You are currently viewing রসায়ন দ্বিতীয় অধ্যায় (৯ম-১০ম শ্রেণি): পদার্থের অবস্থা- টপিকঃ অধ্যায়ের সংজ্ঞাসমূহ– Hamida Akter

রসায়ন দ্বিতীয় অধ্যায় (৯ম-১০ম শ্রেণি): পদার্থের অবস্থা- টপিকঃ অধ্যায়ের সংজ্ঞাসমূহ– Hamida Akter

 
সংজ্ঞাসমূহ

 

১. ব্যাপন (Diffusion):

কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় পদার্থ কোনো মাধ্যমে স্বতঃস্ফূর্ত এবং সমভাবে ছড়িয়ে পড়লে সেই প্রক্রিয়াকে ব্যাপন বলা হয়। এই প্রক্রিয়ায় পদার্থ উচ্চ ঘনত্বের স্থান হতে নিম্ন ঘনত্বের স্থানের দিকে বিস্তার করে। উদাহরণস্বরূপ তরল পানিতে কিছুটা গোলাপি রঙের পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট (KMnO4) ছেড়ে দিল দেখা যাবে এর কণাগুলো পরস্পরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ পানিতে ছড়িয়ে পড়েছে এবং পানি গোলাপি বর্ণ ধারণ করেছে। এটি তরলে কঠিন পদার্থ ব্যাপনের একটি উদাহরণ।

সাধারণত তরল পদার্থে কঠিনের ব্যাপন হার কম থাকে।কিন্তু এতে যদি তাপ প্রয়োগ করা হয় তাহলে কঠিন পদার্থের কণাগুলো গরম পানি হতে তাপ গ্রহণ করে অধিক গতিতে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আবার তরল মাধ্যমে তরল পদার্থের ব্যাপন হার অপেক্ষাকৃত বেশি হয়। যেমনঃ পানিতে তরল নীল KMnO4 এর তুলনায় অল্প সময়ে ছড়িয়ে পড়ে। তরল পদার্থে গ্যাসীয় পদার্থের ব্যাপন হার সর্বাধিক হয়।

ব্যাপন হারের ক্রমঃ কঠিন<তরল<গ্যাসীয়

কোনো পদার্থ ছড়িয়ে পড়তে অধিক সময় লাগলে তার ব্যাপন হার কম এবং অল্প সময় লাগলে তার ব্যাপন হার বেশি। ব্যাপনের কারণেই কোন দ্রাবক দ্রবে দ্রবীভূত হতে পারে।

২. নিঃসরণ (Effusion):

উচ্চচাপীয় অঞ্চল হতে নিম্ন চাপীয় অঞ্চলের দিকে, সরু ছিদ্রপথে কোনো গ্যাসীয় পদার্থের সজোরে বেরিয়ে আসাকে নিঃসরণ বলে। নিঃসরণের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র গ্যাসীয় পদার্থ গ্যাসীয় মাধ্যমে সজোরে বেরিয়ে আসে এবং এটি একটি দ্রুত গতিসম্পন্ন স্বল্পস্থায়ী প্রক্রিয়া।

আমরা যানবাহনে জ্বালানি হিসেবে উচ্চচাপে সংকুচিত মিথেন গ্যাস, সিএনজি নামে পরিচিত, ব্যবহার করি। যানবাহন চালানোর সময় এই গ্যাস সজোরে সিলিন্ডার হতে বেরিয়ে ইঞ্জিনে প্রবেশ করে। আবার, একটি বেলুন ফুলিয়ে এক টুকরো স্কচটেপ লাগানোর পর আলপিন দিয়ে স্কচটেপে একটু ফুটো করলেই সজোরে বেলুনের সমস্ত বাতাস বের হয়ে যাবে। বেলুনের ভেতর উচ্চচাপের প্রভাবে সরু ছিদ্রপথ দিয়ে বাতাস নিম্ন চাপীয় স্থানে ধাবিত হয়। উল্লেখিত দুটি ঘটনাই নিঃসরণ।

