You are currently viewing গল্পে গল্পে ১৯৫২
গল্পে গল্পে ১৯৫২

গল্পে গল্পে ১৯৫২

ভারতীয় উপমহাদেশে সর্বপ্রথম ১৮৩৫ সালে ইংরেজি ভাষার প্রচলন ঘটে। ১৯৪৭ সালে যখন ভারত-পাকিস্তান বিভক্ত হয়ে গেলো তখন পাকিস্তানের ভাষা কি হবে এই নিয়ে বিভিন্ন জল্পনা কল্পনার শুরু।

কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাশেম তিনি যখন বুঝতে পারলেন পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা উর্দু হবে তখন তিনি একটি সাংস্কৃতিক জোট গঠনের চিন্তা করেন। ১৯৪৭ সালের ২-রা সেপ্টেম্বর একটি সাংস্কৃতিক জোট গঠন করা হয় যার নাম দেন ‘তমুদ্দীন মজলিস’।

এই মজলিসের মূল লক্ষ্য ছিলো বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া। ১৫-ই মার্চ ১৯৪৭ সালে অধ্যাপক আবুল কাশেমের নেতৃত্বে আরো ২ জন লেখক আবুল মনসূর ও কাজী মোতাহার হোসেন মিলে “পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা বাংলা না উর্দু” নামের একটি বই রচনা করেন।

১৯৪৮ সালের জানুয়ারি মাসে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। ১৯৪৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম গণ পরিষদ গঠন করা হয়। এই গণ পরিষদে ইংরেজির পাশাপাশি উর্দুকেও সকল কাজে ব্যবহার করা হতো। পরবর্তীতে উর্দুকেই একমাত্র ভাষা হিসেবে ঘোষণা করতে চাইলে ‘কুমিল্লার ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত সর্বপ্রথম এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন।

কিন্তু পাকিস্তানের গণ পরিষদ তার এই বিরোধীতা মেনে নেয়না। পরবর্তীতে এর প্রেক্ষিতে শিক্ষক ও ছাত্র সমাজের মধ্যে একটি বিরূপ প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। যার ফলশ্রুতিতে ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্র ভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়। ১৯৪৮ সালের ২-রা মার্চ কামরুদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে ‘সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠিত হয়।

১৯৪৮-১৯৫২ সাল পর্যন্ত ১১-ই মার্চ কে ভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হতো। ১৯৪৮ সালের ২১-শে মার্চ যখন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ঘোষণা করলেন যে উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। তখন বাংলাদেশের শিক্ষিত মহলের লোকেরা এটাকে মেনে নেয়নি। এর ৩ দিন পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি সমাবর্তনের আয়োজন করা হয়েছিলো। সেখানে মোহাম্মদ জিন্নাহকে অতিথি করা হয় এবং সেখানে এসেও তিনি আবারো ঘোষণা করেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। তখন এর প্রতিক্রিয়া স্বরূপ ১৯৪৯ সালে আরো একটি সংগঠন তৈরী করা হয়। যার নাম ‘পূর্ব বাংলা ভাষা কমিটি’। এই কমিটির প্রধান ছিলেন মাওলানা আকরাম খান।

১৯৫০ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানও পূণরায় ঘোষণা দেন পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু। তখনও বাংলার শিক্ষিত সমাজ তা মেনে নেয়নি। এরপর ১৯৫২ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন আবারও ঘোষণা করলেন উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা।

পরবর্তিতে তৎকালীন আওয়ামীলীগের সভাপতি মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানির নেতৃত্বে আরেকটি সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা জোট গঠন করা হয়।তখন এই সংগঠনের সদস্যগণ ১৯৫২ সালের ২১-শে ফেব্রুয়ারি (বাংলা ৮-ই ফাল্গুন, ১৩৫৮ বঙ্গাব্দ, রোজ-বৃহস্পতিবার) একটি হরতালের ডাক দেন।

পূর্ব বাংলার মূখ্যমন্ত্রী ছিলেন নূরুল আমীন। নূরুল আমীনের নেতৃত্বে ১৪৪ ধারা চালু করা হয়। ১৪৪ ধারাকে ভঙ্গ করে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্য সহ ছাত্র,শিক্ষক সর্বস্তরের জনগন ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে জমায়েত হন। তখন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সেখানে একটি হত্যাযজ্ঞ চালনো হয়। এবং সেখানে শহীদ হন সালাম,রফিক,বরকত,জব্বার। এবং এই হত্যাযজ্ঞে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন একটি শিশু। শিশুটির নাম ওহী উল্লাহ। তার বয়স ছিলো ৯ বছর।

১৯৫২ সালেরই ২২-শে ফেব্রুয়ারি সকল জনগন আবারো আন্দোলনে নামলে পাকিস্তানি সেনারা আবারো হত্যাযজ্ঞ চালায়। এই দিনের হত্যাযজ্ঞে শফিউর রহমান শহীদ হন। ১৯৫৪ সালের ৯-ই মে পাকিস্তানের গণ পরিষদ রাষ্ট্রভাষা বাংলার একটি বিল পাস করে। যার ফলশ্রুতিতে ১৯৫৬ সালে তারা সর্বসম্মতিক্রমে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দুর পাশাপাশি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেন।

@সিয়েরা লিওন নামক দেশ তাদের ২য় রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন।

@UNESCO ১৭-ই নভেম্বর ১৯৯৯ সালে ২১-শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

  • লেখকঃ নাহিদা সুলতানা ইলা, শেরপুর সরকারি কলেজ 

Leave a Reply