You are currently viewing গ্যালাক্সি কি?

গ্যালাক্সি কি?

গ্যালাক্সি

মহাকাশের একটি উপকরণ বিশেষ। দূরবীক্ষণ যন্ত্রের ভিতর দিয়ে তাকালে, মহাকাশের কোথাও কোথাও বস্তুপুঞ্জের সমন্বয়ে বড় বড় দল গঠিত হয়েছে বলে মনে হয়। মহাকাশের এই জাতীয় বিশেষ বৃহৎ উপকরণ সমষ্টিকে গ্যালাক্সি বলা হয়। গ্যালাক্সিগুলো আয়তনে কয়েক হাজার থেকে লক্ষ আলোকবর্ষ হতে পারে। এই বিশাল পরিসরে থাকে কোটি কোটি তারা এবং বিপুল ভরের ভাসমান বস্তুপুঞ্জ। আমাদের সৌরজগৎও এমনি একটি গ্যালাক্সির সদস্য। অন্ধকার রাতের আকাশে এই গ্যালাক্সিকে মনে হয়, একটি সাদারঙের পথ আকাশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চলে গেছে। ১৬১০ সালের দিকে গ্যালিলিও টেলিস্কোপের সাহায্যে রাতের আকাশের এই পথকে প্রথম পর্যবেক্ষণ করেছিলেন এবং তিনিই প্রথম জানিয়েছিলেন যে, সাদারঙের এই পথটি তৈরি হয়েছে অসংখ্য উজ্জ্বল ও নিষ্প্রভ নক্ষত্র দিয়ে। তারপর থেকে অসংখ্যবার এবং অসংখ্য পদ্ধতিতে আকাশ পর্যবেক্ষণ করে, বিজ্ঞানীরা অসংখ্য অজানা বিষয় সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

প্রায় ১৩৭৫ কোটি বৎসর আগে সৃষ্ট বিগব্যাং -এর সূত্রে গ্যালাক্সিগুলো তৈরি হয়েছিল। এই বিগব্যাং -এর ৩ মিনিট থেকে ১০০,০০০ বৎসরের মধ্যে তৈরি হয়েছিল— দুটি অন্যতম মৌলিক পরমাণু। এই পরমাণু দুটি হলো হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম। এছাড়া ছিল বিপুল পরিমাণ ইলেক্ট্রন, প্রোটন, নিউট্রন এবং ইলেক্ট্রন প্লাজমা। সব মিলিয়ে যে বিপুল বস্তুকণার সমাবেশ ঘটেছিল, সেগুলো প্রচণ্ড গতিতে বিগব্যাং -এর কেন্দ্র থেকে দূরে সরে যাচ্ছিল। বলাই বাহুল্য, এই সময় এই সকল কণিকাও ছিল অত্যন্ত উত্তপ্ত। ক্রমে ক্রমে এগুলো শীতল হতে থাকলো এবং এদের ভিতরের আন্তঃআকর্ষণের কারণে- বস্তুপুঞ্জ কাছাকাছি চলে এসেছিল। স্থান বিশেষে দলবদ্ধ বস্তুপুঞ্জের ঘনত্বের বৃদ্ধির ফলে কোন কোন অংশে সৃষ্টি হয়েছিল অতিরিক্ত মহাকর্ষীয় আকর্ষণ। এই আকর্ষণের ফলে একটি ঘূর্ণনগতির সৃষ্টি হয়েছিল। অঞ্চল বিশেষে বস্তুপুঞ্জের আকর্ষণ ক্ষমতার তারতম্যে নিজস্ব এলাকার ব্যাপ্তি কম-বেশি ছিল। যে সকল অঞ্চলে অল্প জায়গার মধ্যে বিপুল বস্তুর সমাবেশ ঘটেছিল, সে সকল অঞ্চল বেশি দ্রুত গতিতে ঘুরতো। এই ঘূর্ণন গতির কারণে মহাকাশের মেঘগুলো একটি ঘূর্ণায়মান চাকতিতে পরিণত হয়েছিল। অন্য দিকে যে সকল অঞ্চলে পর্যাপ্ত ঘূর্ণনগতি লাভ করতে পারে নি, সে সব অঞ্চলে বস্তুপুঞ্জ ডিম্বাকৃতির পিণ্ডে পরিণত হয়েছিল। এই জাতীয় বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বস্তুপুঞ্জসমূহ বিভিন্ন আকৃতির একক দল গঠনে সক্ষম হয়েছিল এবং এই প্রক্রিয়ার ফসলই হলো মহাকাশের গ্যালাক্সি। আমাদের সৌরজগৎ এমনি একটি গ্যালাক্সি হলো- ছায়াপথ (Milky way)। ধারণা করা হয় প্রায় ১ হাজার কোটি বৎসরের দিকে আদি গ্যালাক্সিগুলো সৃষ্টি হয়েছিল। আমাদের ছায়াপথ সৃষ্টি হয়েছিল ১৩৬০ কোটি বৎসরের দিকে।

