You are currently viewing উদ্যোক্তা কথনঃ পর্ব-০৩, ‘বিষয়ঃ আইডিয়া নির্বাচন’

উদ্যোক্তা কথনঃ পর্ব-০৩, ‘বিষয়ঃ আইডিয়া নির্বাচন’

 

ইতিমধ্যে আমরা জেনেছি একটা ব্যবসা শুরু করার পূর্বে কী কী বিষয় মাথায় রেখে আমাদের পরিকল্পনা করা উচিৎ এবং কোন কোন পথ অনুসরণ করলে আইডিয়া জেনারেশন সহজ হবে।অনেকে মনে করেন, আইডিয়া জেনারেট করেই ব্যবসা শুরুর পথ সহজ হয়ে যায়, তাই নতুন ব্যবসায়ীরা তাদের চিন্তার বিপুল সময় শুধুমাত্র আইডিয়া জেনারেট করতেই ব্যয় করেন। কিন্তু বর্তমানে ৯০ শতাংশ ব্যবসায় ব্যর্থতার অন্যতম কারণ সঠিক ব্যবসা নির্বাচন না করা। অর্থাৎ আমরা চিন্তা করেই হয়তো ২০-৩০ ব্যবসার আইডিয়া জেনারেট করতে পারবো কিন্তু তারমধ্যে কয়টা ব্যবসা আসলেই সফল হবে তা নির্ধারণ করা ব্যবসায়িক সফলতায় সবথেকে বড় ভূমিকা রাখে। 


অতএব ব্যবসায় সফল হতে চাইলে প্রথম এবং অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কাজ “আইডিয়া নির্বাচন”


আইডিয়া নির্বাচনের জন্য দুইটি মানদণ্ড অনুসরণ করা যায়।

১। SWOT Analysis যা আইডিয়ার সাধারণ বিশ্লেষণে সহযোগিতা করবে 

২। এডভান্সড মানদণ্ড এবং পদ্ধতিসমূহ যা পুঙ্খানুপুঙ্খরুপে আইডিয়া সিলেকশনে ভূমিকা রাখবে।


১। SWOT Analysis :
আইডিয়া বিশ্লেষণ   করার জন্য এটি এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে যেকোনো আইডিয়ার গভীরে দেখা যায় এবং ঝুঁকি এবং সুযোগগুলি সনাক্ত করা যায়। আপনার আইডিয়াটি মাঠে কীভাবে পারফর্ম করবে সে সম্পর্কে একটি গভীর অনুভূতি পান।
কিভাবে এটি ব্যবহার করবেন।
SWOT এর পূর্ণরূপ হলো Strength (শক্তি), Weakness (দুর্বলতা), Opportunities (সুযোগ), Threats(হুমকি বা ঝুঁকি)। এটির ব্যবহারের ক্ষেত্রে আইডিয়া বিশ্লেষণে একটি ছোট ম্যাট্রিক্স নির্মিত হয় যা একটি আইডিয়ার মূল্যায়নে খুব সহায়ক হতে পারে। দুটি বিপরীত শব্দ ম্যাট্রিক্সের একপাশে স্থাপন করা হয়। দুর্বলতার বিরুদ্ধে শক্তি, ঝুঁকির বিরুদ্ধে সম্ভাবনা। এরপর যতগুলো আইডিয়া জেনারেট করা হয়েছে তা ম্যাট্রিক্সে রেখে মূল্যায়ন করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে কয়েকটি বিষয়ে। যেমন:
শক্তি: আইডিয়ার শক্তি গুলি কী কী? এগুলি কীভাবে পরবর্তী কৌশলে ব্যবহার করা যেতে পারে। কেন এই আইডিয়াটি অন্যদের চেয়ে ভাল এবং কীভাবে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে?
দুর্বলতা : বাস্তবায়নে কি কোনও দুর্বলতা রয়েছে।   কিছু বিষয় বা প্রয়োজনীয়তা কি পূরণ করা হয় না?
সুযোগ: আপনার জন্য এই আইডিয়া অনুসরণ করার কারণে মার্কেটে কি কি সুযোগ আছে? তা কি অন্যান্য আইডিয়ার চেয়ে ভাল?
হুমকি: যদি আইডিয়াটি সামনে অনুসরণ করা হয় তবে কি কৌশলগত ঝুঁকি রয়েছে? কিছু বিষয় কি আরও বিবেচনা করতে হবে?
সব মিলিয়ে, বলতে পারেন যে SWOT বিশ্লেষণ একটি শক্তিশালী পদ্ধতি যা আপনাকে একটি আইডিয়া আরও ভালভাবে দেখতে এবং সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলি সনাক্ত করতে দেয়।


