You are currently viewing তামিল টাইগার্স : শ্রীলংকায় রক্ত স্রোতের অজানা কাহিনী

তামিল টাইগার্স : শ্রীলংকায় রক্ত স্রোতের অজানা কাহিনী

শ্রীলংকা, ভারত মহাসাগরের মধ্যে অবস্থিত একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্র। ক্ষুদ্রাকৃতির দেশটি দীর্ঘ ২৬ বছর গৃহযুদ্ধে জর্জরিত ছিল। রক্তক্ষয়ী এই যুদ্ধে প্রাণ হারায় ১ লক্ষ নিরীহ শ্রীলংকান নাগরিক। বাসস্থান হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছিল তামিল অধ্যুষিত এলাকার অগণিত মানুষ। ইতিহাসের একমাত্র গৃহযুদ্ধ যার প্রভাবে প্রাণ হারায় দুটি স্বাধীন দেশের সর্বোচ্চ পদ ধারী সরকার প্রধান। রাবণের রাজ্য খ্যাত, শ্রীলংকার সেই ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ নিয়ে আজকের আয়োজন।

পূর্ব ইতিহাস:

শ্রীলংকা, ব্রিটিশ কলোনির অন্তর্গত একটি রাষ্ট্র ছিল। দেশটির উত্তর ও পূর্বাংশে ছিল তামিল ভাষাভাষীদের বসবাস  আর দক্ষিণ ও মধ্য ভাগ জুড়ে ছিল সিংহলিজ ভাষা ভাষীদের বসবাস। মোট জনসংখ্যার ৭০-৭৫% ই সিংহলিজ ভাষা ব্যবহার করত। অপরদিকে তামিল ছিল মাত্র ১৫% লোকের ভাষা। কিন্তু ব্রিটিশ শাসনামলে তামিলরা শিক্ষা ক্ষেত্রে বেশ অগ্রসর ছিল। সরকারী চাকুরীজীবীর ৮০% ই ছিল তামিলদের। শুধু সরকারী চাকুরী নয়, প্রায় সকল ক্ষেত্রেই তার একক আধিপত্য। তামিল ভাষাভাষীরা ছিল মূলত হিন্দু ধর্মাবলম্বী, বৌদ্ধরা ছিল সিংহলিজ ভাষাভাষী, বাকী ১০% ছিল মুসলিম ধর্মাবলম্বী। কিন্তু ১৯৪৮ সালে শ্রীলংকা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। স্বাধীনতা পরবর্তী সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠদের অধিকার আদায়ে সোচ্চার হয়। ১৯৫৬ সালে, সিংহলিজ ভাষাকে অফিশিয়াল ভাষা হিসেবে ঘোষণা দেয়। ফলে তামিলরা সরকারী চাকুরী হারাতে শুরু করে। কারণ তারা সিংহলিজ ভাষা জানত না। এই ঘটনা তামিলদের মনে গভীরভাবে প্রভাব ফেলে। তামিল মিডিয়াকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। স্কুল ও কলেজে তামিলদের শিক্ষাগ্রহণে কোটা আরোপ করে। তারা আগের মত শিক্ষাগ্রহণ করতে পারত না। সংহলিজদের সকল ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয় সরকার। সরকারের এই সকল সিদ্ধান্ত তামিলদের চূড়ান্তভাবে ক্ষুব্ধ করে তোলে। এসব কারণে বিভিন্ন সময়ে দাঙ্গা সংগঠিত হয়েছিল। ১৯৫৬, ৫৮, ৭৭, ৮৩ সালে বড় ধরনের দাঙ্গা সংগঠিত হয়েছিল। Tamil National Alliance(TNA) ছিল তামিলদের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দল। তারা তামিল রাজ্যকে একটি স্বতন্ত্র রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতির দাবী জানায়। তারা রাজনৈতিকভাবে দাবি আদায়ে সোচ্চার ছিল। কিন্তু শ্রীলংকা সরকার এসবে কোন কর্ণপাত করত না। শুরুতে তামিলরা শান্তি পূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ বেশ কয়েকটি উগ্র সংগঠনের উদ্ভব ঘটে যারা সরাসরি তামিল রাজ্য আলাদা রাষ্ট্র ঘোষণা করার দাবি তোলে। প্রায় ১৫ টি উগ্র সংগঠন গড়ে উঠেছিল। তাদের মধ্যে লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ইলম (LTTE), ছিল সবচেয়ে বড় ও সু সংগঠিত সংগঠন।

LTTE গঠন:

উগ্রবাদী সংগঠন LTTE,  ১৯৭৫ সালের ৫ মে গঠিত হয়। সংক্ষেপে তারা তামিল টাইগার্স নামেই অধিক পরিচিত। তামিল টাইগার্স ছিল অত্যন্ত সুসংগঠিত সংগঠন। এটির নেতৃত্বে ছিল ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণ। প্রভাকরণ, ফরাসি বিপ্লবের নায়ক নেপোলিয়নের আদর্শের দ্বারা প্রভাবিত ছিল। তামিল টাইগার্সদের লক্ষ্য ছিল স্বাধীন তামিল  রাষ্ট্র গঠন করা। পৃথিবীর অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনগুলো  থেকে  তামিল টাইগার্স ছিল সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। তাদের ছিল নিজস্ব সরকার, ব্যাংক, সেনাবাহিনী, নৌ ও বিমানবাহিনী। শ্রীলংকার আর্মিদের মত করেই তামিল টাইগার্সদের সেনাদের রেঙ্ক নির্ধারিত ছিল। একটি গেরিলা আক্রমণকে সফল করার জন্য প্রায় সবকিছুই ছিল তামিল টাইগার্সদের। রাজনৈতিক ও সামরিক উভয় শাখার নেতৃত্বে ছিল প্রভাকরণ। তামিলদের অর্থায়নের বড় উৎস ছিল প্রবাসী তামিলরা। তারা বিভিন্ন ভাবে টাইগার্সদের সার্বিক সহায়তা করত। সবচেয়ে বড় সমর্থন দিত, ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের সরকার ও সাধারণ জনগণ। তাছাড়া শ্রীলংকার সাথে বিবদমান দেশগুলো গোপনে তামিল টাইগার্সদের সাহায্য করত। প্রাথমিকভাবে, ভারত সরকার তাদের সামরিক ট্রেনিং ও সহায়তা করত। ধীরে ধীরে তামিল টাইগার্স অত্যন্ত শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে গড়ে উঠে। তারা স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবিতে গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়।

