You are currently viewing লুজান চুক্তি – মোঃ মাহমুদুন্নবী

লুজান চুক্তি – মোঃ মাহমুদুন্নবী

 

সূচনাঃ সেভ্রেস চুক্তি (১০ আগস্ট ১৯২০) প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর উসমানীয় সাম্রাজ্য ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মিত্রশক্তির মধ্যে শান্তি চুক্তি হিসেবে স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এটি কখনো বাস্তবায়িত হয়নি। এর আগেই জার্মান সাম্রাজ্যের সাথে ভারসাই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় । ভারসাইলিসের চুক্তিতে জার্মান সাম্রাজ্যের উপর আরোপিত শর্তের চাইতে সেভ্রেস চুক্তির শর্তগুলো অধিক কঠোর ছিল। এদিকে, ফ্রান্স, ইটালি ও গ্রেট ব্রিটেন ১৯১৫ সাল থেকেই উসমানীয় সাম্রাজ্যের বিভাজনের পরিকল্পনা করছিল। শক্তিগুলো তুর্কি জাতীয় আন্দোলনের ফলাফলের ব্যাপারে একমত হতে পারছিল না বলে দেরি হয়।তুরস্কের স্বাধীনতা যুদ্ধের  ফলে সেভ্রেস চুক্তি পরিত্যক্ত হয় এবং স্বাক্ষর করা পক্ষগুলো ১৯২৩ সালে লুজানের চুক্তি দ্বারা তা প্রতিস্থাপন করে।

লুজান চুক্তিঃ প্রায় ৭০০ বছর ধরে উসমানীয় খেলাফত বা অটোমান শাসনের কেন্দ্রভূমি ছিলো তুরস্ক। ইস্তাম্বুল শহরে বসে ইউরোপ, উত্তর অফ্রিকা, মধ্য এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য সহ বিশাল এলাকা শাসন করতেন অটোমান সুলতানগণ। খলিফা হিসেবে অটোমান সুলতানরা সারা মুসলিম বিশ্বে বিপুল সম্মান কুড়িছেন। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অটোমান সাম্রাজ্যের পরাজয়ের পর ১৯২৪ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের পরিসমাপ্তি ঘটে। জন্ম হয় সেকুলারিজম তত্ত্বের বিশ্বাসী আধুনিক তুরস্কের। ফলশ্রুতিতে, রাতারাতি মুসলিম বিশ্বে উপর কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ হারায় তুরস্ক। আধুনিক তুরস্কের গঠন, অটোমান সাম্রাজ্যের পতন ও তুরস্ককে শতবৎসরের জন্য পরাশক্তি হতে না দেওয়ার জন্য সম্পাদিত হয় ঐতিহাসিক লুজান চুক্তি।

এটি একটি ঐতিহাসিক চুক্তি যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তকারী চূড়ান্ত চুক্তি হিসেবে পরিচিত। ১৯২৩ সালের লুজান চুক্তিতে একদিকে অটোমান সাম্রাজ্যের উত্তরসূরি তুরস্কের প্রতিনিধিরা এবং অন্য দিকে ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালি, জাপান, গ্রিস, রোমানিয়া এবং যুগোস্লাভিয়ার প্রতিনিধিরা ছিলেন। সাত মাসের সম্মেলনের পরে ১৯২৩ সালের ২৪ জুলাই সুইজারল্যান্ডের লুজানে এ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। মূলত লুজানে স্বাক্ষরিত হয় বলেই এর নাম লুজান চুক্তি তবে এ চুক্তিকে ‘শতাব্দী চুক্তি’ বলা যায় (মেয়াদ শত বছর বলে)। শতবর্ষের এ চুক্তির মাধ্যমে তুরস্ককে আগামী একশো বছরের জন্য তাদের সামনে মাথা তুলে যাতে দাঁড়াতে পারে তা সুনিশ্চিত করা হয়।

চুক্তিতে তুরস্কের আধুনিক রাষ্ট্রের সীমানার স্বীকৃতি দেয়া হয়। চুক্তিতে উল্লেখ করা হয়, তুরস্ক তার আগের আরব প্রদেশগুলোর ওপর কোনো দাবি জানাবে না এবং সাইপ্রাসে ব্রিটিশদের দখল এবং ডডেকানিজের ওপর ইতালীয় অধিকারকে স্বীকৃতি দেবে। অন্য দিকে মিত্ররা তাদের তুরস্কের কুর্দিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের দাবি পরিত্যাগ করবে। সাথে সাথে তুরস্ক আর্মেনিয়ার স্বত্ব ত্যাগ করবে। আর তুরস্কের ওপর প্রভাব বিস্তার করার দাবি ত্যাগ করবে মিত্র শক্তি এবং তুরস্কের আর্থিক বা সশস্ত্র বাহিনীর ওপর কোনো নিয়ন্ত্রণ চাপাবে না। এজিয়ান সাগর এবং কৃষ্ণ সাগরের মধ্যে বসফরাস প্রণালীতে জাহাজ চলাচলে কোনো ফি নিতে পারবে না তুরস্ক।

