You are currently viewing রোমান সভ্যতা

রোমান সভ্যতা

রোমান সভ্যতার কেন্দ্রভূমি ছিল রোম। যে নগরের ঐশ্বর্যের কোনো শেষ ছিলনা।ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং প্রাচীন সভ্যতাগুলোর মধ্যে অধিকতর ক্ষমতাশী হিসেবে পরিচিত ছিল রোমান সভ্যতা। প্রায় তিনহাজার বছর আগে, খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দীতে রোম নগর স্থাপিত হয়েছিল। ধারণা করা হয়, সম্ভবত রোমানরা ছিল আর্যদের বংশধর।রোমান সভ্যতা বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ সভ্যতা। রোম, গ্রীস, কার্থেক ও প্যালেস্টাইনসহ ভূমধ্যসাগর অঞ্চল জুড়ে বিদ্যমান সকল রাষ্ট্রসমূহের শিল্প সংস্কৃতি ও ধ্যান ধারণাকে সমৃদ্ধ করে এই সভ্যতাই।

ব্যাপ্তি

বর্তমান ইতালিতে উৎপত্তি লাভ করে রোমান রিপাবলিকের ব্যপ্তি কালক্রমে ভূমধ্যসাগরের ওপারে উত্তর আফ্রিকায় ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমান সময়ের মরক্কো ও আলেজিয়ার উত্তর উপকূল রোমান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। শত শত যুদ্ধ বিগ্রহ, অভ্যুত্থান, পাল্টা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সমৃদ্ধির দিকে ক্রমে এগিয়ে যেতে থাকে রোমান রিপাবলিক। যদিও জুলিয়াস সিজারের জন্ম রোমান রিপাবলিক পর্বে।তিনি রোমের অত্যন্ত পরাক্রমশালী ডিক্টেটর হিসাবে আবির্ভূত হন। তিনি সমৃদ্ধশালী মিশর জয় করেন আর মিশরের রানী ক্লিওপেট্রার সাথে তার প্রণয়ের কাহিনী তো সবার জানা।

জুলিয়াস সিজারের মৃত্যুর পর তার পালক পুত্র অগাস্টাস সিজার রোমের সিংহাসনে বসেন। তিনি রিপাবলিকানপন্থীদের চূড়ান্তভাবে পরাজিত করেন রোম প্রজাতন্ত্রের চিরতরে বিলুপ্তি ঘোষণা করেন এবং প্রতিষ্ঠা করেন রোমান সাম্রাজ্যের। তাই বলা হয় রোমান সাম্রাজ্যের প্রথম সম্রাট ছিলেন অগাস্টাস সিজার। অগাস্টাস সিজার নিজের নামানুসারেই তার জন্মমাস আগস্টের নামকরণ করেছিলেন। তার পালক পিতার জুলিয়াস সিজার নিজের নামে নামকরণ করেছিলেন নিজের জন্মমাস জুলাইয়ের নাম।ফেব্রুয়ারী মাস ২৮ দিনে হওয়ার পেছনের কাহিনীটাও সিজারদের সাথে জড়িয়ে আছে। জুলাই মাস ছিল ৩১ দিনে, কিন্তু আগস্ট ছিল ৩০ দিনের। যেহেতু অগাস্টাস জুলিয়াসের চেয়ে কোনো অংশেই কম নন, তিনি ফেব্রুয়ারী মাস থেকে একদিন কেটে আগস্টের সাথে অতিরিক্ত একদিন যোগ করে সেটা ৩১ দিনের বানালেন।

ধর্ম

রোমানরা প্রথম আটশ বছর ছিল পৌত্তলিক। রোমানদের প্রধান দেবতার নাম ছিল জুপিটার।

শুরুতে খ্রিস্টধর্মের সবচেয়ে বড় শত্রু হিসাবে আবির্ভূত হয় রোম। কেননা যীশু খ্রিস্টের একত্ববাদের শিক্ষা ছিল রোমান বহু ঈশ্বরবাদের সাথে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক।তাই প্রাথমিক যুগের খ্রিস্টানদের উপর অমানুষিক অত্যাচার করতে থাকে রোমানরা। কিন্তু তদুপরি সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় হতে থাকে যীশু খ্রিস্টের প্রচারিত ধর্ম।অধিকাংশ খ্রিস্টানই রোমান ক্যাথলিক।

সম্রাট নিরো

রোমান সম্রাট নিরো ইতিহাসের সবচেয়ে নিষ্ঠুর এবং পাগলাটে শাসকদের একজন হিসেবে পরিচিত। বলা হয় যে তিনি তার মাকে হত্যা করেছেন। হত্যা করেছেন তার সৎ ভাই ও স্ত্রীদেরকেও। খ্রিস্টানদের উপর চালিয়েছেন অকথ্য নিপীড়ন।

