You are currently viewing কোকা কোলা

কোকা কোলা

“কোকা কোলা” বিশ্বের জনপ্রিয় এই শব্দটির সাথে পরিচিত নয় এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুস্কর। আজ তবে জেনে নেয়া যাক কোকাকোলার আদ্যোপান্ত!

১৮৮৬ সালে জন স্টিথ পেম্বারটন নামে এক রসায়নবিদ প্রথম কোকা কোলার ফর্মুলা আবিষ্কার করেন। পেম্বারটন পেশায় ছিলেন একজন ঔষধ প্রস্তুতকারক পাশাপাশি একজন রসায়নবিদ। ১৮৬৫ সালে কলম্বাসের যুদ্ধে বুকে আঘাত পাওয়ার পর ক্ষতর ব্যাথা থেকে মুক্তি পেতে মরফিনে আসক্ত হয়ে পড়েন পেম্বারটন। ১৮৬৬ সালে মরফিনের আসক্তি থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেন। মরফিনের মতই কার্যকরী এবং আফিমমুক্ত ব্যাথানাশক ঔষধ প্রস্তুতের উদ্দ্যেশ্যেই মূলত গবেষণা শুরু করেন তিনি। পরবর্তীতে ১৮৮৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের কলম্বাসে অবস্থিত ইগল ড্রাগ এন্ড ক্যামিক্যাল কোম্পানিতে প্রথমবারের মত কোকা কোলা তৈরী করেন জন পেম্বারটন।

আটলান্টা ও ফুলটন কাউন্টি অ্যালকোহলিক পানীয়ের বিরুদ্ধে আইন পাস করলে পেম্বারটন অ্যালকোহলমুক্ত পানীয় কোকা-কোলা তৈরি শুরু করেন। এটি ছিলো মূলত ফ্রেঞ্চ ওয়াইন কোলার একটি অ্যালকোহলমুক্ত সংস্করণ এবং এর প্রথম নাম ছিলো “কোকা ওয়াইন”। পরবর্তীকালে পেম্বারটনের হিসাবরক্ষক ও কোকাকোলার প্রথম মার্কেটিং ম্যানেজার ফ্র‍্যাঙ্ক মাসোন রবিনসন এর নাম রাখেন “কোকাকোলা”।

শুরুর দিকে কেবল ঔষধের দোকানেই পেটেন্টযুক্ত ঔষধ হিসেবে পানীয়টি পাওয়া যেত। ১৮৮৬ সালেরই ৮মে প্রথম ৫ সেন্ট দামে এক গ্লাস কোকা কোলা বিক্রি হয়। ২৯ মে আটলান্টা জার্নাল পত্রিকায় পেম্বারটন কোকা-কোলার প্রথম বিজ্ঞাপনটি দেন। পেম্বারটন দাবি করেছিলেন এই পানীয়টি মরফিন আসক্তি,বদহজম,স্নায়বিক দূর্বলতা,মাথাব্যথাসহ বিভিন্ন রোগের প্রতিকারক। “স্বাস্থ্যের জন্য ভালো”-এমন বিশ্বাস সৃষ্টি হওয়ার কারণে পানীয়টির জনপ্রিয়তা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। অবিষ্কারের প্রথম বছর কোকাকোলার মোট বিক্রি ছিলো মাত্র ৯ গ্লাস,বর্তমানে পুরো বিশ্বে বছরে প্রায় ১৬০ কোটি গ্লাস কোকাকোলা বিক্রি হয়। উল্লেখ্য যে,কোকাকোলার প্রথম বিক্রিতে পেম্বারটনের আয় হয়েছিলো মাত্র ৫০ ডলার যেখানে এর উৎপাদন খরচই ছিলো ৭০ ডলার!

১৮৮৭ সালে আসা গ্রিগস ক্যান্ডেলার নামে এক ব্যবসায়ী ২৩০০ ডলারের বিনিময়ে পেম্বারটন থেকে কোকাকোলার ফর্মুলা এবং স্বত্বাধিকার কিনে নেন। ব্যবসায় কোকা-কোলাকে পরিবেশন ও বিপণন করেন ক্যান্ডেলার। তার বাজারজাতকরণ ও ব্যবসায়িক কৌশলেই বিশ শতক থেকে কোকা-কোলা বিশ্বের কোমল পানীয়র বাজারে একটি প্রভাবশালী ও শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দী হিসেবে স্থান করে নেয়। দূর্ভাগ্যবশত ১৮৮৮ সালের ১৬ আগস্ট জন স্টিথ পেম্বারটনের জীবনাবসান ঘটায় কোকা কোলার প্রভাব ও বিস্তার তিনি দেখে যেতে পারেননি।

কোমল পানীয়ের ইতিহাসে সকল প্রকার “কোলা” পণ্যের স্রষ্টা এই কোকা কোলা যুগ যুগ ধরে বাজারে কেবল নতুন পণ্যই আনে নি, নতুন এক ক্যাটেগরির জন্ম দিয়েছে। পেপসি,আর্ন ব্রু,আরসি কোলা,কোলা টার্কা,জম জম,মক্কা কোলা,ভার্জিন কোলা,পার্সি কোলা,কিবলা কোলা,ইভোকা কোলা,কর্সিকা কোলা,ব্রেইজ কোলা,আফরি কোলা,মোজো ইত্যাদি কোকাকোলার সংশ্লিষ্ট পণ্য। কোকা-কোলার এই লিডারশীপ, আদি এবং অকৃত্রিম সত্ত্বার বিস্তার প্রচারিত এবং প্রতিফলিত হয়েছে কোকা-কোলার বিজ্ঞাপনে। ১৯৪২ সালেই কোকা-কোলার স্লোগান ছিল, ‘The only thing like Coca-Cola is Coca-Cola itself. It’s the real thing.’

তবে কোকা কোলার উপকারিতার পাশাপাশি বেশিকিছু ক্ষতিকর দিকও রয়েছে। স্থুলতা বৃদ্ধি,কিডনির কার্যক্ষমতা হ্রাস,মেজাজ খিটখিটে হওয়া,দাঁতক্ষয়সহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যহানির কারণ হতে পারে এই পানীয়টি।

Leave a Reply