কাউন্সেলিং কি এবং এর প্রক্রিয়ায় ব্যবহার করা কিছু মডেল

  • Post category:Others

এমন কি কখনো হয়েছে যে, আপনার মন খারাপ কোনো কারনে এমন সময় আপনি কারো সাথে বিষয়টা নিয়ে কথা বললেন কিছুক্ষণ। কথা শেষ করে মনে হল খুব হালকা লাগছে বেশ?

হওয়ার কথা এমনটাই কারন, মনের ভাব, কষ্ট ,ক্ষোভসহ যত আবেগ আমাদের মধ্যে কাজ করে তা যত আটকে রাখা হয় তত ঝামেলা।

মনোবিজ্ঞানের একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে যদি একটা তালিকা করা হয় তবে কাউন্সিলিং হয়ত প্রথম ৪টির মধ্যে থাকবে। এই আর্টিকেল এ চলুন জেনে নেয়া যাক কাউন্সিলিং সম্পর্কে কিছু তথ্য।

‘’Counseling’’ শব্দটি এসেছে ‘’Counsel’’ থেকে যার আভিধানিক অর্থ হল উপদেশ প্রদান বা পরামর্শ দান। কিন্তু মনোবিজ্ঞানে উপদেশ প্রদান বা পরামর্শ প্রদানকে কাউন্সিলিং বলা হয় না।কাউন্সিলিং এর কার্যক্ষেত্র আরও বিস্তর। মনোবিজ্ঞানে কাউন্সিলিং বলতে একটি সাহায্যকারী প্রক্রিয়াকে বুঝায়। সাধারণত কাউন্সিলিং বলতে কথাবার্তা, যুক্তিপ্রদান, প্রশ্নের উত্তর প্রদান প্রভৃতির মাধ্যমে মনঃচিকিৎসক ও সমস্যাগ্রস্থ ব্যক্তির মধ্যে যে ভাবের আদান প্রদান করা হয় তাকে বুঝায়। যিনি কাউন্সিলিং কার্যক্রমটি পরিচালনা করেন তাকে কাউন্সিলর বলে।

C. Patterson (1959) এর মতে, “কাউন্সেলিং হলো এমন একটি সম্পর্ক যেখানে একজন থেরাপিস্ট ও এক বা একাধিক সাহায্যার্থীর  মধ্যে আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ব্যক্তিত্ব সম্পর্কিত নিয়মতান্ত্রিক জ্ঞানের ভিত্তিতে মনোবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি প্রয়োগ করে মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের জন্য কাজ করে।” (Counseling is the process involving interpersonal relationship between a therapist and one or more clients by which the former employs psychological methods based on systematic knowledge of the human personality in attempting to improve the mental health of the latter)

কাউন্সেলিং সেবা ব্যক্তির সমস্যা সমাধানে বিশেষ করে ব্যক্তিকে পরিবেশের সাথে উপযোজনে সহায়তা করে। এটি একটি সাহায্যকারী প্রক্রিয়া।  মনোচিকিৎসক ও সমাজকর্মীদের মতে, এটি একটি প্রক্রিয়ার সমষ্টি। কাউন্সেলিং এর শুরু থেকে সমাপ্তি পর্যন্ত একটি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শেষ হয়। সাহায্যার্থী  এই প্রক্রিয়ায় যোগদান হয়ে নিজেদের সার্বিক উন্নতি লাভ করতে সক্ষম হয়।

কাউন্সেলিং প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন মডেল অনুসরণ করা হয়। বেশকিছু মডেলের মধ্যে দুটি অন্যতম মডেল হল ডাসি (DASIE) মডেল এবং তৃতীয় ধাপ মডেল। চলুন এই দুটি মডেল সম্পর্কে একটু জেনে নেয়া যাক।

কাউন্সেলিং প্রক্রিয়ায় ডাসি (DASIE) মডেল

 DASIE model of Counseling Process

ডাসি মডেলকে পেগু স্তর মডেলও বলা হয়। ডাসি মডেল মূলত কাউন্সেলিং প্রক্রিয়ার কয়েকটি ধাপের সমষ্টি। অর্থাৎ কাউন্সেলিং এর যে প্রক্রিয়ায় কয়েকটি ধাপ রয়েছে তাদের সমষ্টিকে বলা হয় ডাসি (DASIE) মডেল। DASIE হচ্ছে ৫টি স্তরে আদ্যক্ষরের সমষ্টি। এর পূর্ণরূপ হচ্ছে- D. Develop, A- Asses, S- State, I – Interven এবং E-End.