২। এডভান্সড মানদণ্ড এবং পদ্ধতিসমূহ: 
কোন আইডিয়াটি আপনার জন্য সঠিক হবে তাতে আলো ফেলে এডভান্সড কিছু মানদন্ড। নিম্নে সংক্ষেপে আইডিয়া নির্বাচনের কিছু মানদন্ড  আলোচনা করা হলো:-


ক) আপনার পছন্দকে অনুসরণ করুন :

প্যাশন  একটি ব্যবসায়িক আইডিয়া বেছে নেওয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানদণ্ড এবং কৌশলগুলির মধ্যে একটি। প্যাশন ছাড়া, নির্বাচিত ব্যবসায়িক আইডিয়া সময়ের পরীক্ষায় দাঁড়াবে না।আপনার প্যাশনের সাথে যাওয়া একটি ভাল চালিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা বাড়ায়, কাজের প্রতি ভালবাসা জাগিয়ে তোলে, যার ফলে ব্যবসার জন্য প্রতিশ্রুতি বৃদ্ধি পায়। 
ধরুন, ছোটবেলায় পারিবারিক ইচ্ছা রক্ষায় আপনি গান শিখা শুরু করেছেন কিন্তু আপনার পছন্দ নাচ। গানে আপনার প্যাশন কাজ করেনা, দিনশেষে দেখা গেল সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত না নেওয়ার কারণে আপনার কোনোটিই ভালোভাবে শিখা হলনা।
অতএব, ব্যবসায়িক আইডিয়া নির্বাচন করার সময় এটিই প্রথম বিবেচনা করা হবে। তবে হ্যা,আপনার আবেগ অনুসরণ করা যথেষ্ট নয়, কারণ এটি বাস্তবায়নযোগ্য/কার্যকর কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য ধারণাটি যত্নসহকারে পরীক্ষা করা প্রয়োজন। ধরুন আপনার অত্যন্ত ইচ্ছা গাছ কাটার ব্যবসা করবেন কিন্তু না তা নৈতিকতার দিক দিয়ে সঠিক না তা বাস্তবায়ন করা উচিৎ!


খ)এমন একটি আইডিয়া নির্বাচন করা যা প্রতিলিপি করা কঠিন :
এমন অনেক ব্যবসা রয়েছে যাতে ভাল অর্থায়ন করা হয় এবং খুব দীর্ঘ সময় ধরে মাঠে থাকার ক্ষমতা রয়েছে। এই ব্যবসাগুলি বিভিন্ন শিল্পের প্রধান খেলোয়াড় যা তারা পরিচালনা করে। 
ব্যবসায়িক ধারণা নির্বাচন করার সময়, এটি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা প্রয়োজন। এমন ব্যবসায় বিনিয়োগ করা যেখানে আপনার প্রতিযোগীদের একটি বড় আর্থিক স্থান রয়েছে তা আপনার ব্যবসায়ের পক্ষে ক্ষতিকারক প্রমাণিত হতে পারে। 
শুরুতে উদ্যোক্তারা এমন একটি ব্যবসা শুরু করা উচিত যেখানে কম প্রতিযোগিতা রয়েছে। এখানে, আপনার “ডিফিকাল্ট টু কপি” আইডিয়াটি আপনার ব্যবসাকে প্যাকের অগ্রভাগে রাখবে, কারণ এটি পৃষ্ঠপোষকতা আকর্ষণ করবে যা ব্যবসাকে তার প্রতিযোগিতা থেকে আলাদা করে। 