ইলম যুদ্ধ :

ইলম শব্দটির তাত্ত্বিক অর্থ হল রাষ্ট্র। তামিল টাইগার্স তাদের লড়াইকে ইলম যুদ্ধ বলে আখ্যায়িত করত। ১৯৮৩ সালের ২৩ জুলাই, তামিল টাইগার্স শ্রীলংকার সেনাবাহিনীর উপর সরাসরি আক্রমণ করে। অতর্কিত আক্রমণে ৫ সেনা কর্মকর্তা ও ৩৩ জন বেসামরিক  নাগরিক নিহত হয়। সেনা মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে শ্রীলংকাতে দাঙ্গা শুরু হয়ে যায়। দাঙ্গাতে প্রায় ৩ হাজার নিরীহ তামিল নাগরিক মারা যায়। এই ঘটনাকে শ্রীলংকাতে ব্ল্যাক জুলাই বলে অভিহিত করা হয়। এটাই ছিল তামিল টাইগার্সদের প্রথম বড় ধরনের আক্রমণ। হাজারো তামিল নাগরিক হত্যাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয় তামিল অঞ্চলগুলো। তারা মনে করেছিল সরকার ইচ্ছে করে তাদের উপর অত্যাচার চালাচ্ছে। এ সময় প্রচুর তামিল যুবক LTTE তে যোগদান করে। যা পরবর্তীতে তাদের যুদ্ধকে এগিয়ে নিতে অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। শুধু পুরুষ নয় তামিল টাইগার্সে যোগ দিয়েছিল নারী ও শিশু। ১৯৮৩ সাল থেকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত ভারত সরকার সরাসরি তাদের সাহায্য করত। বিশেষ করে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা RAW তামিলদের ভারতে ট্রেনিং ক্যাম্পের ব্যবস্থা করে। ৪৯৫ জন বিদ্রোহী, ৩২ টি ক্যাম্পে ট্রেনিং গ্রহণ করত। শ্রীলংকা সরকার বারবার ভারতের সংশ্লিষ্টতার কথা বললেও, বরাবরই ভারত তা অস্বীকার করে আসছিল। ১৯৮৪ সালে LTTE সহ অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনগুলো একত্রিত হয়ে একটি সাধারণ সংগঠন গড়ে তোলে যার নাম দেয় Eelam National Liberation Front গঠন করে।

তৃতীয় ইলম যুদ্ধ

১৯৯৫ সালে নৌবাহিনীর জাহাজ ডুবিয়ে দিয়ে বিদ্রোহীরা শুরু করে ‘তৃতীয় ইলম যুদ্ধ’। তবে শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনীর কাছে জাফনার নিয়ন্ত্রণ হারায় তামিল টাইগাররা। তখন থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত উত্তর-পূর্বাঞ্চলজুড়ে চলতে থাকে গৃহযুদ্ধ। ১৯৯৬ সালে কলম্বোয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আত্মঘাতী বোমা হামলা থেকে শুরু করে অসংখ্য মেয়র, পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে এলটিটিই বাহিনী। আর এভাবেই দেশের উত্তরাঞ্চলে তামিল বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত একটি স্বতন্ত্র অঞ্চল পরিচালনা শুরু করেন প্রভাকরণ। তৎকালীন কলম্বোয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আত্মঘাতী হামলায় নিহত হয় প্রায় ১০০ জন। টাইগারদের হামলায় আরও আহত হন প্রেসিডেন্ট চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা। অবশেষে ২০০২-এ নরওয়ের মধ্যস্থতায় সরকার ও বিদ্রোহীদের মধ্যে ঐতিহাসিক যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষর হয়। ২০০৪-২০০৫ সালে টাইগারদের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার কর্নেল করুনা আমান প্রায় ছয় হাজার যোদ্ধা নিয়ে এলটিটিই থেকে বেরিয়ে যান। সন্দেহভাজন টাইগারদের হামলায় নিহত হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী লক্ষণ কাদির গামার। সে সময় কট্টর এলটিটিই বিরোধী মাহিন্দা রাজাপক্ষে দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ২০০৬ সালের এপ্রিল থেকে আবারও শুরু হয় তুমুল যুদ্ধ। এতে বিশ্বনেতারা অক্টোবরে জেনেভায় নতুন করে আলোচনার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। কিন্তু ব্যর্থ হয় সে উদ্যোগ।

ভারত  শ্রীলংকা শান্তিচুক্তি :