নিঃসরণ ও ব্যাপনের মূল পার্থক্য হচ্ছেঃ

নিঃসরণ ব্যাপন
১. নিঃসরণে চাপের প্রভাব বিদ্যমান। ১. ব্যাপনে আাপের প্রভাব নেই।
২. নিঃসরনে কেবল গ্যাসীয় পদার্থ গ্যাসীয় মাধ্যমে সজোরে বের হয়ে বসে। ২. ব্যাপনের ক্ষেত্রে কঠিন, তরল বা গ্যাসীয় যেকোনো পদার্থ কোনো মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
৩. ব্যাপন ধীরগতিসম্পন্ন প্রক্রিয়া। ৩. নিঃসরণ দ্রুতগামী প্রক্রিয়া।
৪. ব্যাপন অপেক্ষাকৃত দীর্ঘস্থায়ী। ৪. নিঃসরণ স্বল্পস্থায়ী।

৩. গলন ও স্ফুটন (Melting and Boiling):

কোনো কঠিন পদার্থে তাপ প্রয়োগের ফলে তরল অবস্থায় রূপান্তরিত হওয়ার প্রক্রিয়াকে গলন বলে। তাপ প্রয়োগে ১ বায়ুমন্ডলীয় চাপে যে তাপমাত্রায় কোনো কঠিন পদার্থ তরলে পরিণত হয় তাকে ওই কঠিন পদার্থের গলনাংক বলে। প্রতিটি বিশুদ্ধ কঠিন পদার্থের নির্দিষ্ট গলনাংক বিদ্যমান। যেমনঃ সোডিয়াম ক্লোরাইডের গলনাংক ৮০১° সেলসিয়াস।

কোনো তরল পদার্থে তাপ প্রয়োগ করে তাকে গ্যাসীয় পদার্থে রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়াকে স্ফুটন বলে। তাপ প্রয়োগে ১ বায়ুমন্ডলীয় চাপে যে তাপমাত্রায় কোনো তরল পদার্থ গ্যাসে রূপান্তরিত হয় তাকে ওই তরল পদার্থের স্ফুটনাংক বলে। প্রতিটি বিশুদ্ধ তরল পদার্থের নির্দিষ্ট স্ফুটনাংক বিদ্যমান। যেমনঃ সোডিয়াম ক্লোরাইডের স্ফুটনাংক ১৪৬৫°সেলসিয়াস।

ঘনীভবন হলো স্ফুটনের বিপরীত প্রক্রিয়া। স্ফুটনের জন্য তাপ প্রয়োগ করতে হয়, অপরদিকে ঘনীভবনের সময় তাপ সরিয়ে নিতে হয়।

৪. পাতন (Distillation):

পাতন হচ্ছে বাষ্পীভবন এবং ঘনীভবনের একটি সমন্বিত প্রক্রিয়া। কোনো তরল পদার্থে আাপ প্রয়োগের মাধ্যমে ওই পদার্থকে বাষ্পে পরিণত করার প্রক্রিয়াই হলো বাষ্পীভবন প্রক্রিয়া। যেমনঃ চায়ের কাপে গরম চা থেকে বাষ্পাকারে পানি বের হয়ে যায়। আবার, এই বাষ্পকে ঠান্ডা করলে তা তরল পদার্থে পরিণত হয় যাকে ঘনীভবন প্রক্রিয়া বলে। যেমনঃ জলীয়বাষ্প হতে তাপ নির্গত হলে তা তরল পানিতে পরিণত হয়। এটি ঘনীভবনের উদাহরণ।

অর্থাৎ কোনো পদার্থে তাপ প্রয়োগের মাধ্যমে বাষ্পে পরিণত করে তাকে পুনরায় শীতলীকরণের মাধ্যমে তরল পদার্থে পরিণত করার প্রক্রিয়াকে পাতন বলে।

পাতন = বাষ্পীভবন + ঘনীভবন

(Distillation = Vaporization + Condensation)

৫. উর্ধ্বপাতন (Sublimation):

কিছু কিছু কঠিন পদার্থ আছে যাদের তাপ প্রদান করলে তরলে পরিণত না হয়ে সরাসরি বাষ্প হয়ে যায়। যে প্রক্রিয়ায় কোনো কঠিন পদার্থ তাপ প্রয়োগে তরলে পরিণত না হয়ে বাষ্পে রূপান্তরিত হয় তাকে উর্ধ্বপাতন প্রক্রিয়া বলে। উদাহরণস্বরূপ, ন্যাপথালিন, কর্পূর, কার্বন ডাই অক্সাইড, আয়োডিন এসব পদার্থকে তাপ দিলে তা সরাসরি বাষ্পে পরিণত হয়। এজন্য এসকল পদার্থকে উর্ধ্বপাতিত পদার্থ বলা হয়।

 

লিখেছেন,

Hamida Akter, Jahangirnagar University

 

 

Leave a Reply