You are currently viewing কাছের মানুষ – সুচিত্রা ভট্টাচার্য

কাছের মানুষ – সুচিত্রা ভট্টাচার্য

  • Post category:Book Review

বইয়ের নামঃ কাছের মানুষ

লেখকের নামঃ সুচিত্রা ভট্টাচার্য

                                                                        To buy this book, click.

 

পাগল রাতের ঝড়ের ভেতর

দৌড়ায় আলোর ফানুস..

আঁধার গুলো নিংড়ে মনে…

সংসার মানেই কাছের মানুষ..

“কাছের মানুষ”  গল্পের সবাই আমাদের খুব কাছের।যেন কত চেনা এই মানুষ-জন।কত কাছের অতি-পরিচিত প্রিয়জন।অর্থাৎ কাছের মানুষ। এই পরস্পরের নিকটজন হওয়া সত্ত্বেও কি তারা কাছের মানুষ? সতি’ই কি কেউ কারও কাছের মানুষ?

এমন বাস্তবমুখী জীবনের প্রশ্নের মুখোমুখি করে সুচিত্রা ভট্টাচার্যের এই উপন্যাস।

নারীদের-ই একজন হয়ে তাদের নিজস্ব জগতের কথা, যন্ত্রণা, সমস্যা’র উপলব্ধির কথা লিখেছেন তিনি।উনার লিখাতেই বার-বার ঘুরে আসে মানুষের সাথে মানুষের আত্মীক সম্পর্কের জটিলতা।

কাহিনি সংক্ষেপ

বাপ্পা ও তিতিরের মা ইন্দ্রাণী। পেশায় শিক্ষিকা এবং সংসারের নামে আলোচিত মঞ্চে একজন দক্ষ পরিচালিকা।স্বামী আদিত্য বেকার,মাদকাসক্ত  দুঃখভোগ একজন মানুষ। অসুস্থ শ্বশুর, এক অভিনেতা দেবর কন্দর্প,আরেক দেবর চাকরিজীবী সুদীপ,তার স্ত্রী রুনা,পুত্র অট্যাম।এই নিয়ে ঢাকুরিয়া রোডে তাদের বাড়ী। সুদীপ-আদিত্য এক বাড়িতে থেকেও আলাদা।

ইন্দ্রাণী ভালবেসে ছিল শুভাশিস’কে। কমিউনিজমের মশাল জ্বালিয়ে হারিয়ে যায় একদিন শুভাশিস। সংসারে নানান জটিলতার কারণে  বিয়ে করতে হয় আদিত্য’কে। ইচ্ছায় বা অনিইচ্ছায় আদিত্য’কে মেনে নিতে হল ইন্দ্রাণীর।এক সন্তানও এলো তাদের, ছেলে বাপ্পা।সব হিসাব চুকিয়ে আবার ফিরে এলো শুভাশিস। শুভাশিস তখন সংসারী।ভালবাসা’র টান থেকে সরে আসতে পারে’না মানুষ। তেমন পারে’নি ইন্দ্রাণী-শুভাশিস। তাদের ভুল আবেগের ভ্রুণে সৃষ্টি হয় তিতির। একদিন ধরা পরে তনুময়ের চোখে।হারিয়ে যায় তনুময়।হাজারো প্রশ্নের মুখে রেখে যায় ইন্দ্রাণী’কে।কিসের টানে ছুটে আসতো শুভাশিস?কি মোহময় ছিল ইন্দ্রাণীর কাছে।অথচ আদিত্য এত কাছে থেকেও অনেক দুরে।মনের টান’ই কি আসল? সব জটিল প্রশ্নের সমাধান লুকিয়ে থাকে ইন্দ্রাণী’কে ঘিরে।ইন্দ্রাণীর মৃত্যু’টা ছিল এক অসহায় মায়ের, মেয়ের কাছে পরাজয়। আমরা ভালবাসার কাছে সবাই খুব অসহায়।যেমন ছিলেন শুভ ইন্দ্রাণীর কাছে কিংবা ইন্দ্রাণী শুভর কাছে।

 একটি দোলায়িত চরিত্র তিতির। বাপ্পার সাথে খুনসুটি, ছোটকা’র পিছনে লাগা,অ্যাটমের সাথে তিরিংবিরিং,দুর্লভের কাছ থেকে দশ আনা পয়সা দিয়ে স্বপ্ন কেনা। সবার সেই স্বপ্ন কেনা তিতিরের জীবন জটিলতায় ভরে যায় একদিন। বাবা আদিত্যে’র যেন শেষ আশ্রয় তিতিরের কিংবা তিতিরের শেষ আশ্রয় বাবা।ডাক্তার আঙ্গেলের লুকায়িত আক্ষেপ একবার বাবা বলে ডাকা।তিতির সত্যি’টা জেনেও এমন কঠিন আচরণ করা।সুকান্ত প্রেমীক নয় তবু তাকে নিছক সঙ্গী ভেবে পালিয়ে যাওয়া।এসব কি নেহাতে’ই অভিমান ছিল মায়ের প্রতি মেয়ের……