মনোবিজ্ঞানী নেলসন জন্স (Nelson Johns) তাঁর রচিত “Life Skill Helping : Helping Others Through a Systematic People Central Approach” (1993) গ্রন্থে ডাসি (DASIE) মডেল এর ব্যাখ্যা করেছেন। নিম্নে ডাসি মডেলের ধাপসমূহ ছক আকারে দেখানো হলো-১

DASIE model of Counseling
ধাপ-১: সম্পর্ক উন্নয়ন, সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও ব্যাখ্যাকরণ Develop the relationship, identify & clarify problems
ধাপ -২: সমস্যা পরিমাণ এবং দক্ষতা পুনঃসংজ্ঞায়ন Asses problems & redefine skill terms
ধাপ-৩: কর্ম লক্ষ্য বর্ণনা এবং পরিকল্পনা প্রণয়নState working goal & plan interventions
ধাপ-৪: আত্ম-সাহায্য দক্ষতার উন্নয়নে হস্তেক্ষেপIntervene to develop self helping skills
ধাপ-৫: সমাপ্ত এবং আত্ম-সাহায্য দক্ষতার একত্রী সমাবেশ End & Consolidate self helping skills

                         Source : Nelson Johns. 1993, DASIE Model of Counseling Process.

রিচার্ড নেলসন জন্স (Richard Nelson Johns) তার গ্রন্থে ‘Life skill counseling’ এর কথা উল্লেখ করেছেন। একে Life skills helping বা Life skills therapy বলেও আখ্যায়িত করেছেন। একজন দক্ষ লোক ‘R’ সূচক ঠোঁট বিষয়ে সচেতন। এগুলো হলো- Responsiveness- দায়িত্বশীল, Realism- বাস্তবধর্মী, Relating-সম্পৃক্তকরণ, Rewarding Activity- প্রশংসিত কর্ম, Right & Wrong-সঠিক ও বেঠিক।

ডাসি (DASIE) মডেলটি Life skills counseling কে ঘিরে আবর্তিত। নিম্নে ভাসি মডেলের ধাপ বা স্তরগুলো। আলোচনা করা হলো :

১. সম্পর্ক উন্নয়ন, সমস্যা চিহ্নিতকরণ এবং ব্যাখ্যাকরণ (Develop relationship identify and clarify): ডাসি মডেলের প্রথম ধাপ হলো সম্পর্ক উন্নয়ন, সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও ব্যাখ্যাকরণ। এক্ষেত্রে কাউন্সিলরের সাথে সাহায্যার্থীর পেশাগত সম্পর্ক স্থাপনকে বুঝায়। এজন্য পদ্ধতি ও কৌশল প্রয়োগ করে সাহায্যার্থীর প্রকৃত সমস্যা চিহ্নিতকরণ এবং এর ব্যাখ্যা দানও করে থাকে। পাশাপাশি সমস্যার গভীরতা যাচাই ও এর কার্যকরণ সম্পর্ক উদ্ভাবন করে।