সম্রাট নিরো ছিলেন অত্যন্ত বেহিসাবি। বিশাল আকারের একটি প্রাসাদ নির্মাণ করতে গিয়ে তার পেছনে উড়িয়েছেন অঢেল অর্থ।

একই সাথে তিনি খেলাধুলারও আয়োজন করতেন। আয়োজন করতেন রথ দৌড় প্রতিযোগিতা। মঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে অভিনয়ও করতেন তিনি এবং নিজেকে দাবি করতেন একজন শিল্পী হিসেবে।

ইতিহাসে বলা হয়, রোম নগরী যখন আগুনে পুড়ে যাচ্ছিল তখন সেদিকে তার কোন ভ্রুক্ষেপও ছিল না। বরং সেসময় বাঁশি বাজাচ্ছিলেন নিরো।

ইতিহাসের এই ঘটনাটির কথা আজকের দিনেও উল্লেখ করা হয়।

ঐতিহাসিক দাস বিদ্রোহ

রোমে যখন দ্বিতীয়বার গৃহযুদ্ধের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছিল, ঠিক তখন অর্থাৎ ৭৩-৭১ খ্রিস্টপূর্বেব্দে স্পার্টাকাসের নেতৃত্বে রোমে সংঘটিত হয় ভয়াবহ দাস বিদ্রোহ, যা ইতিহাসে সর্ববৃহৎ দাস বিদ্রোহ হিসেবে পরিচিত ।ঐতিহাসিক এ দাস বিদ্রোহ রোমের সমাজ ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বড় রকমের প্রভাব ফেলেছিল । কারণ রোমান শাসকদের বিরুদ্ধে ক্রীতদাসদের এ বিদ্রোহ দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছিল ।

রোমান আইন

বিশ্বসভ্যতার ইতিহাসে রোমানদের সর্বশ্রেষ্ঠ এবং গুরুত্বপূর্ণ অবদান হচ্ছে আইন প্রণয়ন । খ্রিস্টপূর্ব পাঁচ শতকের মাঝামাঝি সময়ে রোমানরা ফৌজদারী ও দেওয়ানি আইনগুলো সুষ্ঠুভাবে একসাথে সাজাতে সক্ষম হন । খ্রিস্টপূর্ব ৫৪০ অব্দে ১২ ব্রোঞ্জ পাতে সর্বপ্রথম আইনগুলো খোদাই করে লেখা হয় এবং জনগণেকে দেখাবার জন্য প্রকাশ্যে ঝুলিয়ে রাখা হয় । ‘দ্বাদশ তালিকা’ নামে পরিচিত এ লিখিত আইন সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত ও পরিমার্জিত হতে থাকে । রোমান আইনকে তিনটি শাখায় ভাগ করা হয় – বেসামরিক আইন, জনগণের আইন ও প্রাকৃতিক আইন ।

পরবর্তী কয়েকশ’ বছরে রোমান আইন ক্রমশ একটি সভ্য সমাজের উপযোগী আইনে পরিণত হয় । এ আইনে মানুষের সম-অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়া হয় এবং কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তাকে নির্দোষ বলে ধরে নেয়ার নীতি গৃহীত হয় । এ আইনে কিছু মৌলিক মানবাধিকারেরও স্বীকৃতি দেয়া হয়েছিল। এসব কারণেই রোমান আইনকে আধুনিক পাশ্চাত্য আইনের ভিত্তি বলা হয় ।

সমাজব্যবস্থা

প্রাচীন রোমের সমাজ ছিল সম্পূর্ণ পুরুষশাসিত এবং দাস শ্রমের ওপর নির্ভরশীল । একই সাথে এটা ছিল যোদ্ধাদের সমাজ । নাগরিকদের প্রতি প্রতি এ সমাজ ছিল অত্যন্ত উদার । নাগরিক বলতে পুরুষদেরকেই বোঝাত, কেননা রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক জীবনে নারীদের কোনো ভূমিকা ছিল না ।

রোমানদের পতন

বার্বারিয়ানদের বারবার আক্রমণে পর্যুদস্ত হয় রোমানরা৷ একসময় ইউরোপজুড়ে কমতে শুরু করে তাদের আধিপত্য৷ ৪৭৬ সালের ৪ সেপ্টেম্বর জার্মান নেতা ওডোয়াকার রোমান সম্রাট রমুলুসকে সিংহাসনচ্যুত করে পশ্চিম রোম সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ নেন এবং নিজেকে ইটালির রাজা ঘোষণা করেন৷

লিখেছেন,

সালমা আক্তার

Leave a Reply