You are currently viewing গোধূলি বেলায় – ঝর্ণা চৌধুরী

গোধূলি বেলায় – ঝর্ণা চৌধুরী

  • Post category:Book Review

বইয়ের নাম:-গোধূলি বেলায়

লেখক:-ঝর্ণা চৌধুরী

To buy this book, click.

এই গল্পের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি চরিত্র হলো:- রজনী ও আশা (দুইজন খুব ভালো বন্ধু), মিতা আপা (রজনীর দূরসম্পর্কের চাচাতো বোন), রজনীর বাবা(যার বলে যাওয়া দুটি বাক্য রজনীর জীবন যুদ্ধে টিকে থেকে বিজয়ী হওয়ার মূলমন্ত্র), জাফর চাচা ও রজনীর মামা(যাদের সহযোগীতায় রজনী তার প্রতি হওয়া অপরাধের সঠিক বিচার পায়), কামাল (যাদের মত মানুষ সমাজের নরপশু, কামাল এই গল্পে সে…যে রজনীর মুখে এসিড নিক্ষেপ করে ঝলসে দিয়েছিল), আশার বাবা (যিনি রজনীকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন তার স্বাভাবিক জীবন)।

রজনী এই গল্পের একটি প্রধান চরিত্র। রজনীদের ছিলো ছোট্ট সুন্দর সুখী পরিবার। রজনী,তার বোন সজনী,আর তাদের বাবা -মা।রজনীর বাবা কলেজের এবং মা স্কুলের শিক্ষক ছিলেন।রজনীদের সাথে আরো একজন থাকতো রজনীর দূরসম্পর্কের এক চাচাতো বোন মিতা।

রজনীর মিতা আপা ছিলো উচ্চমাধ্যমিক পাস। মিতাকে বিয়ে দেয় অষ্টম শ্রেণী পাস গ্রামের এক মুদির দোকানদারের সাথে। স্বল্প শিক্ষিত মিতার সেই দোকানদার স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন যৌতুকের জন্য নির্যাতন  করে তাড়িয়ে দেয়। অনেকদিন পর তারা আবার মিতাকে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু মিতা সেদিন আর যেতে চায় না। মিতা তার  উপর করা নির্যাতনের চিহ্ন সে রজনীকে দেখায়। তারপর এসব দেখে রজনী ও তার বাবা মিতার শ্বশুর বাড়ির লোকদের ফিরিয়ে দেয়।

রজনীর বাবা একজন আদর্শবান মানুষ ছিলেন। তিনি সবসময় রজনী ও সজনীকে দুটি বাক্য বলে জীবনে এগিয়ে যেতে উৎসাহ দিতেন। বাক্য দুটো হলো-

‘দুঃখকে গ্রহণ করতে শিখো,

তাহলে সুখ তোমাকে আলিঙ্গন করতে আসবেই’

রজনীর মিতা আপা আর তার বাবার কথা বলতে বলতে তার প্রিয় বন্ধুটির কথা বলতে ভুলেই গেছি। রজনীর সেই বন্ধুটি ছিলো আশা। আশা রজনীর সুখে দুঃখে সব সময় পাশে থাকতো। আশা ধনীর দুলালী ছিলো, কিন্তু তার আচরনের মাধুর্যে তা বোঝার কোনো উপায় ছিলোনা। সে খুব সাধারণ ভাবে থাকতো। আশা ও রজনীর বন্ধুত্বের গভীরতা তাদের কথোপকথন দেখলেই বোঝা যায়। আশার রজনীকে লেখা চিঠির কিছু অংশ তুলে ধরা হলো:-

‘তুই যেখানেই থাকিসনা কেন,তুই হচ্ছিস আমার সেই বন্ধু যার সান্নিধ্য আমার জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে উপভোগ্য করে তুলেছে। তোর মতো এমন প্রাণবন্ত, রুচিশীল ও মানবিক গুণসম্পন্ন বন্ধু পেয়ে আমার আত্মার উৎকর্ষ  সাধিত হয়েছে’।