২. সমস্যার পরিমাপ এবং দক্ষতা পুনঃসংজ্ঞায়ন (Asses Problems & redefine skill terms):  ডাসি মডেলের এই ধাপে সাহায্যার্থীর সমস্যার গভীরতা, স্থায়িত্ব, প্রভাব, এর ভয়াবহতা প্রভৃতি যাচাই করা হয়। কাউন্সিলর সাহায্যার্থীর পরিবার ও তার সমাজের উপর প্রভাব যাচাই এবং ভবিষ্যতে আর কী কী নতুন সমস্যা আসতে পারে তাও তিনি যাচাই করেন। অন্যদিকে, সাহায্যার্থী তার সমস্যাগুলোকে কীভাবে দেখছে বা মূল্যায়ন করবে তাও যাচাই করে থাকে। এক্ষেত্রে কাউন্সিলর সাহায্যার্থীর ক্ষমতা, দক্ষতা ও সম্পদ বিবেচনায় রাখেন এবং সাহায্যার্থীর দক্ষতার পুনঃসংজ্ঞায়ন করে।

৩. কর্ম উদ্দেশ্য বর্ণনা ও পরিকল্পনা প্রণয়ন (State working goals & plan intervention) : ভাসি মডেলের আরেকটি স্তর হলো কর্ম উদ্দেশ্য বর্ণনা ও পরিকল্পনা প্রণয়ন। এ পর্যায়ে কাউন্সিলরকে সাহায্যার্থীর কর্ম উদ্দেশ্য- তার সমস্যার আলোকে ঠিক করতে হয়। পাশাপাশি কর্ম উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। এছাড়া এই ধাপে কাউন্সিলর কর্তৃক সমস্যা সমাধানে করণীয় এবং সাহায্যার্থীর ভূমিকা বিষয়েও স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়।

৪. আত্মসাহায্য দক্ষতার উন্নয়ন হস্তক্ষেপ (Intervene to deveop self helping skills) : ডাসি মডেলের চতুর্থ ধাপ হলো সাহায্যার্থীর আত্ম দক্ষতার উন্নয়নে হস্তক্ষেপ করা। কাউন্সিলর কর্তৃক এই ধরনের হস্তক্ষেপ করা কাউন্সিলরের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কেননা সাহায্যার্থী তার সমস্যা সমাধানে অক্ষম। এক্ষেত্রে কাউন্সিলর যেসব বিষয়ে ভূমিকা রাখেন সেগুলো হলো

ক. সাহায্যার্থীর আত্মদক্ষতা;

খ, আত্মপোলব্ধি।

গ. আত্মসক্ষমতা;

ঘ. আত্মনির্ভরশীলতা;

ঙ. আত্মবিশ্বাস অর্জন

৫. সমাপ্তি এবং আত্মদক্ষতার সমাবেশ (End & Consolidate self helping skills) : কাউন্সেলিং প্রক্রিয়ার সমাপ্তি এবং তার দক্ষতাগুলোর সমাবেশ ঘটানো ভাসি মডেলের সর্বশেষ ধাপ। এক্ষেত্রে সাহায্যার্থীর দক্ষতাগুলো সমাবেশ ঘটিয়ে তাকে সেগুলো প্রয়োগ করতে বলা হয়। এর ফলে সাহায্যার্থী তার দক্ষতাগুলো কাজে লাগিয়ে নিজেই তার সমস্যার সমাধানে সক্ষমতা অর্জন করে।

ডাসি মডেল কাউন্সেলিং প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মডেল হিসেবে বিবেচিত। এই মডেলটি মূলত মানুষের দক্ষতাভিত্তিক। ভাসি মডেলের গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো- সাহায্যার্থীর দক্ষতার উন্নয়ন ও হারানো দক্ষতা পুনরুদ্ধারে সাহায্যার্থীকে সহায়তা করা।

 কাউন্সেলিং প্রক্রিয়ার তৃতীয় ধাপ মডেল

The 3 (Three) Stages Model of Counseling Process

 কাউন্সেলিং প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মডেল হলো তৃতীয় ধাপ মডেল। তিনটি ধাপ নিয়ে এই মডেলটি গঠিত। সাহায্যার্থীর সমস্যা সমাধানে এই ধাপগুলো অনুসরণ করা হয়।