১৯৮৭ সালে শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী জয়াবর্ধনে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে শান্তি চুক্তির প্রস্তাব দেয়। ভারত সরকার তামিলদের পক্ষে বেশ কয়টি দাবি জানিয়ে একটি চুক্তি সই করে।

দাবিগুলোর মধ্যে ছিল;

  • তামিল ভাষাকে স্বীকৃতি প্রদান
  • পুরো তামিল অঞ্চলকে এক সরকারের অধীনে রাখা
  • রাজ্য সরকারের ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করা
  • ভারতীয় বাহিনীকে শ্রীলংকায় প্রবেশের সুযোগ দেওয়া সহ ১৩ টি বিষয়ে চুক্তি হয়।

 চুক্তি অনুসারে ভারতীয় শান্তি রক্ষা বাহিনী শ্রীলংকায় প্রবেশ করে। ভারতের এই চুক্তিকে LTTE সমর্থন করে নি। তারা ভারতীয় বাহিনী অনুপ্রবেশের বিপক্ষে ছিল। রাজীব গান্ধীর এই  সিদ্ধান্ত তামিলদের ক্ষুব্ধ করে তোলে। তারা রাজীব গান্ধীকে তাদের শত্রু ভাবা শুরু করে এবং তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে। বাকী তামিল গেরিলা বিদ্রোহীগুলো শান্তি চুক্তি মেনে নিলেও তামিল টাইগার্স এই চুক্তির সম্পূর্ণ বিরোধী ছিল। ভারতীয় সেনাবাহিনী অপারেশন পাওয়ান নামে তামিলদের গুরুত্বপূর্ণ শহর জাফনা থেকে তামিল টাইগার্সদের বিতাড়িত করে। ফলে তামিল টাইগার্স ভারতীয় বাহিনীর উপর আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেয়। তারা জঙ্গলে পালিয়ে গিয়ে প্রস্তুতি গ্রহণ করতে থাকে। ১৯৮৭ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ভারতীয় বাহিনী অপারেশন পরিচালনা করে। এসময় তামিল টাইগার্সদের সাথে তাদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। ৩ বছরে প্রায় ১ হাজার ভারতীয় সৈন্য নিহত হয়। ১৯৮৯ সালে রাজীব গান্ধী সরকারের পতন হলে অপারেশন স্তিমিত হয়ে পড়ে। অপরদিকে শ্রীলংকার জনগণও তাদের ভূমিতে ভারতীয় বাহিনীর আগমনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠে ফলে শ্রীলংকা সরকারের অনুরোধে ভারত ১৯৯০ সালে শান্তি বাহিনী সরিয়ে নিয়ে যায়। ভারতীয় সেনা বাহিনীর সাথে লড়াইয়ে তামিলদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। ১৯৯১ সালে আসন্ন ভারতীয় নির্বাচনে রাজীব গান্ধীর জয়ের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তামিল টাইগার্স রাজীব গান্ধীকে হত্যার পরিকল্পনা করে। ১৯৯১ সালের ২১ মে, তামিলনাড়ু রাজ্যে এক নির্বাচনী প্রচার সভার ফুলের মালা গ্রহণের সময়, মালার মধ্যে থাকা বোম বিস্ফোরণে নিহত হয় রাজীব গান্ধী। LTTE এর সদস্য, এক নারী এই আত্মঘাতী হামলা চালায়। এটি ছিল তামিল টাইগার্সদের দ্বারা সবচেয়ে বড় হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। এই ঘটনার পর থেকে তৎকালীন ভারতে বড় নেতারা ফুলের মালা গ্রহণ করত না।

