You are currently viewing বিবি রাসেল – সালমা আক্তার

বিবি রাসেল – সালমা আক্তার

 

বিবি রাসেল

সংস্কৃতিপ্রিয় বাবা মুখলেসুর রহমান এবং মাতা শামসুন্নাহার রহমানের পাঁচ সন্তানের মধ্যে তৃতীয় হলেন বিবি রাসেল। স্কুল জীবন কাটে কামরুন্নেসা সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। পরবর্তীতে তিনি ঢাকার গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ থেকে পড়াশোনা করেন।

ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে সবসময় আর্কষণবোধ করতেন।ছোটবেলায় বাবা মা তাকে যে জামা সেলাই করে দিতেন,তা তার ঠিক পছন্দ হতো না। সবসময় সবকিছুতে নতুনত্ব,ভিন্নতা আনার চেষ্টা করতেন।মাত্র ১০ বছর বয়সে বাবা তার জন্য একটি সেলাই মেশিন কিনে আনেন।যা দিয়ে তিনি নিজের পছন্দমতো কাপড় সেলাই করতেন।সকল কাজে বাবা-মায়ের বেশ সাহায্য তিনি পেয়েছেন।

 

কখনো কখনো কাপড়ের রঙ ফুটাতে রান্নার হলুদ ব্যবহার করতেন। ১৬ বছর বয়সে তিনি তার এই ফ্যাশন ডিজাইনের প্রতি ভালবাসা তার বাবাকে জানান।এরপর আর তাকে পিছন ফিরে তাকাতে হয় নি।

১৯৭২ সালে লন্ডন কলেজ অভ ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে যোগ দিতে যান। কিন্তু ইংরেজি পাঠ্যক্রমের কোনো সার্টিফিকেট না থাকায় তিনি ভর্তির জন্য অনুপযুক্ত ছিলেন। তবু চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখছিলেন না তিনি। একসময় তাঁকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়। তিনি সেদিন বাংলাদেশের পোশাক, ডিজাইন, ফ্যাশন নিয়ে করা মৌলিক কিছু প্রশ্নের উত্তর দেন। যদিও প্রাতিষ্ঠানিক ধারণা না থাকায় কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হন। এসময় তাকে অতিরিক্ত ক্লাসগুলোতে অংশ নেয়ার শর্তে ভর্তি হবার সুযোগ দেয়া হয়।

১৯৭৫ সালে গ্র্যাজুয়েট হওয়ার পর তিনি মডেলিংয়ের সুযোগ পান। মডেলিংয়ে একদম আগ্রহ না থাকা সত্ত্বেও ফ্যাশন সম্পর্কে ভালোভাবে জানার জন্য তিনি কাজ করতে আগ্রহী হন। উচ্চতা ৫ফুট ১০ ইঞ্চি এবং তামাটে গায়ের রং, লম্বা চুল, আর প্রাচ্যের সংস্কৃতির মিশ্রণে এই মডেল অল্প ক’দিনের মধ্যেই তার কাজের পরিশ্রম এবং বুদ্ধিদীপ্ততার জন্য পরিচিত হয়ে যান।


যেকোনো নতুন কাজের জন্য তার আগ্রহ ছিল অপরিসীম এবং নিত্যনতুনভাবে নিজেকে আবিষ্কারের নেশা ছিল তার। একবার একটি শ্যাম্পুর মডেলিংয়ের জন্য সুইমিংপুলে উঁচু জাম্পবোর্ড থেকে লাফ দিতে হয়। এরকম কাজ আগে না হওয়ায় তাকে টানা ১০ দিন অনুশীলনের মধ্য দিয়েও যেতে হয়।

তাঁর ইচ্ছা ছিলো সারা বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের তাঁতশিল্প তুলে ধরা।১৯৯৪ সালে তিনি দেশে আসেন। দেশে ফিরে তিনি তার বাবা-মাকে তার ইচ্ছার কথা জানান এবং লোকজনের নানা কটূক্তিসত্ত্বেও তারা বিবিকে সাহায্য করেন। প্রায় দেড় বছর তিনি দেশের প্রতিটি আনাচে-কানাচে ঘোরেন এবং হস্তশিল্পীদের সাথে কথাবার্তা বলেন। তবে কোথাও কোন আশার আভাস পান নি।

কিন্তু প্রায় দেড় বছর দেশের আনাচে-কানাচে সব পোশাক-শিল্পীর সাথে কথা বলে তিনি তাদের বিশ্বাস অর্জন করেন এবং নিজের কাজ শুরু করেন। প্রায় একা হাতেই সামলে যাচ্ছেন নিজের “বিবি প্রোডাকশন”।

‘স্বীকৃতি পেলে কাজের শক্তি বাড়ে – বিবি রাসেল’

২০০৪ সাল পর্যন্ত তার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের গ্রাম্য এলাকায় ৩৫,০০০ তাঁতীকে চাকরি দিয়েছে।
অনেক পুরস্কার আর সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন বিবি রাসেল।

 

 

লিখেছেন,

সালমা আক্তার, ন্যাশনাল কলেজ অব হোম ইকোনমিক্স

 

 

Leave a Reply