ড. ক্লারা ই হিল (Dr. Clara E. Hill) তার Helping kills in practice : A three stages Model” নামক গ্রন্থে তৃতীয় ধাপ মডেলের কথা উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে UNESCO, Zambia Co-ordinator উইন্সাম গর্ডন (Winsome Gordon) তাঁর রচিত ‘Counseling’ কাউন্সেলি প্রক্রিয়ার তৃতীয় ধাপ মডেলের ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। নিম্নে ছক আকারে তৃতীয় ধাপ মডেল দেখানো হলো –

কাউন্সেলিং প্রক্রিয়ার তৃতীয় ধাপ মডেল Three (3) Stages Model of Counseling Process
ধাপ-১ : বর্তমান দৃশ্যকল্প Stape-1 : The Present Scenario
ধাপ-২ : অগ্রাধিকার সম্পন্ন দৃশ্য Stape-2: The Preferred Scenario
ধাপ-৩ : কৌশল সম্পন্ন দৃশ্য Stape-3 : Strategies (Getting Three )

তৃতীয় ধাপ মডেল ও ইউনসাম গর্ডন

The 3 (Three) Stage Model & Winsome Gordon

ইউনেস্কোর জাম্বিয়া সমন্বয়ক ইউনসাম গর্ডন তাঁর রচিত ‘Counseling’ গ্রন্থে কাউন্সেলিং প্রক্রিয়ার তৃতীয় ধাপ মডেলের ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। নিম্নে তৃতীয় ধাপ মডেলের বর্ণনা করা হলো-

ধাপ-১ : বর্তমান দৃশ্যকল্প (Present scenario) : তৃতীয় ধাপ মডেলের ১ম ধাপ হলো বর্তমান দৃশ্যকল্প। এই ধাপে একজন কাউন্সিলর সাহায্যার্থীর  বর্তমান অবস্থা, তার সমস্যা, সচেতনতা, সাহায্য করার প্রাথমিক অবস্থা জেনে সাহায্যার্থীকে উৎসাহিত করে। এক্ষেত্রে বর্তমান দৃশ্যকল্পের বিষয়গুলো নিম্নরূপ-

ক. সাহায্যার্থীদেরকে তাদের গল্প বলতে সাহায্য করা (Help Clients of tell their Stories) : তৃতীয় ধাপ মডেলের বর্তমান দৃশ্যকল্পে সাহায্যার্থী কাউন্সিলরের কাছে গল্প বলার মাধ্যমে তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরে। এক্ষেত্রে সাহায্যার্থীদেরকে তাদের গল্প বলতে সাহায্য করা কাউন্সিলরের দায়িত্ব। এ পর্যায়ে সাহায্যার্থী তার সমস্যাগুলো ব্যক্ত করে এবং সে ব্যাপারে আলোচনা করে। পাশপাশি সাহায্যার্থী তার হারানো সুযোগগুলোও প্রকাশ করে থাকে। গল্প বলার ক্ষেত্রে কেউ বিব্রতবোধ করে, আবার কেউ করে না। অর্থাৎ, কেউ ঠিকভাবে বলতে পারে আবার কেউ পারে না। এ মডেলের মূল বক্তব্যই হলো সাহায্যার্থীকে শুরু থেকেই তার গল্প বলতে সাহায্য করা।

কাউন্সিলরকে সাহায্যার্থীদের সাথে এজন্য পেশাগত সম্পর্ক স্থাপন করতে হয়। এতে করে কাউন্সিলরের প্রতি সাহায্যার্থীর  আস্থা স্থাপিত হয় এবং গল্প বলতে সহায়তা পায়। গল্প বলার মাধ্যমে কাউন্সিলর সাহায্যার্থীর  যে বিষয়গুলোকে মূল্যায়ন করে থাকে সেগুলো হলো- সমস্যার প্রকৃতি, নিরাপত্তা, অন্য সমস্যা যেগুলো সাহায্যার্থী বলেনি, সাহায্যার্থীর  সমস্যায় পরিবেশের প্রভাব, সাহায্যার্থীর  সম্পদ প্রভৃতি।

