You are currently viewing চর্যাপদ

চর্যাপদ

চর্যাপদ

 

আমরা বর্তমান আর সমসাময়িক বিষয় নিয়েই বেশি ঘাটাঘাটি আর চর্চা করি ৷ কিন্তু আমাদের এই বর্তমান আর সমসাময়িক বিষয়ের পিছনেও যে একটা অনেক বড় সময় অনেক যুগ অনেক উত্থান পতনের গল্প জড়িয়ে সেগুলো সম্পর্কে আমাদের ধারণা নেই বললেই চলে ৷

তো বন্ধুরা আমরা এখন একটু সেই প্রাচীন যুগে কিছু জানা অজানা মজার মজার  কিছু তথ্য  যেনে আসি

শুরুতেই থাকছে আমাদের বাংলা ভাষার অন্যতম সাহিত্য নিদর্শন চর্যাপদ…

 

চর্যাপদ বাংলা ভাষার প্রাচীনতম পদ সংকলন তথা সাহিত্য নির্দশন ৷ নব্য ভারতীয় আর্য ভাষারও প্রাচীন রচনা এটি ৷ খ্রিষ্টীয় অস্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে রচিত এই গিতীপদাবলীর রচয়িতারা ছিলেন সহজিয়া বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্য ৷ বৌদ্ধ ধর্মের গূঢ় অর্থ সাংকেতিক রূপের আশ্রয় ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যেই তারা পদগুলো করেছিলেন  ৷

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে চর্যাপদ আবিষ্কার এক নতুন দিগন্তের সূচনা করে ৷ মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয় ১৯০৭ সালে নেপালের রাজ গ্রন্থ থেকে এ অমূল্য সম্পদটি আবিষ্কার করেন ৷ চর্যার পূর্বে বাংলা ভাষার আর কোনো নিদর্শন এখনো পাওয়া যায়নি ৷ তাই এর ঐতিহাসিক ও সাহিত্যিক মূল্য অপরিসীম ৷  চর্যাগীতিতে  ধর্মকে আশ্রয় করে বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যগণ পদগুলো রচনা করেন ৷ তাদের সাধনপ্রণালী ও জীবনের গূঢ় তও্ব কথাকে আলো আধারির ভাষায় সংগীতায়িত ৷

চর্যাগীতির ৫০ টি চর্যায় ২৪ জন আচার্যের নাম আছে, যাদের আবির্ভাব কাল ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের, ও  ড. প্রবোধচন্দ্র বাগচীর মতে দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দী ৷  ড. মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ ভুসুক ও কাহ্নপাকে অষ্টম  শতাব্দীর অন্তর্ভুক্ত করে চর্যার আনুমানিক রচনাকাল অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দী ধরেছেন৷ চর্যাপদের  যে পুথিটি হরপ্রসাদ শাস্ত্রী খুজে পান তা মূল পুঁথি নয়৷ টিকাকার মুনিদও কতৃক প্রণীত তালপাতার ওপর লেখা ৬৯ টি পাতার দুপাশেই পাঁচটি করে লাইন রয়েছে,  তবে শাস্ত্রি খুজে পাওয়ার আগেই এর পাঁচটি পাতা হারিয়ে গেছে ৷ 

১৯১৬ সালে বঙ্গিয় সাহিত্য পরিষৎ থেকে  প্রকাশিত “হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা বৌদ্ধগান ও দোহা” শিরোনামে যে লেখাগুলো প্রকাশিত হয়েছিল; সেখানে সম্পাদকীয় ও ভূমিকাসহ এসব লেখা প্রকাশ করেন হরপ্রসাদশাস্ত্রী  তার নিজ উদ্যোগেই ৷ চর্যাপদের প্রতিটি চর্যা এক একটি গান৷  এ গানগুলো পদরচয়িতারা সুর করে লোক সম্মুখে গেয়ে শোনাতেন ৷ প্রতিটি চর্যাতেই সেই চর্যা কোন রাগে গাওয়া হতো তার উল্লেখ আছে ৷  যেমন: রাগ ভৈরবী,  রাগ গউরা,  রাগ পটমঞ্জরী ইত্যাদি ৷  বাংলা সাধন সংগীত শাখাটি সূএপাত হয়েছিল এ চর্যাপদ  থেকেই ৷ সে বিবেচনায় এটি একটি ধর্মগ্রন্থ জাতীয় রচনা ৷

সবশেষে আমরা এটা বলতে পারি  যে,  চর্যাপদ রচনাকাল খিষ্ট্রিয় দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দী ৷  এ দুশো বছরে বাংলার সামগ্রিক ইতিহাসের একটা ক্রান্তিকালীন সময় বলা চলে ৷ চর্যাপদগুলো এ দুশো বছরের বিস্তৃতিতে সেন বংশ ও তার পূর্ববর্তী পাল বংশের সময়কার সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তৎকালীন মানুষের জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়েই রচিত।

 

চর্যাপদের পদ পরিচিতি

চর্যাপদে মোট সাড়ে ৪৬টি পদ পাওয়া গিয়েছে। ৪৬টি পূর্ণ পদ আর একটি পদের ছেড়া অংশ পাওয়া গিয়েছে। চর্যাপদের কবির সংখ্যা ২৩, মতান্তরে ২৪। ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌ তার ‘বুড্‌ডিস্ট মিস্টিক সঙ্‌স’ গ্রন্থে ২৩ জন এবং সুকুমার সেন ‘বাঙ্গালা সাহিত্যের ইতিহাস’ গ্রন্থে ২৪ জনের কথা বলেছেন।

