদেমি ফেলোশিপে ভূষিত করেন। ১৯৯৫ সালের ১৩ জুলাই গড়িয়ার কানুনগো পার্কে এই লেখিকার জীবনাবসান হয়।

সূত্র: উইকিপিডিয়া

Leave a Reply