শুধু ভারতেরই না, ১৯৯৩ সালে শ্রীলংকার তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রেমাদাসকে, মে দিবসের এক র‍্যালীতে আত্মঘাতী হামলা করে হত্যা করে। এই হত্যাকাণ্ড শান্তি চুক্তিকে লন্ড ভন্ড করে দেয়। সরকার দলীয় বিভিন্ন দায়িত্ব প্রাপ্ত সচিব, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বর্গকে একের পর এক হত্যা করতে থাকে তামিল টাইগার্স। ২৬ বছরে তারা ৭ জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীতে হত্যা করে। এমনকি তামিল অঞ্চলে যারা সরকারের পক্ষ অবলম্বন করত তাদেরকেও হত্যা করে তামিল টাইগার্স। ১৯৯৯ সালে তারা প্রধানমন্ত্রী চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গার উপর হামলা করে। যদিও তখন তিনি বেঁচে যান, তবে তার একটি চোখ নষ্ট হয়ে ৯০ দশকে বিভিন্ন সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে শান্তি চুক্তির প্রস্তাব দিলেও LTTE তা প্রত্যাখ্যান করে। প্রভাকরণ বেলেছিল, “শান্তি চুক্তি আমাদের লক্ষ্য অর্জনের পথে সিঁড়ি স্বরূপ”। তামিলরা গেরিলা পদ্ধতিতে বিভিন্নভাবে হামলা অব্যাহত রাখল। যে সকল নিরীহ নাগরিক তামিল অঞ্চল ছেড়ে চলে যেতে চাইত, তামিল টাইগার্স তাদের রুখে দিত। কারণ তারা বিশ্বাস করত নিরীহ জনগণ থাকলে সেনাবাহিনী তাদের উপর আক্রমণের সুযোগ কমে আসবে। ২০০১ সালে আমেরিকা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং যেসব দেশে সন্ত্রাসী সংগঠন ছিল তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য অর্থ ও সামরিক সাহায্যের ঘোষণা দেয়। যদিও LTTE মনে করত তারা কোন ধর্মের নামে যুদ্ধ করত না। প্রভাকরণ বলেছিল তারা কোন সন্ত্রাসী সংগঠন না। তারা শুধু স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে। একই বছর তারা কলম্বোর বিমান বন্দরে আক্রমণ করে। যা বহু লোকের প্রাণ হানি ঘটায়। এই হামলা শ্রীলংকার অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে। পর্যটন শিল্প বিপদের মুখে পড়ে যায়। ২০০২ নরওয়ের প্রচেষ্টায় সরকার ও তামিল টাইগার্সদের মধ্যে শান্তি আলোচনা শুরু হয়। আলোচনা চলা কালেও সেনাবাহিনীর সাথে লড়াই চলতে থাকে। যুদ্ধ বিরতিতে উভয় পক্ষ সম্মত হয়। ২০০২-০৪ পর্যন্ত আলোচনা চলতে থাকে। তামিল বিদ্রোহীরা রাজ্য সরকারের ক্ষমতা বৃদ্ধির দাবি তোলে। অপরদিকে সরকারও দাবি মেনে নিতে সম্মত ছিল। হঠাৎ তামিল বিদ্রোহীরা শান্তি আলোচনা বন্ধ করে দেয়। তারা দাবি করে যে, সেনাবাহিনী অন্যায়ভাবে তাদের উপর আক্রমণ করেছে। ২০০৪ সালে, তামিল টাইগার্সদের মধ্যে বিভাজন দেখা হয়। পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার করোনা, সৈন্য সহ সরকারের পক্ষে চলে যায়। একই সময় সুনামির আক্রমণে বেশ ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি হয় LTTE। তামিল টাইগার্স বেশ দুর্বল হয়ে পড়ে। ২০০৫ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয় মাহিন্দ্রা রাজাপাকসে। একই বছর পররাষ্ট্র মন্ত্রীকে হত্যা করে তামিল টাইগার্স। যিনি নিজেও একজন তামিল ছিলেন। এভাবে লড়াই চলতে থাকে। সরকার সিদ্ধান্ত নিল, তারা ব্যাপক ভাবে তৎপরতা চালাবে। সেই অনুযায়ী অভিযান চলতে থাকে। ২০০৯ সালের  মে মাসে সেনাবাহিনী পুরোপুরি ভাবে তামিল টাইগার্সদের ঘিরে ফেলে। সব কিছু সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। ১৮ মে, প্রভাকরণের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শেষ হয় দীর্ঘ ২৬ বছরের রক্ত বন্যার ইতিহাস। ১৯৮৩ সালের ২৩ জুলাই শ্রীলঙ্কার তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীরা উত্তরাঞ্চলে ১৩ জন সৈন্যকে হত্যার মাধ্যমে শুরু করে দেশটির রক্তাক্ত ইতিহাস। দীর্ঘ ২৬ বছর চলে এই গৃহযুদ্ধ। যার অবসান ঘটে ২০০৯ সালে। এই দীর্ঘ সময়জুড়ে হওয়া গৃহযুদ্ধ শুধু শ্রীলঙ্কাতেই নয়, এর প্রভাব পড়েছিল আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও। একসময় সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসেন বিশ্বনেতারাও। বিদ্রোহী তামিল টাইগার নেতা প্রভাকরণের মৃত্যু যবনিকা টানে এই গৃহযুদ্ধের—

তামিল টাইগার নেতা প্রভাকরণের মৃত্যু

শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনীর বিশেষ কমান্ডো সেনারা লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ইলম-এর প্রতিষ্ঠাতা প্রধান প্রভাকরণকে হত্যা করে বলে দেশটির সেনাসূত্রগুলো এ দাবি করে। আরও বলা হয়, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালানোর চেষ্টার সময় তাকে হত্যা করা হয়। মৃত্যুর সময় ৫৪ বছর বয়সী এই দুর্ধর্ষ গেরিলা নেতা অঙ্গীকার করেছিলেন তিনি কখনই জীবিত অবস্থায় ধরা পড়বেন না। সেনাবাহিনীর একটি সূত্র উল্লেখ করে, আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা রয়টার্স নিশ্চিত করে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে পালিয়ে যাওয়ার সময় প্রভাকরণকে হত্যা করা হয়। শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন এর আগেই প্রথমবারের মতো প্রভাকরণের ছেলে এবং অন্য শীর্ষ নেতাদের নিহত হওয়ার খবর ও ছবি প্রকাশ করে। এর একদিন আগেই শ্রীলঙ্কার সামরিক বাহিনী পুরো উপকূলীয় এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়। এলটিটিইকে পরাজিত করার ঘোষণা করেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষে।

লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ইলম

১৯৭৩ মতান্তরে ১৯৭৪ সালে প্রভাকরণ ‘তামিল নিউ টাইগার্স’ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম অবস্থায় এ সংগঠনটি তামিলদের প্রান্তিক নানা অবস্থার প্রতিবাদকারী একটি সংগঠনের মতো কাজ করলেও এক বছর পর এটি লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ইলম বা এলটিটিই নামে প্রতিষ্ঠা পায়। এর পরই সংগঠনটির বিরুদ্ধে জাফনার মেয়রকে হত্যার অভিযোগ ওঠে। তারপরই টাইগাররা ১০ হাজারেরও বেশি সদস্যের দুর্ধর্ষ বিশাল বাহিনীতে পরিণত হয়। স্থানীয়ভাবে ব্যাপক জনপ্রিয় প্রভাকরণের সঙ্গে পুরুষদের পাশাপাশি বহু নারী ও শিশুও যোগ দেয়। বিশাল একটা অংশের নেতৃত্বের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের জন্য একটি আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক গড়ে তোলেন প্রভাকরণ।  ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ইলমের নিজস্ব স্থল, নৌ ও বিমান বাহিনী। আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় তামিল টাইগার নামেই পরিচিতি পায় সংগঠনটি।