 একজন ম্যাচিউরড চরিত্র শিবসুন্দর।পেশায় তিনি ছিলেন ডাক্তার। মাধবপুরের সেবায় নিরলস পরিশ্রম করে গেছেন তিনি।মানসিক ভারসাম্যহীন স্ত্রী মনোরমা। যাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য’ই ছিল তার  অক্লান্ত পরিশ্রম।হোক সেটা উপন্যাসের, তবুও মানুষ ভালবাসাই বেঁচে থাকে।তুফানপুরের ক্লিনিক থেকে তুলে আনা তুফান’কে নিজের সন্তানের মত মানুষ করে সমাজ’কে বুঝিয়ে দিয়েছে সংসার মানেই কাছের মানুষ ।মৃত্যুর আগে ছেলের প্রতি এক বিশাল অভিমান ছিল সেই অভিমান কি ছেলে শুভাশিস আদৌ বুঝতে পেরেছিল?

অথচ তুফান শুভাশিস এরা কত কাছের মানুষ।

পাঠ প্রতিক্রিয়া

উপন্যাসের নাম’টি বড় ব্যঞ্জনাময়। একদিকে আছে দুই প্রজন্মের দুই নারী মা ও মেয়ে।অন্যদিকে এই দুই নারীকে কেন্দ্র করে আবর্তিত  হয় একদল রঙ্গিন মানুষ। সম্পর্কে এরা সবাই কাছের মানুষ। অথচ প্রত্যেকেই একাকী, নিঃসঙ্গ।বর্তমান জীবনের প্রেক্ষাপটে লেখা এই উপন্যাস সেই মানুষদের নিয়ে,যারা সংসারের এত কাছাকাছি থেকেও নির্জনতা ঘোচে না।বৃহৎ এই উপন্যাসে ফুটিয়ে তুলেছে, মা-মেয়ের গল্প,সফল মানুষের গোপন ব্যর্থতার  কাহিনি, বিফল মানুষের সফল না হওয়ার আকুতি,বর্তমান সমাজের অসহায়তা আর পাপবোধের কথা,ব্যর্থ বিপ্লবের যন্ত্রণা,দুই প্রজন্মের দ্বন্দ্ব।সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে চলছে একটা পুরনো বাড়ি ভেঙ্গে নতুন বাড়ি গড়ে উঠার অবস্থান।এমন বাস্তবতার মাঝে’ই লেখক খুঁজেছেন মানুষের নিঃসঙ্গতার উৎস।

চরিত্র বিশ্লেষণ

এই উপন্যাসে জুরে অজস্র চরিত্রের মিছিল। কেউ বৃদ্ধ,কেউ বা মধ্যবয়সী, কেউ কিশোর-কিশোরি, আবার কেউ নেহাতে’ই শিশু।ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে’র মানুষ হওয়া সত্ত্বেও এরা কোথায় যেন ভিন্ন,এদের সকলে’র মধ্যে’ই ছাড়িয়ে গেছে এক দুঃখী বিষন্নতা।

চুম্বক লাইন

হাজারটা খরগোশ জোড়া দিয়ে যেমন একটা ঘোড়া বানানো যায় না, তেমন হাজারটা যুক্তি দিয়েও আপনজনের দুঃখের ভার লাঘব করা যায়না

মরা মানুষকে ভালবাসা যায় না।তার ছবির দিকে তাকিয়ে কাঁদা যায়, তার মৃত্যুর দিনে কয়েকটা ফিকে হয়ে আসা স্মৃতি নিয়ে আকুল হওয়া যায়।সে তো ছেলেবেলার কথা ভাবলেও হয়,পুরনো অ্যালবাম উলটোলেও হয়।ভালবাসার জন্য একটা অন্য কিছু লাগে।এমন কিছু যাকে ধরাছোঁয়ার মধ্যে পাওয়া যায়,যার ওপর রাগ অভিমান ফলানো যায়।

 

                                                         To buy this book, click.

লিখেছেন,

তন্নী আক্তার

This Post Has 2 Comments

  1. ইয়াসমিন

    ❤️

  2. Nahida Sultana Ila

    লিখা টা পড়ে বইটা পড়ার আগ্রহ বেড়ে গেলো।

Leave a Reply