গ) ব্যবসার ভবিষ্যৎ :
একটি ব্যবসায়িক আইডিয়া নির্বাচন করারক্ষেত্রে, ব্যবসার ভবিষ্যৎ বিবেচনা করা একান্ত প্রয়োজন। অনেক ব্যবসা এমন খাতে কাজ করে যেখানে স্থায়িত্ব কম। এর একটি উদাহরণ হল কয়লা খনির ব্যবসা। 
প্রধানত কার্বন জ্বালানির কারণে বিশ্ব উষ্ণায়নের বিপদ সম্পর্কে ক্রমবর্ধমান সচেতনতার সাথে, এই দিকে একটি ব্যবসায়িক ধারণা বিকাশ করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। কারণ জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ক্রমশ নিরুৎসাহিত হচ্ছে। 
অতএব, এটি ব্যবসায়িক ধারণার স্থায়িত্বের উপর ছায়া ফেলে। 


ঘ) ব্যবসায়িক মডেল সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ উপলব্ধি :
একটি টেকসই এবং সমৃদ্ধ ব্যবসা গড়ে তুলতে, ব্যবসায়িক মডেল সম্পর্কে একটি ভাল বোঝাপড়া থাকা গুরুত্বপূর্ণ। 
অতএব, এই মানদণ্ড / কৌশল একটি ব্যবসায়িক আইডিয়া নির্বাচন করার একটি প্রয়োজনীয় পূর্বশর্ত। এই সমস্যার কারণে (ব্যবসায়িক মডেল বোঝার অভাব) অনেক ব্যবসা রয়েছে যা ব্যর্থ হয়। 
শুধু বোঝাপড়া যথেষ্ট নয়, কারণ এর জন্য বাস্তবায়নযোগ্য দক্ষতারও প্রয়োজন। ব্যবসায়িক আইডিয়া নির্বাচন করার ক্ষেত্রে এই মানদণ্ডটিকে মাপকাঠি হিসাবে ব্যবহার করা ব্যবসাটিকে তার শৈশবে ব্যর্থ হওয়া থেকে বাঁচায়।


ঙ)বাজার সম্ভাব্যতা যাচাই পূর্বক সঠিক পণ্য নির্বাচনঃ 

প্রাথমিক ভাবে কিছু পণ্য নির্বাচন করে দেখতে হবে বাজারে ওই পণ্যগুলোর চাহিদা কেমন রয়েছে?

★পণ্যের ক্রেতা কারা, তাদের বয়স কত? 

★ক্রেতাদের মধ্যে কত ভাগ নারী/ পুরুষ? 

★ভোক্তাদের গড় অায় কেমন?

★শিক্ষার মান কী? 

★একজন ভোক্তা পণ্যটি বছরে কয়বার ক্রয় করবে? 

★ভোক্তারা কোন জায়গা থেকে ক্রয় করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে? 

★অঞ্চলভেদে এই পণ্যের কেনাবেচার তারতম্য কতটুকু? 

★কোনো অভিযোগ আছে কিনা? 

★ভবিষ্যতে এ পণ্যের বিকল্প বের হবার সম্ভাবনা কতটুকু? 

★এ পণ্যের সরবরাহ কতটা সহজলভ্য? 

★এই পণ্যের কোন ব্র্যান্ডগুলো বাজারে প্রভাব বিস্তার করছে?

উপরোক্ত বিষয় গুলো বিবেচনা করে এক বা একাধিক পণ্য চূড়ান্ত ভাবে নির্বাচন করা যাবে।