দীর্ঘ ২৬ বছরের গৃহযুদ্ধ

১৯৮৩ সালের জুলাই মাসকে শ্রীলঙ্কানরা বলে ‘ব্ল্যাক জুলাই’ বা ‘কালো জুলাই’। এ মাসেরই ২৩ তারিখ তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীরা দেশটির উত্তরাঞ্চলে ১৩ জন সৈন্যকে হত্যা করে। এটাই ছিল তামিল টাইগারদের প্রথম আক্রমণ। আর এর মাধ্যমেই শ্রীলঙ্কার রক্তাক্ত ইতিহাসের শুরু। প্রতিশোধ হিসেবে সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহলি সম্প্রদায়ের উত্তেজিত জনতা পাল্টা হামলা চালায়। যার ফলে নিহত হয় তামিল সম্প্রদায়ের প্রায় তিন হাজারেরও বেশি মানুষ। এর পর এই গৃহযুদ্ধ চলে দীর্ঘ ২৬ বছর। নিহত হয়েছে প্রায় এক লাখ মানুষ।  দেশ ছাড়তে বাধ্য হয় হাজার হাজার তামিল। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে একটি স্বাধীন তামিল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ইলম। ওই ঘটনাকে যুদ্ধ শুরু বলে অভিহিত করে।

ভারতের হস্তক্ষেপ

তামিল টাইগারদের অস্ত্র সরবরাহ করত বলে অনেকে দাবি করলেও ১৯৮৭ সালে শান্তি স্থাপনে শ্রীলঙ্কায় সেনা পাঠায় ভারত। কিন্তু অস্ত্র সমর্পণে অস্বীকৃতি জানায় টাইগাররা। শুরু হয় ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ। এ যুদ্ধে নিহত হয় এক হাজার ভারতীয় সেনা। পরবর্তীতে ১৯৯০ সালে ভারত সরকার সেনা প্রত্যাহার করে নেয়। শ্রীলঙ্কা ২০১৩ সালে দেশটির ২৬ বছর স্থায়ী গৃহযুদ্ধের জন্য ভারতের সাবেক সরকারকে দায়ী করেছে। শ্রীলঙ্কার প্রতিরক্ষা সচিব গোটাভায়া রাজাপাকসে স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের কাছে এ বক্তব্য দেন।  শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধের শেষ ১০০ দিনে সরকারি বাহিনী সেনা অভিযান চালানোর সময় যুদ্ধাপরাধ করেছে বলে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে— জাতিসংঘে ভারতের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি হারদীপ সিং পুরি এমন বিবৃতি দিয়েছিলেন।  

তামিল টাইগারদের পরাজয়

২০০৭ সালে পূর্বাঞ্চলে তামিল টাইগারদের শক্ত ঘাঁটি দখল করে নেয় শ্রীলঙ্কান সেনাবাহিনী। এর পরের বছরের শুরুতেই যুদ্ধবিরতি অকার্যকর ঘোষণা করে সরকার এবং বড় ধরনের যুদ্ধাভিযান শুরু করে শ্রীলঙ্কান সেনাবাহিনী। চলমান সে যুদ্ধের মধ্য দিয়ে টাইগারদের ঘোষিত রাজধানী কিলোনাচ্চি দখল করে নেয় তারা। সামরিক বাহিনীর আগ্রাসী আক্রমণে ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পরে তামিল টাইগাররা। তাদের আত্মসমর্পণের জন্য ২৪ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেয় শ্রীলঙ্কা সরকার এপ্রিলের ২০ তারিখ। এক সপ্তাহের মধ্যে প্রায় এক লাখ ১৫ হাজার সাধারণ মানুষ যুদ্ধাঞ্চল থেকে পালিয়ে আসে। মে মাসের ১৬ তারিখ প্রথমবারের মতো সমগ্র উপকূলসীমার নিয়ন্ত্রণ নেয় সেনাবাহিনী। সে সময় জর্ডান সফররত প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষে দাবি করেন, এলটিটিই পরাজিত হয়েছে। তখন বেসামরিক নাগরিকের বেশ ধরে প্রচুর তামিল টাইগার সৈন্য নৌকা করে পালানোর সময় নিহত হয়। এ ছাড়া আরও অনেকে আত্মঘাতী হামলার মাধ্যমে প্রাণ বিসর্জন দেয়। সেই যুদ্ধ এলাকার সব বেসামরিক নাগরিককে মুক্ত করার ঘোষণা দেয় সেনাবাহিনী।

রাজীব গান্ধীর মৃত্যু

১৯৯১ সালে সন্দেহভাজন এলটিটিইর আত্মঘাতী হামলায় নিহত হন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী। দুই বছর পরে আরেকটি আত্মঘাতী হামলায় নিহত হন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রানাসিংহে প্রেমাদাসা। দুটি হামলার জন্যই এলটিটিইকে দায়ী করা হয়। ১৯৯১ সালে চেন্নাইয়ের কাছে আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে হত্যার জন্য প্রভাকরণকে দায়ী করা হয়। বলা হয়, আশির দশকের মাঝামাঝিতে শ্রীলঙ্কায় ভারতীয় শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের প্রতিশোধ নিতে রাজীব গান্ধীকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রভাকরণ। এর পরই ভারতের আদালত প্রভাকরণের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। সেই সঙ্গে সন্ত্রাসবাদ, খুন ও সংঘটিত নানা অপরাধের অভিযোগে ইন্টারপোলের ‘ওয়ান্টেড’ তালিকায় নাম ওঠে প্রভাকরণের। এতে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন প্রভাকরণ। এরপরই ১৯৯৩ সালে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রানাসিংহে প্রেমাদাসাকে হত্যা করা হয়। 