রজনীর সুখী জীবনে একদিন গোধূলি বেলায় অন্ধকার নেমে আসে। রজনী ও আশা ঘোরাঘুরি করে যার যার বাসায় ফিরছিল। হঠাৎ পেছন থেকে কেউ রজনীকে ডাক দেয়। রজনী পেছনে তাকাতেই পানির মতো কিছু তার দিকে ছুড়ে দেয় যার যন্ত্রণায় রজনী মাটিতে পড়ে যায় এবং জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। যখন জ্ঞান ফেরে তখন সে হাসপাতালে। সে বুঝতে পারে তার শরীরটা অসুস্থ, তার মুখটা ঝলসে গেছে নরপশু কামালের নিক্ষেপ করা এসিডের কারণে। কামাল হলো রজনীদের এলাকায় সবচেয়ে ধনীব্যক্তির বখে যাওয়া একমাত্র ছেলে। কামাল রজনীকে প্রেমের প্রস্তাব দেয় রজনী তা প্রত্যাখ্যান করায় সে এই জঘন্য কাজটি করে।

কামালের বিরুদ্ধে মামলা করে রজনীর বাবা। তখন কামালের বাবার লোকেরা এসে রজনীদেরকে হুমকি দেয় যে, মামলা উঠিয়ে না নিলে রজনীর অবস্থা সজনীরও হবে। তারপরও রজনীর বাবা পিছিয়ে আসেন না। তখন ঐ এলাকার মাতব্বর জাফর চাচাও রজনীদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেয়।

এতসব চিন্তায় একদিন রজনীর বাবা হার্ট অ্যাটাকে ইহকোল ত্যাগ করেন। রজনীর পরিবারের সাথে দুঃখ যেন ছায়ার মতো লেগে আছে। পরবর্তীতে কামালের বিরুদ্ধে মামলা জাফর চাচা আর রজনীর মামা এগিয়ে নিয়ে যায়। অবশেষে কামালের ফাঁসির হুকুম হয় এবং ফাঁসি হয়ে যায়।

এই সবকিছর মাঝে রজনী তার পরিবারে কোনো সহায়তা করতে পারেনা। কারণ তার ঝলসে যাওয়া  চেহারার জন্য কেউ তাকে চাকরি দেয়না। এমনকি কোনো টিউশন ও করাতে পারেনা।

এই সময় তপ্ত মরুর বুকে এক পশলা বৃষ্টির মতো খবর নিয়ে আসে আশা। সে এসে বলে তার বাপী রজনীকে আমেরিকা চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাবে। কিন্তু রজনীরা এটাতে রাজী হয়না। পরে আশা ও তার বাবা অনেক বলার পর যেতে রাজি হয়। তারপর তারা চলে যায় আমেরিকায়। দীর্ঘ ১১ মাসে তিনবার অপারেশন করলে অপারেশন সফল হয়। তারপর রজনীরা দেশে ফিরে আসে।

এরপর গোধূলি লগ্ন পেরিয়ে এক অন্ধকার সন্ধ্যায় আশা ফোন দিয়ে বলে আশাদের ঢাকার গার্মেন্টসে সুপারভাইজারের একটি পদ খালি আছে সেই পদে রজনীকে নিয়োগ দিয়েছে আশার বাবা। খবরটি শুনে রজনী কান্না করে দিলো সে আশাকে বললো, ‘আমার জন্য আর কত করবি’।

পরিশেষে রজনীর জীবন আবার স্বাভাবিক হয় এবং তার বাবার আদর্শ নিয়ে স্বাবলম্বী হয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করে বাচার মতো বাচবে বলে প্রতিজ্ঞা করে।

বইটি সম্পর্কে আমার মন্তব্য হবে এক কথায় অসাধারণ।  বইটির খুব ভালো দিক হলো মেয়েদেরকে শত কষ্টের মাঝেও বেচে থাকার জন্য লড়াই করতে উৎসাহিত করবে। বইটি অন্যরা পড়লে জীবনে হারতে হারতেও বেচে থাকার শক্তি সঞ্চিত করতে পারবে।

To buy this book, click.


লিখেছেন,

নাহিদা সুলতানা ইলা

Leave a Reply