  • চর্যাপদের প্রথম পদটি রচনা করেন লুইপা।
  • চর্যাপদে সবচেয়ে বেশি পদ রচনা করেছেন ‘কাহ্নপা’, তার রচিত পদের সংখ্যা ১৩টি। পাওয়া গিয়েছে ১২টি। [৭, ৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৮, ১৯, ৩৬, ৪০, ৪২, ৪৫]
  • দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদের রচয়িতা ‘ভুসুকুপা’, তার রচিত পদের সংখ্যা ৮টি। [৬, ২১, ২৩, ২৭, ৩০, ৪১, ৪৩, ৪৯]
  • চর্যাপদের ২৪, ২৫ ও ৪৮ নং পদটি পাওয়া যায়নি।
  • ২৪ নং পদের রচয়িতা কাহ্নপা।
  • ২৫ নং পদের রচয়িতা তন্ত্রীপা।
  • ৪৮ নং পদের রচয়িতা কুক্কুরীপা।
  • ভুসুকুপা রচিত ২৩ নং পদটি খন্ডিত আকারে পাওয়া গেছে। এই পদের ৬টি পঙক্তি পাওয়া গেলেও বাকি ৪টি পাওয়া যায়নি।
  • **প্রবোধচন্দ্র বাগচী চর্যার যে তিব্বতি অনুবাদ সংগ্রহ করেন তাতে আরও চারটি পদের অনুবাদসহ ওই খণ্ডপদটির অনুবাদও পাওয়া যায়। মূল পুঁথির পদের সংখ্যা ছিল ৫১

চর্যাপদের কবিদের সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্যঃ

  • কাহ্নপা কাহ্নু, কাহ্নি, কাহ্নিল, কৃষ্ণচর্য, কৃষ্ণবজ্রপাদ নামেও চর্যাপদে পরিচিত হয়েছেন।
  • ড. সুকুমার সেনের মতে কুক্কুরীপার ভাষার সাথে মহিলাদের ভাষার মিল রয়েছে তাই অনেকে তাকে মহিলা কবি মনে করে।
  • ধর্মপার গুরু ছিলেন কাহ্নপা।
  • বিরুপা ও ভাদেপার গুরু ছিলেন জালন্ধরীপা। জালন্ধরীপা ও কঙ্কণপার গুরু ছিলেন কম্বলম্বরপা।
  • বীণাপার গুরু ছিলেন ভাদেপা।
  • অনেকের ধারণা ভুসুকুপা রাজপুত্র ছিলেন। ভুক্তি (ভু), সুপ্তি (সু), কুটিরে (কু) অবস্থান ছাড়া আর কিছু করতেন না বলে তাকে ভুসুকু নামে ডাকা হতো।
  • লুইপার গুরু ছিলেন শবরপা। শবরপার গুরু ছিলেন নাগার্জুন।
  • ডোম্বীপা ত্রিপুরা রাজ্যের রাজা ছিলেন। ডোম্বীপার গুরু ছিলেন বিরুপা।
  • চর্যাপদ সম্পর্কিত বিবিধ প্রশ্ন ও উত্তরঃ
  • চর্যা কথার অর্থ কী?
  • আচরণীয়।
  • হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর আগে পুঁথি আবিষ্কারে কার দায়িত্ব ছিল?

-রাজেন্দ্রলাল মিত্র।

  • চর্যার কোন পদকার নিজেকে বাঙালি বলে পরিচয় দিয়েছেন? কত সংখ্যক পদে?- – – – – ভুসুকুপা, ৪৯ নং পদে।
  • চর্যাপদে কোন কোন নদীর নাম পাওয়া যায়? -গঙ্গা ও যমুনা, ডোম্বীপার পদে।
  • চর্যাপদে উল্লিখিত একমাত্র ফলের নাম কি? – তেঁতুল।
  • চর্যাপদের কোন কবিকে চিত্র ধর্মী কবি বলা হয়? – ভুসুকুপা।
  • চর্যাপদের ভাষাকে কে হিন্দী বলে দাবী করেছেন? – বিজয়চন্দ্র মজুমদার।
  • চর্যাপদের পুঁথিটি কিসের উপর লেখা? – তালপাতা
  • চর্যায় কোন খেলার উল্লেখ আছে? – নয়বল বা দাবা।
  • চর্যাপদের ভাষা যে বংলা তা কে প্রমাণ করেন?- ১৯২৬ সালে সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায়।
  • চর্যাপদে চিত্রত জনগোষ্ঠীর নামগুলো কি কি?- তাঁতি,ব্যাধ,শবর, মাহুত,শুঁড়ি,কাপালিক।
  • চর্যার কোন পদকর্তা নিজেকে বাঙালি বলে দাবি করেছেন? – ভুসুকুপা (পূর্ববঙ্গ)।
  • চর্যার পদে বাংলা দেশের কোন নদীর নাম আছে? – পদ্মা নদীর
  • পদ্মা নদীর উল্লেখ কাঁর কততম পদে আছে? – ভুসুকুপার ৪৯ নং পদে
  • চর্যাপদে কতটি প্রবাদ বাক্য আছে? – ৬টি।
  • চর্যাপদে কোন কোন যান চলাচলেরউল্লেখ আছে? – রথ, হাতি, নৌকা।

This Post Has One Comment

  1. Md Ashikul Habib

    নতুন অনেক কিছু জানলাম, ধন্যবাদ ?

Leave a Reply