নায়ক নাকি ভিলেন

প্রভাকরণকে ‘সূর্যদেবতা’ বলে ডাকত তার সমর্থকরা। অবশ্য তার বিরোধীরা তাকে অত্যন্ত নির্দয় বলেও অভিহিত করত। ইতিহাস বলছে, দেশের এবং দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক নেতাদের হত্যার পেছনের কারিগর তিনি। একদিকে বীর যোদ্ধা হিসেবে খ্যাতি, অন্যদিকে ভয়ঙ্কর ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে তার কুখ্যাতি। ইতিহাসের পাতায় এভাবেই লেখা হয়েছে প্রভাকরণের নাম। ভারতের আদালত থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল প্রভাকরণের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। তবে ইন্টারপোলের নথি থেকে জানা যায়, প্রভাকরণ এমন এক ব্যক্তি যিনি যে কোনো মুহূর্তে ছদ্মবেশ ধারণ করতে সক্ষম ছিলেন এবং আধুনিক সমরাস্ত্র ও বিস্ফোরক ব্যবহারে অত্যন্ত  পারদর্শী ছিলেন। ১৯৫৪ সালের ২৬ নভেম্বর জাফনা উপদ্বীপের উত্তরে অবস্থিত উপকূলীয় শহর ভেলভেত্তিয়াথুরাইতে জন্মগ্রহণ করেন প্রভাকরণ। মা-বাবার চার সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন সবচেয়ে ছোট। আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট ও নেপোলিয়ানসহ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের দুই প্রবাদ পুরুষ সুভাষ চন্দ্র বসু এবং ভগত সিং দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিলেন প্রভাকরণ।

জনসংখ্যা শিক্ষার হার

২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী শ্রীলঙ্কার জনসংখ্যা প্রায় ২১ কোটি ২০ লাখ ৩  হাজার। উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে শ্রীলঙ্কা সর্বোচ্চ সাক্ষর জনসংখ্যার একটি দেশ। যার সাক্ষরতার হার শতকরা ৯২ শতাংশ। যার মধ্যে ৮৩% মানুষ মাধ্যমিক শিক্ষায় শিক্ষিত। শ্রীলঙ্কায় শিশুদের ৯ বছর মেয়াদি বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. সি. ডব্লিউ. ডব্লিউ কান্নানগারা শিক্ষা ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কার ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করেন। ১৯৪৫ সালে তার প্রণীত অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থা শ্রীলঙ্কার সাক্ষরতায় বিরাট অবদান রাখে। সাবেক এই শিক্ষামন্ত্রী শ্রীলঙ্কার প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে একটি করে মাধ্যমিক মহাবিদ্যালয় স্থাপন করেন। এর আগে ১৯৪২ সালে বিশেষ শিক্ষা কমিটি একটি যোগ্য ও মানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য প্রস্তাব করে। বিদ্যালয়গুলোতে গ্রেড ওয়ান থেকে থার্টিন পর্যন্ত পাঠদান ব্যবস্থা করা হয়। ‘ও’ লেভেল এবং ‘এ’ লেভেল পরীক্ষা যথাক্রমে ১১ এবং ১৩ গ্রেডে অনুষ্ঠিত হয়। শ্রীলঙ্কার শিক্ষা ব্যবস্থায় বেশির ভাগ বিদ্যালয়ই ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থার অনুকরণে গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে পর্যাপ্ত সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয়ের পাশাপাশি অনেক আন্তর্জাতিক মানের বিদ্যালয়ও গড়ে উঠেছে। শ্রীলঙ্কায় প্রায় ১৬টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। তার মধ্যে কলম্বো বিশ্ববিদ্যালয়, পেরাদেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, কেলানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, জয়াবর্ধনপুরা বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম।

সামরিক বাহিনী

স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে শ্রীলঙ্কা সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত। বিশ্ব পরিমণ্ডলে শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর তালিকায় সেরার তকমা না পেলেও গোটা বিশ্বে একটি শক্তিশালী সামরিক বাহিনী হিসেবেই পরিচিত। শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে কোনো ধরনের সামরিক শাসন জারি না হলেও দেশটিতে সক্রিয় সেনার সংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার। যার বদৌলতে দেশটি যে কোনো সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম। পাশাপাশি দেশটির সামরিক বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের আরও দুটি আধাসামরিক বাহিনী আছে। একটি  স্পেশাল টাস্কফোর্স এবং অন্যটি সিভিল ডিফেন্স ফোর্স। শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে প্রতিটি বাহিনীই দেশপ্রেম ও ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিল। ১৯৪৮ সালে যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর থেকেই সামরিক বাহিনীর প্রধান কাজ ছিল অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাবলয় বজায় রাখা।  যার সিংহভাগই আছে এলটিটিইর সঙ্গে দীর্ঘ ২৬ বছরের যুদ্ধ। প্রভাকরণের মৃত্যুর মাধ্যমে এ যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক

শ্রীলঙ্কাকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে খুব একটা দেখা না গেলেও ১৯৭৭ সাল থেকে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করছে। দেশটি জাতিসংঘের সঙ্গে যুক্তের পাশাপাশি কমনওয়েলথ, সার্ক, বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন তহবিল, এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক এবং কলম্বো পরিকল্পনার সদস্য দেশ হিসেবে বিশ্ব পরিমণ্ডলে বেশ প্রশংসিত হয়ে আসছে।

অর্থনীতি

প্রাচীনকাল থেকেই শ্রীলঙ্কা বাণিজ্যিক রাষ্ট্র হিসেবে বণিকদের কাছে পরিচিতি পেয়ে আসছে। মধ্যপ্রাচ্য, পারস্য, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার বহু বণিক এখানে বাণিজ্য করতে আসতেন। সেই থেকেই দেশটি অর্থনীতিতে বেশ সমুজ্জ্বল। শ্রীলঙ্কা বিশ্বের বুকে চিনামন, রাবার, সিলন চা রপ্তানির জন্য ব্যাপক বিখ্যাত। যদিও উপনিবেশরা চা, রাবার, জুম, নীলের চাষ শুরু করেছিলেন। ব্রিটিশদের শাসনামল থেকেই দেশটি আধুনিক বন্দরের সুবিধা পেয়ে আসছে। আর সেই আধুনিক সমুদ্রবন্দর স্থাপন করে দিয়েছিল ইংরেজরা। শ্রীলঙ্কার আবাদভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা দেশের দারিদ্র্য ও অর্থনৈতিক অসমতাকে বৃদ্ধি করছে। ১৯৪৮ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত সমাজতান্ত্রিকতা সরকারের অর্থনীতিকে মারাত্মক প্রভাবিত করেছে। সে সময় উপনিবেশিক চাষাবাদ ভেঙে পৃথক করা হয়েছে এবং শিল্প-কলকারখানাকে জাতীয়করণ করা হয়। এখানকার জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে নিম্ন উৎপাদন হার ও কম বৈদেশিক বিনিয়োগের চাহিদা ও প্রবৃদ্ধি দিন দিন বাড়তে থাকে। ১৯৭৭ সালের পর শ্রীলঙ্কার রাজ্য সরকার বেসরকারিকরণকে উৎসাহিত করে নানা পদক্ষেপ নেয়। চা, কফি, চিনি, রাবার এবং অন্যান্য কৃষি পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি সমহারে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাই সরকারিভাবে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ, বস্ত্রশিল্প, টেলিযোগাযোগ এবং শিল্পভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হয়। ১৯৯৬ সালে কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানি কমে দাঁড়ায় ২০% (যেখানে ১৯৭০ সালে ছিল ৯৩%)অপরদিকে বস্ত্র ও গার্মেন্ট ক্ষেত্রে বেড়ে দাঁড়ায় ৬৩%। ১৯৯০-এর দশকের শুরুর দিকে জিডিপি ছিল ৫.৫% যা ১৯৯৭-২০০০ সালে দাঁড়ায় ৫.৩%। ২০০৩ সালে কলম্বো স্টক এক্সচেঞ্জ বিশ্বের সর্বোচ্চ উৎপাদনশীল হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করে এবং দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ মাথাপিছু আয়ের দেশের তকমা অর্জন করে শ্রীলঙ্কা।

যুদ্ধপরবর্তী অবস্থা

২০০৯ সালে দীর্ঘ ২৬ বছরের গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটে। উত্তরের তামিলরা ১৮ মে দিনটিকে নীরব গুমোট আবহাওয়ায় মৃত্যু দিবস হিসেবেই পালন করে। আর কলম্বোতে দিনটিকে বিবেচনা করা হয় বিজয় দিবস হিসেবে। সামরিক বাহিনী-সংশ্লিষ্ট অনেক অনুষ্ঠানও হয়ে থাকে দিনটিতে। সেটা ছিল লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ইলম বা এলটিটিইর শেষ দুর্গ। নন্দিকাদল খাড়ি আর বঙ্গোপসাগরের মাঝখানে থাকা উত্তর-পূর্ব শ্রীলঙ্কার মুল্লিওয়াইক্কিল নামে ছোট্ট ভূখণ্ডটি ছিল লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ইলম বা এলটিটিইর শেষ দুর্গ। দারিদ্র্যপীড়িত এ অঞ্চলের মানুষগুলো মাছ ধরে জীবিকানির্বাহ করে। অথচ এলাকাটি যুদ্ধ শেষের আট বছর পরও বিধ্বস্তই রয়ে গেছে। এখনো সেখানকার মানুষ বোমায় বিধ্বস্ত বাড়িগুলোতে বসবাস করছে। ভয়াবহ ওই গৃহযুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত যেসব এলাকা রয়েছে এটি তার একটি। সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষের আমলে তামিলদের দুর্দশার কাহিনী প্রকাশ্যে আসতে পারত না। সে সময় তাদের অবস্থা ছিল ভয়াবহ শোচনীয়। তবে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনার আমলে অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন ঘটেছে। তামিলদের শোচনীয় অবস্থার কথা গণমাধ্যমে উঠে আসছে। তবে নর্দার্ন প্রভিন্সের মুখ্যমন্ত্রী সি ভি বিগনেশ্বরন এবার শোক দিবস পালনের একটি উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন। যা আদালতের নির্দেশে সম্ভব হয়নি। এই মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেছিলেন, যুদ্ধাপরাধীরা শাস্তি পাক বা না পাক, আন্তর্জাতিক তদন্ত হলে সত্যিকারের কাহিনী বের হয়ে আসবে। কথিত ‘বিশ্বাসযোগ্য’ ভাষ্যের ভিত্তিতে জাতিসংঘ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৬-২০০৯ সালের গৃহযুদ্ধে” প্রায় ৪০ হাজার বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, শ্রীলঙ্কার উচিত ছিল যুদ্ধের পরপরই উভয় পক্ষের আস্থা সৃষ্টির লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণ করা। বিশেষ করে সাবেক প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষের বিখ্যাত উক্তি ‘আর কোনো সংখ্যালঘু থাকবে না’ মন্তব্য করেছিলেন। এর রেশ ধরে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেত সহজেই। রাজাপক্ষে যদিও বিশাল বিশাল প্রকল্প হাতে নিয়েছিলেন।  কিন্তু এসব প্রকল্প সিংহলি ও তামিলদের মধ্যকার ব্যবধান কমাতে খুব বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি।

