You are currently viewing মায়া সভ্যতা

মায়া সভ্যতা

প্রায় চার হাজার বছর আগের কথা। মেসো আমেরিকা বা বর্তমান মধ্য আমেরিকার সবচেয়ে পরাক্রমশালী প্রাচীনতম জাতি ছিল মায়ানরা। মেক্সিকোর দক্ষিণে এবং উত্তর-মধ্য আমেরিকাতে বসবাস করতো তারা। তারা শুধু মধ্য আমেরিকার পরাক্রমশালী জাতিই ছিল না, পৃথিবীর অন্য প্রান্তের মানুষদের তুলনায় কয়েক ধাপ এগিয়ে ছিল।

মায়ান শিল্প ও সংস্কৃতি

মায়ারা বিশ্বাস করতো কোন কিছুর জন্ম বা মৃত্যু নেই। এই বিশ্বাস থেকে ঈশ্বর এবং বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সম্পর্কে তাদের ধারণা জন্মে। তারা বিশ্বাস করতো, পৃথিবীর নিচে শিবাল্বা বা ‘আতংকের স্থান’ আছে যেখানে আছে জীবনের গাছ। সেই গাছ পাতাল থেকে স্বর্গ পর্যন্ত প্রসারী এবং তামোয়ানচান এর স্বর্গে পোঁছাতে পাড়ি দিতে হবে ১৩ টি ধাপ। মায়ানদের বিশ্বাস, কেউ মরে গিয়ে স্বর্গ বা নরকে যায় না, বরং তামোয়ানচান এর পথে যাত্রা করে আর এই যাত্রার শুরু হয় অন্ধকার শিবাল্বা থেকে যেখানে সবকিছু বিভ্রান্তিকর এবং ধ্বংসাত্মক।

সংখ্যা পদ্ধতি

ভারতীয়দের চেয়ে ১০০ বছর আগেই মায়ানরা শূন্যের ধারণা তৈরি করে। মায়ানদের সংখ্যা পদ্ধতি গড়ে উঠেছিল তিনটি ভিন্ন চিহ্ন এবং প্রতীক দিয়ে। শেল চিহ্ন দিয়ে বোঝানো হতো শূন্য। এক বোঝানো হতো একটি ডট চিহ্ন দিয়ে। পাঁচ প্রকাশ করা হতো বার চিহ্ন দিয়ে। এ তিনটি চিহ্ন দিয়েই মায়ানরা হিসাব করত বিশ পর্যন্ত। তাদের ভিত্তি সংখ্যা ছিল মোট বিশটি। এই বিশটি সংখ্যাকে ভিত্তি করেই বড় বড় সংখ্যা হিসাব করা হতো।

জ্যোতির্বিদ্যা

মায়ানরা জ্যোতির্বিদ্যায় জ্ঞান অর্জন করেছিল। তারা ‘স্বর্গীয় দেহ’ নিয়ে গবেষণা করত। সূর্য, চাঁদ এবং তারার উৎপত্তি এবং ক্রমবিকাশ নিয়েও মায়ানরা নানা জ্ঞান অর্জন করেছিল। আমরা জানি, এক বছর সমান ৩৬৫ দিন। প্রকৃত হিসাবটা হচ্ছে এক বছর সমান ৩৬৫.২৪২২ দিন। আর জর্জিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এক বছর সমান ৩৬৫.২৪২৫ দিন। কিন্তু মায়ানদের হিসাব অনুযায়ী এক বছর সমান ৩৬৫.২৪২০ দিন। তার মানে,বছরের হিসাবে মায়ানদের হিসাবটিই ছিল প্রকৃত কাছাকাছি। খ্রিস্টপূর্ব সময়েই মায়ানরা বছরের এত নিখুঁত হিসাব করেছিল। মায়ানদের হিসাব মতে, ২৩৯২ দিনে ৮১টি চন্দ্রমাস হয়। অর্থাৎ একটি চন্দ্রমাসের দৈর্ঘ্য ২৯.৫৩০৮ দিন।

