You are currently viewing হাইতি বিপ্লব – আব্দুল্লাহ আল আমিন

হাইতি বিপ্লব – আব্দুল্লাহ আল আমিন

 

 

হাইতি বিপ্লব

আব্দুল্লাহ আল আমিন

 

হাইতি পশ্চিম ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জের স্বাধীন দ্বীপরাষ্ট্র। এর সরকারি নাম হাইতি প্রজাতন্ত্র। ক্যারিবীয় সাগরের হিস্পানিওলা দ্বীপের পশ্চিম এক-তৃতীয়াংশ এলাকা নিয়ে রাষ্ট্রটি গঠিত। দ্বীপের বাকী অংশে ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্র অবস্থিত। ১৮০৪ সালে হাইতি লাতিন আমেরিকার প্রথম স্বাধীন দেশ হিসেবে আবির্ভূত হয়। এটিই দাসদের সফল বিপ্লবের ফলে সৃষ্ট একমাত্র রাষ্ট্র। হাইতি প্রথমে স্পেনীয় ও পরে ফরাসি উপনিবেশ ছিল। হাইতির সংখ্যাগরিষ্ঠ আফ্রিকান দাসেরা ফরাসি ঔপনিবেশিকদের উৎখাত করলে হাইতি স্বাধীনতা লাভ করে। পোর্ত-ও-প্রাঁস দেশটির রাজধানী ও বৃহত্তম শহর।

স্পেন অভিযাত্রী ক্রিস্টোফার কলম্বাস ৫ ডিসেম্বর ১৪৯১ সালে হাইতি নামক এই ভূখণ্ডটি আবিষ্কার করেন। তখন থেকেই প্রথমে স্পেনীয় ও পরে ফরাসিরা দেশটিতে উপনিবেশ গড়ে তোলে। তখন থেকে এ দেশের সোনা-সহ মহা মূল্যবান খনিজ সম্পদ ইউরোপে পাচার হতে থাকে। পক্ষান্তরে ইউরোপীয়দের নিয়ে আসা অজানা রোগ ও মহামারিতে হাইতির অজস্র আদিবাসী মানুষের মৃত্যু ঘটে। দখলদারদের বর্বরতায় এক পর্যায় হাইতি প্রায় জনশূন্য হয়ে পড়ে। ১৬৭০ সালে ফরাসিদের দখলে যাওয়ার পর হাইতিতে আবার জনবসতি গড়ে উঠে। ১৭ ও ১৮ শতকে পশ্চিম আফ্রিকা থেকে প্রায় আট লাখ মানুষ হাইতিতে ধরে এনে দাস বানিয়ে খামারে ও খনিতে কলুর বলদের মতো খাটানো হয়। হাইতির এই নিরীহ জনগণ বার বার দাসত্বের শৃঙ্খল ভেঙে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চেয়েছে। কিন্তু প্রতি বারই শক্তি প্রয়োগ করে তাদের বিদ্রোহ নৃশংস ভাবে দমন করা হয়েছে।

১৭৯১ সালের ২২ আগস্ট হাইতির দাসেরা তাদের মালিকদের উপর বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং গোটা উপনিবেশকে একটি যুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়। বিদ্রোহ ঘোষণার ১০ দিনের মধ্যে কৃষ্ণাঙ্গ দাসেরা সমগ্র উত্তর অংশের দখল নিয়ে নেয়। কিছু দিনের মধ্যে প্রায় ১০০০০০ দাস এই বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করে, প্রায় ৪০০০ শ্বেতাঙ্গ এই বিপ্লবের নৃশংসতার স্বীকার হয়। দেড় শতাধিক কারখানা ধ্বংস হয় । ১৭৯২ সালের মধ্যে বিপ্লবীরা সমগ্র দীপের ১/৩ দখল করে নেয়। বিপ্লবীদের এই সাফল্যে ফ্রান্সের ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলি খুব চিন্তিত হয়ে পড়ে। তারা নিজেদের অর্থনৈতিক স্বার্থের জন্য ১৭৯২ সালে যুদ্ধ বন্ধ ঘোষণা করে এবং কৃষ্ণাঙ্গদের সামাজিক এবং রাজনৈতিক অধিকার দিয়ে আইন পাস করে। কিন্তু স্বাধীনতার লড়াই থেমে থাকেনি। ফরাসি বিপ্লবের মূলমন্ত্র সাম্য- মৈত্রী – স্বাধীনতার বাণীতে উদ্বুদ্ধ হয়ে জ্যা জ্যাক ডেসালিনির নেতৃত্বে ১৮০৪ সালের ১ জানুয়ারি হাইতি স্বাধীনতা ঘোষণা করে। কিন্তু স্বাধীনতা ঘোষণার মাত্র ২ বছর পার হতে না হতেই ডেসালিনিকে আততায়ীর হাতে নির্মম ভাবে নিহত হতে হয়। এর পর থেকে প্রায় দুশো বছরের হাইতির ইতিহাস ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ ও রক্তাক্ত ইতিহাস। ডেসালিনির পর আরও পাঁচ জন রাষ্ট্রপ্রধান আততায়ীর হাতে নিহত হন। ক্যারিবীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে হাইতিই একমাত্র দেশ, যেখানে প্রথম কোনও দাসবিদ্রোহ জয়ী হয় এবং ঈপ্সিত স্বাধীনতা লাভ করে। এ কারণে হাইতির বিপ্লব ফরাসি বিপ্লবের মতোই গুরুত্ববহ।

উৎসঃ উইকিপিডিয়া  

 

লিখেছেন,

আব্দুল্লাহ আল আমিন

 

 

Leave a Reply