গ্যালাক্সির গঠন : প্রতিটি গ্যালাক্সির সাধারণ উপকরণ হলো- অসংখ্য নক্ষত্র এবং এই সকল গ্যালাক্সি-অধীনস্থ বস্তুপুঞ্জ (interstellar matter)। অনিয়ন্ত্রিত গ্যালাক্সি ছাড়া, সকল ধরনের গ্যালক্সির অন্তর্গত সকল উপকরণ একটি কেন্দ্রীয় বলের অধীনে থাকে এবং এগুলো উক্ত কেন্দ্রীয় বলকে অবলম্বন করে আবর্তিত হয়। ক্ষেত্রবিশেষ এই কেন্দ্রটি উজ্জ্বল কিম্বা নিস্প্রভ হতে পারে। গ্যালাক্সি ভেদে গ্যালাক্সি-অধীনস্থ বস্তুপুঞ্জ পরিমাণ কমবেশি হতে পারে। এছাড়া একটি গ্যালাক্সির অধীনে একাধিক গ্যালক্সিও থাকেতে পারে। এই বিচারে গ্যালক্সির অধীনস্থ উপকরণগুলোকে যে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়, তা হলো—

১. অধীনস্থ গ্যালাক্সি : গ্যালাক্সিগুলো তৈরি হওয়ার সময়, কিছু গ্যালাক্সি একটি সুনির্দিষ্ট এলাকায় এককভাবে বিন্যস্ত হয়েছিল। এই সকল গ্যালাক্সির কাছাকাছি অন্য কোন গ্যালাক্সি না থাকায়, এরা একাকী নিজেদের রাজত্ব রক্ষা করতে সমর্থ হয়েছিল। কিন্তু এই জাতীয় গ্যালাক্সি সত্যিকার অর্থে স্বাধীন কিনা তা মহাকাশের সার্বিক চিত্র মানুষের কাছে যতদিন প্রকাশ না পায়, ততদিন সুনিশ্চিতভাবে বলা মুসকিল। কারণ, এর আগে কোন কোন গ্যালাক্সিকে স্বাধীন মনে করা হলেও, পরে দেখা গেছে এরা অন্য কোন গ্যালাক্সির উপ-গ্যালাক্সি মাত্র।

অন্যদিকে মহাকাশের অল্প দূরত্বের মধ্যে যখন একাধিক গ্যালাক্সি তৈরি হয়েছিল, তখন তারা পরস্পরের সাথে মহাকর্ষীয় আকর্ষণে বাধা পড়ে গিয়েছিল। এক্ষেত্রে একটি গ্যালাক্সির ভিতরে অপরটি ঢুকে না পরে- একটি অপরটির অধীনস্ত হয়ে পড়েছিল। স্বাভাবিকভাবে যে গ্যালাক্সিটির ভর এবং মহাকর্ষীয় শক্তি অধিকতর প্রবল ছিল, তাকে কেন্দ্র করে অল্প ভরবিশিষ্ট ও অল্প মহাকর্ষীয় শক্তির গ্যালাক্সি আবর্তিত হতে শুরু করেছিল। এক্ষেত্রে আমরা সূর্য এবং এর গ্রহগুলোর ভিতরে যে আবর্তনের সম্পর্ক লক্ষ্য করি, গ্যালাক্সি কেন্দ্রিক গ্যালক্সির আবর্তনের সম্পর্কও সে রকমই লক্ষ্য করবো।

এইভাবে বিভিন্ন সংখ্যক গ্যালাক্সি মহাকাশে মহাকর্ষীয় শক্তির দ্বারা ছোট-বড় দল গঠন করতে পারে। এই দলগঠনের সবচেয়ে ছোট দলকে বলা হয় স্থানীয় দল (Local Group)। সাধারণত ৩০-৫০টি গ্যালাক্সি।

উৎস: বিকাশপিডিয়া টীম

Leave a Reply