লুজান চুক্তি দ্বারা প্রাভাবিত প্রধান দিকগুলোঃ

১। খেলাফত ধ্বংস– ওসমানি খেলাফত ধ্বংস করা হয় এবং উত্তরসূরীদের গুপ্তহত্যা এবং নিখোজ করা হয় যাতে পুনরায় মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে না পারে। তাদের সমস্ত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে পাচার করা হয় পশ্চিমা বিশ্বে।

২। সেকুলার রাস্ট্র– সেকুলার রাস্ট্রে পরিণত হয় তুরস্ক। আরবিতে আযান দেওয়া এবং ইসলাম চর্চা হয়ে পরে প্রায় নিষিদ্ধ। এমনকি ওসমানি ভাষার পরিবর্তে ল্যাটিন ভাষার প্রচলন করে রাতারাতি একটি জাতিকে বানানো হয় অক্ষরজ্ঞানহীন।

৩। জ্বালানী খাতে বৈষম্য– তুরস্ক জ্বালানী বা খনিজ তেল উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হয় হোক ন সেটা দেশে অথবা বিদেশে।

৪। বসফরাস প্রণালী– তুরস্কের অংশ হওয়া সত্ত্বেও বসফরাস প্রণালী থেকে- যা কিনা এশিয়া ও ও ইউরোপের সংযোগ স্থাপনকারী- তা থেকে তুরস্কের কর্তৃত্ব তুলে নেওয়া হয়। শুল্ক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে তুরস্ককে।

৫। হেজাজ নিয়ন্ত্রণ– এক সময় মক্কা-মদীনা ছিল ওসমানীদের নিয়ন্ত্রণে। যদিও তারা নিজেদের শাসক মনে করতো না। খাদেম মনে করতো। কিন্তু এই চুক্তি অনুযায়ী ১৯২৩ এর পর থেকে ১০০ বছর পর্যন্ত প্রশাসনিক ভাবে আরবের দিকে অগ্রসরের ব্যাপারেও দেওয়া হয় নিষেধাজ্ঞা।

উপসংহারঃ ২০২৩ সালে শেষ হতে চলেছে এই চুক্তির মেয়াদ। তাই সারা বিশ্বে চলছে এই নিয়ে আলোচনা। কোন পথে যাবে তুরস্ক? যদিও মুসলিম বিশ্বের সেই ওসমানীয় শাসন ব্যবস্থার স্বর্ণযুগ আর কখনো ফেরানো যাবে না বলেই সবার ধারণা। কিন্তু তারপরও তুরস্ক ড্রামা সিরিজ, চলচিত্র ইত্যাদি তৈরির মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করে চলেছে মুসলিম জাতিকে। ইতোমধ্যেই তুরস্কের প্রেসিডেন্ট আবির্ভুত হয়েছে বিশ্বনেতার রূপে। তবে যাই ঘটুক না কেন, তুরস্ক যে এই চুক্তির পর ব্যাপকভাবে অর্থনীতিতে অগ্রসর হবে সে ব্যাপারটি সন্দেহাতীত।

রেফারেন্সঃ

  1. https://en.wikipedia.org/wiki/Treaty_of_Lausanne
  2. https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%B8%E0%A7%87%E0%A6%AD%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A7%87_%E0%A6%9A%E0%A7%81%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF
  3. https://www.dailynayadiganta.com/sub-editorial/518332/%E0%A6%B2%E0%A7%81%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A8-%E0%A6%9A%E0%A7%81%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A6%B0-%E0%A6%A4%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%95-
  4. https://thedailycampus.com/mukto-column/50287/%E0%A6%B2%E0%A7%81%E0%A6%9C%E0%A6%BE%E0%A6%A8-%E0%A6%9A%E0%A7%81%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A6%BF%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF-%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B6%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF-%E0%A6%B9%E0%A6%93%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%AA%E0%A7%8D%E0%A6%A8-%E0%A6%A4%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%B0
  5. https://www.prothomalo.com/opinion/column/%E0%A6%A4%E0%A7%81%E0%A6%B0%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%95%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%B6%E0%A6%95%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BF-%E0%A6%B9%E0%A6%93%E0%A7%9F%E0%A6%BE%E0%A6%B0-%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%B8%E0%A6%A8%E0%A6%BE
  6. https://www.etihashnama.com/2020/09/luzan-chukti-shakil-ahmed.html

 

 

লিখেছেন,

মোঃ মাহমুদুন্নবী

 

 

Leave a Reply