চ) একটি বড় বাজার লক্ষ্য করুন :
এটি একটি ব্যবসায়িক ধারণা নির্বাচন করার অন্যতম মানদণ্ড এবং কৌশল। ব্যবসায়িক ধারণা প্রণয়ন করার সময়, বাজারের আকার এবং ব্যবসা টি পরিবেশন করা হবে এমন লোক/ক্লায়েন্টদের সমালোচনা কি হতে পারে চিন্তা ভাবনা করা উচিত। 
সীমিত ক্লায়েন্ট বেস দিয়ে একটি ব্যবসায়িক আইডিয়া নির্বাচন করলে এমন একটি ব্যবসা হবে যা বিক্রয়ের উপর প্রকৃত প্রভাব ফেলবে না। বৃহত্তর বাজারগুলিকে লক্ষ্য করলে সুবিধা হল ব্যবসায়িক ধারণাগুলি সহজেই তহবিল/ঋণের অ্যাক্সেস পায়। 
এর কারণ হল বিনিয়োগকারী বা ঋণগ্রহীতারা ব্যবসার সম্ভাবনাকে একটি প্রধান খেলোয়াড়ে পরিণত হতে দেখেন, যার ফলে তাদের বিনিয়োগ এবং স্বার্থ রক্ষা করা যায়। 


ছ) অনুরূপ ব্যবসায়িক আইডিয়াগুলি গুলি পরীক্ষা করা এবং তারা কীভাবে কাজ করেছে তা পর্যবেক্ষণ করা:

একটি ব্যবসায়িক আইডিয়া নির্বাচন করার সময়, এটির অন্যান্য অনুরূপ ব্যবসায়িক আইডিয়াগুলি অনুসন্ধান করা ভাল হবে যা বিকশিত হয়েছে এবং এই ধারণাগুলি কীভাবে কাজ করেছে তা পরীক্ষা করা উচিত হবে।
যেমন,  সাফল্যের হার কত? এবং নির্বাচিত ব্যবসায়িক আইডিয়ার সাফল্য বা ব্যর্থতার কারণ। 
ধরুন, আপনি কাপড়ের ব্যবসা করতে যাচ্ছেন, যদি আপনার অনুরুপ ব্যবসায়ীরা কি কি ভুল করেছে, কেন ব্যর্থ বা কি তাদের সফলতা এনেছে আপনি বুঝতে পারেন তাহলে আপনার আইডিয়া বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আপনি এই টেকনিক মেনে চলতে পারবেন একটি ব্যবসায়িক আইডিয়া নির্বাচন করার জন্য এই মানদণ্ড/কৌশলটি নিশ্চিত করে যে পূর্ববর্তী ব্যবসায়িক আইডিয়াগুলিতে করা ভুলগুলির পুনরাবৃত্তি হবে না, ফলে সাফল্যের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়। 


জ)পুঙ্খানুপুঙ্খ ব্রেইনস্টোর্মিং
একটি ব্রেইনস্টোর্মিং  সেশন একটি দৃঢ় ব্যবসায়িক আইডিয়া নির্বাচন করার জন্য একটি মানদণ্ড।  ব্রেইনস্টোর্মিং সেশনের সময়, পুরো ব্যবসায়িক আইডিয়াটিতে কোনও ফাঁক বা উন্নতি বা পরিবর্তনের প্রয়োজন এমন অঞ্চলগুলির যাচাই করা হয়। উপরে দেওয়া বেশিরভাগ পদক্ষেপগুলি মগজধোলাইয়ের অধীনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এছাড়াও আরো কিছু বিষয় গুরুত্ব দেওয়া যায়। যেমন :


★ব্যবসার মুলধনের পরিমাণ (Capital) যাচাই
★সম্ভাব্যতা (Feasibility) যাচাই
★ব্যবসার মার্কেট ডেটা ও কম্পিটিশন চেক করা
★সঠিক প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা
★লাভজনক (Profitable) কিনা যাচাই করা

উপরের আলোচনা মূলত এই সত্যটি উন্মোচন করে যে একটি নির্ভরযোগ্য ব্যবসায়িক আইডিয়া বিকাশের জন্য আগ্রহ থাকা ছাড়াও অনেক বিষয় জানা এবং বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন। উপরোক্ত বিষয় আপনাকে একটি সম্ভাবনাময় ব্যবসা পরিকল্পনা নির্বাচন করতে সহায়তা করবে।

 

লিখেছেন, আরশী হোড় এবং প্রান্ত কর্মকার

 

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ অনুমতি ব্যতিত লেখা আংশিক বা সম্পূর্ণ কপি করা অপরাধ।

 

Leave a Reply