বল কোর্ট

মায়ানরা খেলাধুলাপ্রেমী ছিলেন। তারা তাদের শহরে বল কোর্ট করে রাখতেন।যার বর্তমান রূপ হলো স্টেডিয়াম।

ক্যালেন্ডার

মায়ানরা নিজেরাই নিজেদের ক্যালেন্ডার তৈরি করেছিলেন।মায়ানদের মোট তিনটি ক্যালেন্ডার। একটি হলো পবিত্র ক্যালেন্ডার বা ধর্মীয় ক্যালেন্ডার। এটি জোলকিন নামে পরিচিত। ২৬০ দিন বিশিষ্ট এই ক্যালেন্ডার বিভিন্ন ধর্মীয় দিবস পালনের জন্য ব্যবহার করা হতো।

দ্বিতীয়টি নাগরিক ক্যালেন্ডার বা কৃষি ক্যালেন্ডার। ধর্মনিরপেক্ষ এই ক্যালেন্ডার হাব  নামে পরিচিত। এটি আমাদের প্রচলিত ক্যালেন্ডারের মতো ৩৬৫ দিন বিশিষ্ট, যদিও এতে লিপ ইয়ার অন্তর্ভুক্ত ছিল না। এই ক্যালেন্ডারটি ব্যবহার করা হতো কৃষিকাজ এবং দৈনন্দিন কাজের জন্য।

তৃতীয় ক্যালেন্ডারটিকে বলা হয় দ্য লং কাউন্ট ক্যালেন্ডার। এটি ব্যবহার করা হতো ঐতিহাসিক ঘটনা লিখে রাখার কাজে। এর মাধ্যমে অতীতে বা ভবিষ্যতে হাজার হাজার বছর পর্যন্ত হিসেব রাখা যেত।

শিল্পকর্ম

মায়ানদের শিল্পকর্মের মধ্যে রয়েছে কাঠের শিল্পকর্ম, কাচের শিল্প, মৃণ্ময় পাত্র, পাথরের শিল্পকর্ম, দেয়াললিখন ইত্যাদি।তবে তারা কাঠ খোদাই করে ছবি তৈরিতে বেশ পারদর্শী ছিল।

মুখোশ

মায়ানদের মধ্যে ব্যাপক শিল্পকর্মের প্রসার ছিল।তার মধ্যে মুখোশ অন্যতম।মায়ানরা বিভিন্ন উৎসবে মুখোশ পরত। মায়ান শ্যামানরা সাধারণত চার ধরনের মুখোশ পরতো। বাকিরা পরতো আট ধরনের মুখোশ।

লিখন পদ্ধতি

মায়ানরা ছবি বা চিহ্নের মাধ্যমে বর্ণ বা শব্দ প্রকাশ করতো। একে গ্লাইফস বলা হয়।

ঔষধ

মায়ানরা ওষুধও আবিষ্কার করেছিল।ওষুধ তৈরি করতেন ধর্মযাজকেরা।তাদের শরীরে ক্ষত হলেই তারা তা সেলাই করে নিত। তাদের শরীরের কোনো হাড় ভেঙে গেলে কিংবা মচকে গেলে দ্রুত আরোগ্য লাভের জন্য ভাঙা হাড়ের চারপাশে প্লাস্টার করত। দন্ত চিকিৎসায়ও বেশ পারদর্শী ছিল মায়ানরা। দাঁতের ফাঁকা অংশ পূরণ করার জন্য তারা ধাতুর প্রলেপ ব্যবহার করত।

মায়ানরা উদ্ভাবন করেছিল এমন অনেক কিছু, যা ঐ সময়ের তো বটেই, বর্তমান মানুষদের কাছেও বিস্ময়ের ব্যাপার।

লিখেছেন,

সালমা আক্তার

Leave a Reply