You are currently viewing বাংলাদেশ সংবিধানের পটভূমি

বাংলাদেশ সংবিধানের পটভূমি

১০ এপ্রিল ১৯৭১ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র জারি করা হয়।ঘোষণাপত্রটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠন পক্রিয়ায় প্রথম আইনি দলিল।এটি বাংলাদেশের প্রথম অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধান।মুজিবনগরে স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার গঠন করা হয়। 
১৭ এপ্রিল ১৯৭১ স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার শপথ গ্রহণ করে।
২২ ডিসেম্বর ১৯৭১ বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার কলকাতা থেকে ঢাকায় প্রত্যাবর্তনপূর্বক নবসৃষ্ট রাষ্ট্রের শাসনভার গ্রহণ করে।
১০ জানুয়ারি ১৯৭২ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন।
১১ জানুয়ারি ১৯৭২ রাষ্ট্রপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘বাংলাদেশের অস্থায়ী সংবিধান আদেশ’ জারি করেন। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় অন্তর্বর্তীকালীন সংবিধান।
১২ জানুয়ারি ১৯৭২ শেখ মুজিবুর রহমান রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
আবু সাঈদ চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। । এরপর আবু সাঈদ চৌধুরী শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করেন।
২২ মার্চ ১৯৭২; ২৩ মার্চ ১৯৭২ ২২ মার্চ সংবিধান রচনার উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি ‘বাংলাদেশ গণপরিষদ আদেশ’ নামে একটি আদেশ জারি করেন। আদেশটি ২৩ মার্চ গেজেট বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশিত হয়।গণপরিষদের মোট সদস্য সংখ্যা ছিলেন ৪৬৯ জন। পরবর্তীতে মোট সদস্য সংখ্যা দাঁড়ায় ৪০৩ জনে। ৪০৩ জনের ৪০০ জনই ছিলেন আওয়ামী লীগের। ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি(ন্যাপ)-এর ১ জন ও বাকি ২ জন ছিলেন স্বতন্ত্র সদস্য।  
১০ এপ্রিল ১৯৭২ গণপরিষদ প্রথম অধিবেশনের প্রথম বৈঠকে মিলিত হন।রাষ্ট্রপতি গণপরিষদের অধিবেশন উদ্বোধন করেন। প্রথম অধিবেশন সভাপতিত্ব করেন মজলুম নেতা মাওলানা আব্দুর রশিদ তর্কবাগীশ।প্রথম অধিবেশনের শুরুতে  শাহ আব্দুল হামিদ স্পীকার ও মোহাম্মদ উল্লাহ ডেপুটি স্পীকার নির্বাচিত হন।
১১ এপ্রিল ১৯৭২ খসড়া সংবিধান প্রণয়নের জন্য ড.  কামাল হোসেনকে সভাপতি করে ৩৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি ‘খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি’ গঠন করা হয়।কমিটিতে একমাত্র মহিলা সদস্য ছিলেন বেগম রাজিয়া বানু।এবং একমাত্র বিরোধীদলীয় সদস্য ছিলেন সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত(ন্যাপ)।   
১৭ এপ্রিল ১৯৭২ ‘খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি’র প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
১০ জুন ১৯৭২ খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি একটি প্রাথমিক খসড়া অনুমোদন করে।সংবিধানের আইনি ভাষা ও কারিগরি বিভিন্ন দিক পরীক্ষার জন্য এ বিষয়ে বিদেশী আইনি বিশেষজ্ঞ জন গাথরিকে আনা হয়।সংবিধানের ভাষাগত সংস্থান ও ব্যাকরণগত ভুলত্রুটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য সৈয়দ আলী আহসান,ড. মাযহারুল ইসলাম ও আনিসুজ্জামান এর সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। আনিসুজ্জামান ছিলেন উক্ত কমিটির কনভেনর।
১২ অক্টোবর ১৯৭২ গণপরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হয়।
১৯ অক্টোবর ১৯৭২ খসড়া সংবিধান বিলের উপর মোট ১৬৩ টি সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপিত হয়; এর মধ্য থেকে ৮৪ টি সংশোধনী প্রস্তাব গৃহীত হয়। গৃহীত ৮৪ টি প্রস্তাবের মধ্যে ৮৩ টি ছিল আওয়ামী লীগের সদস্য কর্তৃক উত্থাপিত এবং একটি ছিল ন্যাপ এর সুরঞ্জিত সেন কর্তৃক উত্থাপিত।
৪ নভেম্বর ১৯৭২ বেলা ১ টা ১০ মিনিটে গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান গণপরিষদ কর্তৃক গৃহীত হয়। ৪ নভেম্বেরকে সংবিধান দিবস বলা হয়।
১৫ ডিসেম্বর ১৯৭২ গণপরিষদের মোট ৩০৯ জন সদস্য সংবিধানের কপিতে স্বাক্ষর করেন।প্রথম স্বাক্ষর করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং তাজউদ্দীন আহমদ স্বাক্ষর করেন।গণপরিষদের একমাত্র বিরোধী দলীয় সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত গৃহীত সংবিধানে স্বাক্ষর করেননি।
১৬ ডিসেম্বের ১৯৭২ ১৬ ডিসেম্বের বাংলাদেশের সংবিধান কার্যকর হয়।
 

  • বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নে সময় লেগেছিল ৯ মাস।(পাকিস্তানের লেগেছিল ৯ বছর)
  • বাংলাদেশের সংবিধানে ভাষা আছে ৩ নং এ ।(পাকিস্তানের সংবিধানে বাংলা ভাষাকে রাখা হয়েছিল ২১৬ নং এ )
  • বাংলাদেশের প্রথম সংবিধান হাতে লিখে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছিল।
  • সংবিধান প্রণয়নের বিল উত্থাপন করেন মনসুর আলি।
  •  কমিটি ৭৪ টি বৈঠকে মিলিত হয় এবং ৩০০ ঘণ্টা কাজ করে।
  • হস্তলিপির কাজ করেন মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম আব্দুর রউফ।
  • হাতে লেখা বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানের পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিল ১০৯।
  • সংবিধানের অঙ্গসজ্জা কার্যক্রমের মূল তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন।
  • অঙ্গসজ্জার কাজ করেন হাশেম খান
 
লিখেছেন,
নজরুল ইসলাম
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় 

Leave a Reply