        খ. সাহায্যার্থীকে সচেতন করা, সমস্যা মোকাবিলা করা ও নতুন ক্ষেত্র উন্নয়নে সাহায্য করা (Help clients become aware of and overcome, their blind spots & develop new perspectives about themselves & their problems) : সাহায্যার্থী নিজের সমস্যা নিজে সমাধানে ব্যর্থ হয়। ফলে অনেক সুযোগ ব্যক্তি হারিয়ে ফেলে। এতে করে ব্যক্তির চিন্তাচেতনার বিকাশ রুদ্ধ হয়ে পড়ে। আত্মরক্ষার কৌশলও ব্যক্তির থাকে না। কাউন্সিলরগণ এক্ষেত্রে ব্যক্তির চিন্তা ও বুদ্ধিমত্তার দ্বার উন্মুক্ত করতে পারেন।

কাউন্সিলরেরা সাহায্যার্থীর বুদ্ধিমত্তা বিকাশের জন্য সমস্যা ব্যবস্থাপনা ও সুযোগ উন্নয়ন কৌশল প্রয়োগ করে তাদের চেতনার পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম। এতে করে সাহায্যার্থী সচেতন হয়ে উঠে। ফলে সাহায্যার্থী তার সক্ষমতা বুঝতে পারে এবং কার্যকর উপলব্ধি আনতে সহায়তা করে। তৃতীয় ধাপ মডেলে এভাবেই সাহায্যার্থীদের সচেতন করে তোলার কথা বলা হয়েছে। এজন্যই সাহায্যার্থীর সমস্যা মোকাবিলায় সক্ষম হয়ে উঠে।

গ. উদ্দেশ্য সাধনের উপায় অন্বেষণে সাহায্যার্থীদের সাহায্য করা (Help clients search for leverage) : এ পর্যায়ে কাউন্সিলরগণ সাহায্যার্থীর  সমস্যা চিহ্নিত করা, সমস্যা সম্পর্কে সচেতন করা এবং সমস্যা সমাধানের সুযোগ কাজে লাগানো হয়। এক্ষেত্রে সাহায্যার্থীকে সমস্যা থেকে মুক্ত করা হলো মূল উদ্দেশ্য। এ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ৩টি উপায় অবলম্বন করা হয়। এগুলো নিম্নরূপ

i. সাহায্যার্থীর  সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা, এজন্য সময়ের মূল্য নিরূপণ এবং সমস্যার নেতিবাচক দিকগুলো বের করা; ii. সাহায্যার্থী কথা বলার সময় যেসব সমস্যার কথা বলে তা চিহ্নিত কভরা যাতে সমস্যাটি প্রথমেই কাজ করা যায়; iii. সমস্যাবহুল বিষয়গুলোর ব্যাখ্যা প্রদান এবং সেগুলোর সুষ্ঠু সমাধান করা;

ধাপ-২ : অগ্রাধিকার দৃশ্যকল্প (The preferred scenario) : তৃতীয় ধাপ মডেলের দ্বিতীয় ধাপ হলো অগ্রাধিকার দৃশ্যকল্প। এই ধাপে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন কাউন্সিলর সাহায্যার্থীর  সমস্যা সমাধানে উপায় বা পথ উদ্ভাবন করে। মূলত কাউন্সিলর সাহায্যার্থীকে ভবিষ্যত সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সহায়তা করে। অগ্রাধিকার দৃশ্যককল্পের কাজগুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো।

ক. সাহায্যার্থীকে ভবিষ্যত সম্ভাবনার পরিসর উন্নয়নে সাহায্য করা (Help clients develop a range of future development) : : এক্ষেত্রে সাহায্যার্থী অগ্রহণযোগ্য কথা বললে তাকে তার চিন্তাশক্তির উন্নয়নে সাহায্য করা এতে করে তার কথা গ্রহণযোগ্য হবে। এজন্য সাহায্যার্থীকে কতিপয় প্রশ্ন করা যেতে পারে। যেমন- সমস্যার অধিকতর সমাধান দেওয়া যায় কিনা, অনুধাবন ক্ষমতা আনলে জীবনে কেমন পরিবর্তন আসবে বর্তমানের চেয়ে ভালো লাগবে কিনা প্রভৃতি। এর ফলে সাহায্যার্থী বাস্তবসম্মত আচরণ করতে সক্ষম হয়।

