You are currently viewing প্রথম বিশ্বযুদ্ধ –  দ্বিতীয় পর্ব

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ – দ্বিতীয় পর্ব

প্রথম বিশ্বযুদ্ধ – পর্ব দুই

মানব সভ্যতার ইতিহাস পর্যালোচনায় যেসব বিপর্যয় মূলক ঘটনাগুলি প্রত্যক্ষ করা যায় তার মধ্যে সব থেকে মর্মান্তিক ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ । জল , স্থল , অন্তরিক্ষ জুড়ে বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ায় এই যুদ্ধ বিশ্বযুদ্ধের রূপ নেয় । বিভিন্ন কারণের মিলিত ফল ছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ । বিগত কয়েক দশক ধরেই ইউরােপের বিভিন্ন ঘটনা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি রচনা করে ।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে ইউরােপ দুটি সশস্ত্র শিবিরে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল । একদিকে ছিল জার্মানি , ইতালি ও অস্ট্রিয়াকে নিয়ে ত্রিশক্তি চুক্তির সামরিক জোট; আর অন্যদিকে ছিল ইংল্যান্ড , ফ্রান্স ও রাশিয়াকে নিয়ে গড়ে ওঠা ত্রিশক্তি আতাঁত।
আমরা নিচে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পিছনের ইতিহাসগুলো এক পলকে দেখে নেই –
১-উত্তর – পশ্চিম আফ্রিকার মরক্কোকে কেন্দ্র করে মরক্কো সংকট এবং বলকান সংকট আন্তজার্তিক পরিস্থিতিতে জটিলতার সৃষ্টি করে যা বিশ্বকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দিকে নিয়ে যায়।

২-উনিশ শতকের শেষ এবং বিশ শতকের গোড়ার দিকে উগ্র জাতীয়তাবাদও প্রথম বিশ্বযুদ্ধ হওয়ার পিছনে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কারণ তৎকালীন ইউরোপের প্রত্যেকটা দেশ নিজেদের শ্রেষ্ঠ মনে করতো এবং অন্যান্য দেশ ও জাতিকে পদানত করে নিজেদের শ্রেষ্ঠ প্রমাণ করার প্রয়াসে ছিলো।এই উগ্র জাতীয়তাবাদ ইউরোপে জাতিগত বৈরীতার সৃষ্টি করে বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি তৈরি করেছিলো।

৩-ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে উপনিবেশ নিয়ে চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিলো। শিল্প বিপ্লবের পরে ইউরোপের দেশগুলোর কাচামাল সংগ্রহের একমাত্র উপায় হয়ে দাড়ায় উপনিবেশ দেশগুলো।ইতালি ও জার্মানিতে শিল্প বিপ্লব অনেক পরে হয়।তাই কাচামাল সংগ্রহ এবং বাজারজাতকরণের জন্য তাদের উপনিবেশ বিস্তারের প্রয়োজন পড়ে।এই উপনিবেশ বিস্তারকে কেন্দ্র করে ব্রিটেন,ফ্রান্স, রাশিয়ার সাথে ইতালি এবং জার্মানির সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠে।ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে ঔপনিবেশিক এই দ্বন্দ্ব ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধ হওয়ার পিছনে একটা বড় কারণ।

৪-প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে ইউরোপীয় দেশগুলো পরস্পর বিরোধী নানা চুক্তি এবং জোটে অংশগ্রহণ করে নিজেদের শক্তি বাড়ায় যা ইউরোপকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়।একদিকে ছিলো জার্মানি, ইতালি এবং অস্ট্রিয়ার ত্রিশক্তি চুক্তির সামরিক জোট অপরদিকে ছিলো ফ্রান্স,ইংল্যান্ড এবং রাশিয়াকে নিয়ে গড়ে ওঠা ত্রিশক্তি আতাঁত।

৫-রাজনৈতিক নানা কারণের জন্য ও বিশ্ব প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সম্মুখীন হয়। সেই সময় ইউরোপে গণতন্ত্রের অভাব পরিলক্ষিত হয়। সবাই ছিলো সম্রাজ্য বিস্তারে ব্যস্ত। আগ্রাসী মনোভাবে নিমগ্ন। যেহেতু রাজনৈতিক অবস্থা ছিলো চড়ম আকারে অস্থিতিশীল, তাই সেই সময়কার রাষ্ট্র প্রধানগণ আলোচনায় না যেয়ে যুদ্ধে জড়িয়ে পরেছিলো।

৬- ইউরোপের দেশগুলোর তৎকালীন শাসনব্যবস্থার দূর্বলতা এবং ভঙ্গুরতা,বিভিন্ন দেশের মধ্যে অস্ত্র প্রতিযোগিতা, শক্তির ভারসাম্যহীনতাও  তাদের যুদ্ধে জড়িয়্র পড়ার একটি উল্লেখযোগ্য কারণ। 

এ যুদ্ধের জন্য দায়ী অন্য কারণগুলো হলো- কূটনৈতিক সঙ্কটের সময়ের ঘটনাবলী। এর মধ্যে ছিল, উদ্দেশ্য নিয়ে বিভ্রান্তি (যেমন জার্মানি মনে করেছিল ব্রিটেন এ যুদ্ধে নিরপেক্ষ থাকবে), যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি যা অবশ্যম্ভাবী ঘটে থাকে এবং কূটনৈতিক বিভ্রান্তি ও যোগাযোগের অভাবে সঙ্কট দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ে।

৮-এ যুদ্ধের আরেকটি কারণ ছিল সমরবাদ। ইউরোপের শক্তিগুলোর বিভক্তি সেখানে ব্যাপক অস্ত্রপ্রতিযোগিতার সুত্রপাত ঘটে। ফ্রান্স ও জার্মানি উভয়েই ১৯৭০ থেকে ১৯১৪ সাল পর্যন্ত তাদের সেনা সংখ্যা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করে। সাগরে নিয়ন্ত্রণ দখলে ব্রিটেন ও জার্মানি তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামে। উভয়ে যুদ্ধজাহাজ তৈরি করে।
আমরা পরবর্তী পর্বে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন নানা ঘটনা সম্পর্কে আলোচনা করবো।

লিখেছেন,

আফসানা আক্তার

Leave a Reply