You are currently viewing দ্বিজেন্দ্রলাল রায়

দ্বিজেন্দ্রলাল রায়

দ্বিজেন্দ্রলাল রায়

দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৯ জুলাই, ১৮৬৩ – ১৭ মে, ১৯১৩) ছিলেন এক জন বিশিষ্ট কবি, নাট্যকার ও সংগীতস্রষ্টা। তিনি ডি এল রায় নামেও পরিচিত ছিলেন। তাঁর জন্ম হয়েছিল অধুনা নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগরে। তাঁর বাবা ছিলেন কৃষ্ণনগর রাজ পরিবারের দেওয়ান। তিনি প্রায় ৫০০ গান রচনা করেন। এই গানগুলি বাংলা সংগীত জগতে দ্বিজেন্দ্রগীতি নামে পরিচিত। তাঁর বিখ্যাত গান ‘ধনধান্য পুষ্পে ভরা’, ‘বঙ্গ আমার, জননী আমার’, আজও সমান জনপ্রিয়। তিনি অনেকগুলো নাটক রচনা করেন। তাঁর নাটকগুলি চার শ্রেণিতে বিন্যস্ত — প্রহসন, ঐতিহাসিক নাটক, কাব্যনাটক ও সামাজিক নাটক। তাঁর রচিত কাব্যগ্রন্থগুলির মধ্যে জীবদ্দশায় প্রকাশিত আর্যগাথা (১ম ও ২য় ভাগ) ও মন্দ্র বিখ্যাত। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের বিখ্যাত নাটকগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য একঘরে, কল্কি অবতার, বিরহ, সীতা, তারাবাঈ, দুর্গাদাস, রাণা প্রতাপসিংহ, মেবার পতন, নুরজাহান, সাজাহান, চন্দ্রগুপ্ত, সিংহল বিজয় ইত্যাদি। হাস্যরসেও তিনি অসামান্য দক্ষতা দেখিয়েছেন। বাল্যকালে তিনি একটি সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে লালিত হয়েছিলেন। পিতা কার্তিকেয়চন্দ্র ছিলেন একাধারে সংগীতজ্ঞ, গায়ক ও লেখক। দ্বিজেন্দ্রলালের দুই অগ্রজ জ্ঞানেন্দ্রলাল রায় ও হরেন্দ্রলাল রায় দু’ জনেই ছিলেন লেখক ও পত্রিকা সম্পাদক। গৃহে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, দীনবন্ধু মিত্র প্রমুখের যাতায়াত ছিল। এ রকম একটি পরিবেশে কৈশোরেই তিনি কবিতা রচনা শুরু করেন। অল্প বয়স থেকেই কাব্য রচনার প্রতি তাঁর ঝোঁক ছিল। তিনি পাঁচ শতাধিক গান লিখেছেন, যা দ্বিজেন্দ্রগীতি নামে পরিচিত। ১৯০৫ সালে তিনি কলকাতায় পূর্ণিমা সম্মেলন নামে একটি সাহিত্য সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯১৩ সালে তিনি ভারতবর্ষ পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব নেন।

শিক্ষা ও কর্মজীবন

দ্বিজেন্দ্রলাল ১৮৭৮-এ প্রবেশিকা পরীক্ষায় বৃত্তি লাভ করেন। এফ. এ. পাস করেন কৃষ্ণনগর কলেজ থেকে। পরে হুগলি কলেজ থেকে বি.এ. এবং ১৮৮৪ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ (অধুনা প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়) থেকে এম.এ. পাস করেন। এরপর কিছুদিন ছাপরা’র রেভেলগঞ্জ মুখার্জি সেমিনারিতে শিক্ষকতা করার পর সরকারি বৃত্তি নিয়ে ইংল্যান্ড যান কৃষিবিদ্যা শিক্ষা করার জন্য। রয়্যাল এগ্রিকালচারাল কলেজ ও এগ্রিকালচারাল সোসাইটি হতে কৃষিবিদ্যায় FRAS এবং MRAC ও MRAS ডিগ্রি অর্জন করেন। ইংল্যান্ডে থাকাকালীন ১৮৮৬ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর একমাত্র ইংরেজি কাব্যগ্রন্থ Lyrics of Ind। এই বছরই দেশে প্রত্যাবর্তন করে সরকারি কর্মে নিযুক্ত হন দ্বিজেন্দ্রলাল। ভারতবর্ষে ফিরে তিনি জরিপ ও কর মূল্যায়ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন, এবং মধ্যপ্রদেশে সরকারী দপ্তরে যোগ দেন। পরে তিনি দিনাজপুরে সহকারী ম্যাজিস্ট্রেট পদে নিয়োগ পান। তিনি প্রখ্যাত হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক প্রতাপচন্দ্র মজুমদারের কন্যা সুরবালা দেবীকে বিবাহ করেন ১৮৮৭ সালে। ১৮৯০ সালে বর্ধমান এস্টেটের সুজামুতা পরগনায় সেটেলমেন্ট অফিসার হিসাবে কর্মরত অবস্থায় কৃষকদের অধিকার বিষয়ে তাঁর সাথে বাংলার ইংরেজ গভর্নরের বিবাদ ঘটে। শারীরিক অসুস্থতার কারণে তিনি ১৯১৩ সালে সরকারী চাকরী হতে অবসর নেন।

গ্রন্থতালিকা

কাব্যগ্রন্থ
  • আর্যগাথা, ১ম খণ্ড (১৮৮৪)
  • The Lyrics of India (ইং থাকাকালীন রচিত) (১৮৮৬ )
  • আর্যগাথা, ২য় খণ্ড (১৮৮৪)
  • আষাঢ়ে (১৮৯৯)
  • হাসির গান (১৯০০)
  • মন্দ্র (১৯০২)
  • আলেখ্য (১৯০৭)
  • ত্রিবেণী (১৯১২)

উল্লেখযোগ্য নাটক :

(১) প্রহসন বা লঘু রসাশ্রয়ি নাটক-
একঘরে (১৮৮৯)
কল্কি অবতার (১৮৯৫)
বিরহ (১৮৯৭)
এ্যহস্পর্শ বা সুখী পরিবার (১৯০১)
প্রায়শ্চিত্ত (১৯০২)
পুনর্জন্ম (১৯১১)
আনন্দ-বিদায় (১৯১২)

(২) ইতিহাসাশ্রয়ী নাটক-

তারাবাঈ (১৯০৩)(প্রথম ঐতিহাহাসিক নাটক)
রানা প্রতাপসিংহ (১৯০৫)
দুর্গাদাস (১৯০৬)
সোরার রুস্তম (১৯০৮)
নূরজাহান (১৯০৮)
মেবার পতন (১৯০৮)
সাজাহান (১৯০৯)(সর্বশ্রেষ্ঠ নাটক)
চন্দ্রগুপ্ত (১৯১২)
সিংহল বিজয় (১৯১৫)

(৩) পৌরাণিক নাটক-

পাষাণী (১৯০০)
(প্রথম পৌরাণিক নাটক)
সীতা (১৯০৮)
(শ্রেষ্ঠ পৌরাণিক নাটক)
ভীষ্ম (১৯১৪)

(৪) সামাজিক নাটক-

  • পরপারে (১৯১২)
  • বঙ্গনারী (১৯১৬)

সূত্র: উইকিপিডিয়া

Leave a Reply