খ. সাহায্যার্থীর  সম্ভাবনাকে টেকসই কর্মসূচিতে পরিবর্তন করতে সাহায্য করা (Help client to translate possibilities into viable agendas) : সাহায্যার্থীর  ভবিষ্যত সম্ভাবনা উদ্ভাবনের পর তার চিন্তাশক্তি বা লক্ষ্য অর্জনের ক্ষমতা অর্জিত হয়। পরবর্তীতে যেন স্থায়ী উন্নয়ন ঘটে সেদিকে কাউন্সিলরদের চেষ্টা করতে হয়।

গ. সাহায্যার্থীকে বিভিন্ন প্রকার উদ্দীপনা চিহ্নিত করতে সাহায্য করা (Help clients identify the kinds of incentiveness) : সাহায্যার্থীর  উদ্দীপনা খুঁজে বের করা এবং তাকে কাজে লাগাতে কাউন্সিলরগণ সহায়তা করে থাকে। অর্থাৎ সমস্যা সমাধানের ইস্যু এবং উন্নয়নের অনেক উদ্দেশ্য থাকে। পাশাপাশি এক্ষেত্রে সাহায্যার্থীর  উৎসাহ থাকে। কাউন্সিলরগণ একে কাজে লাগিয়ে থাকে।

ধাপ-৩ : কৌশলসমূহ (Strategies) : তৃতীয় ধাপ মডেলের সর্বশেষ স্তর হলো কৌশল নির্ধারণ। সাহায্যার্থীর  জন্য প্রযোজ্য কৌশলগুলো কাউন্সিলর এক্ষেত্রে ব্যবহার করেন। এর উল্লেখযোগ্য কাজসমূহ নিম্নরূপ

ক. এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য সাহায্যার্থীর  চিন্তাশক্তির উন্নয়ন কৌশল (Helps client brainstorm varies strategies for implementing their agend) : সাহায্যার্থীর  সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গৃহীত হয়। এসব কার্যক্রম বাস্তবায়নের নিমিত্তে সাহায্যার্থীর  চিন্তাশক্তির বিকাশে কাউন্সিলররা সহায়তা করেন ।

খ. সাহায্যার্থীর  জন্য এমন কিছু কৌশল নির্বাচন করা যাতে পরিবেশ ও সম্পদের সাথে উপযোগী হয় (Help client choose a set of strategies that fits their environment & resources) : সাহায্যার্থীর  জন্য উপযোগী কৌশল সেটি যা ব্যক্তির জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ । এক্ষেত্রে চাহিদা, সম্পদ ও পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে হবে।

গ. সাহায্যার্থীকে ধাপে ধাপে পৌছার জন্য পরিকল্পনা প্রণয়নে সাহায্য করা (Help clients formulate a plan, a step by step procedure for reaching catch goal) : এ পর্যায়ে লক্ষ্য অর্জনে পরিকল্পনা তৈরি করতে হয় এবং একে উপযোগী করে ভাগ করা হয়। এজন্য একটি সময়সূচি তৈরি অত্যাবশ্যক। ফিলম মিক

কাউন্সিলিং প্রক্রিয়ার তৃতীয় ধাপ মডেলটি সাহায্যার্থীর  সমস্যা মোকাবিলায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ । মডেলটি সাহায্যার্থীর  বহুমুখী সমস্যা সমাধানে সাহায্য করে।

কাউন্সিলিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আরও বিভিন্ন ধরনের মডেল ব্যবহার করা হয়। কাউন্সিলিং এর মূল লক্ষ্য হল একজন মানুষকে তার সমস্যা মোকাবেলা করতে সাহায্য করা, যাতে করে সে সুস্থ সুন্দর জীবন যাপন করতে সক্ষম হয়।

Leave a Reply