শ্রীলঙ্কা সংকট সমাধান কোন পথে?

শ্রীলঙ্কার ক্ষমতাসীন জোটে ভাঙনের পর প্রেসিডেন্ট মাইত্রিপালা সিরিসেনা প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমা সিংহকে বরখাস্ত করলে শুরু হয় রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সংকট। সিরিসেনা নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছেন মাহিন্দা রাজাপক্ষেকে। কিন্তু বিক্রমা সিংহ এই পদক্ষেপকে অবৈধ ও অসাংবিধানিক জানিয়ে দায়িত্ব ছাড়তে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। পার্লামেন্টের অধিবেশন স্থগিত করায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রতিষ্ঠার পথও বন্ধ। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে দলবদলের পালা, পাল্টাপাল্টি হুমকি ও শক্তি প্রদর্শন। যত সময় গড়াচ্ছে সংকট নতুন মোড় নিচ্ছে।

ঘটনার সূত্রপাত

২০১৫ সালের নির্বাচনে বিক্রমা সিংহের নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) জোট পায় ১০৬ আসন। সিরিসেনার নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপলস ফ্রিডম অ্যালায়েন্স (ইউপিএফএ) পায় ৯৬ আসন। এই দুই জোট মিলে জাতীয় সরকার গঠন করেছিল। ২৬ অক্টোবর সকালে ইউপিএফএ জাতীয় ঐক্য সরকার থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নেন। প্রধানমন্ত্রী বিক্রমা সিংহ ইউপিএফএর জোটের সঙ্গে ঐক্য গড়ে ক্ষমতায় ছিল। ওই দিনই সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট মাইত্রিপালা সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষেকে প্রধানমন্ত্রী মনোনয়ন দেন। প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ে সিরিসেনা ও সামরিক বাহিনীর প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে শপথ নেন রাজাপক্ষে। প্রধানমন্ত্রী বিক্রমা সিংহ তখন দক্ষিণাঞ্চল সফরে। মন্ত্রিসভার কয়েকজন সদস্য এই পদক্ষেপকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করলে পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়ে। জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বিক্রমা সিংহ বলেন, এখনো আমার প্রতি পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন রয়েছে। অধিবেশন বসুক—আমি তা প্রমাণ করব। পরদিন ২৭ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট এক আনুষ্ঠানিক চিঠিতে বিক্রমা সিংহের বরখাস্তের সিদ্ধান্ত জানান। বিক্রমা সিংহ তা প্রত্যাখ্যান করে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে ওঠেন ও তা ছাড়তে অস্বীকৃতি জানান। ওই দিনই পার্লামেন্টের অধিবেশন ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করেন প্রেসিডেন্ট।

রাজনীতির অতীতবর্তমান

গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য রয়েছে শ্রীলঙ্কার। ৪ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৮ ব্রিটিশ উপনিবেশের কাছ থেকে অধিরাজ্য হিসেবে স্বাধীনতা লাভ করে দেশটি। ২৪ বছর পর ১৯৭২ সালের ২২ মে পূর্ণতা পায় প্রজাতন্ত্র হিসেবে। কয়েক দশক ধরে শ্রীলঙ্কার প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল ছিল সমাজতান্ত্রিক ঘরানার শ্রীলঙ্কার ফ্রিডম পার্টি (এসএলএফপি) এবং রক্ষণশীল ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টি (ইউএনপি)। ২০০৫ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট কুমারাতুঙ্গার মেয়াদ মীমাংসায় সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়। এতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এসএলএফপির রাজাপক্ষে ও ইউএনপির রনিল বিক্রমা সিংহ। ৫০.৩ শতাংশ ভোট পেয়ে দেশটির পঞ্চম নির্বাহী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন রাজাপক্ষে। ২০১৫ সালের নির্বাচনে বিক্রমা সিংহের কাছে পরাজিত হয়ে ক্ষমতা ছাড়েন রাজাপক্ষে। ১৯৩১ সালে শ্রীলঙ্কায় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর বিক্রমা সিংহকে বরখাস্তের ঘটনাটিকে প্রথম অবৈধ ক্ষমতা হস্তান্তর হিসেবে উল্লেখ করছেন বিশ্লেষকরা।

সংকটের নেপথ্যে

গত ২৭ অক্টোবর রাতে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা এক ভাষণে জানান, তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্রের কারণেই রাজাপক্ষেকে নিয়ে নতুন সরকার গঠনের কারণ। তিনি দাবি করেন, সিআইডির তদন্তে হত্যা ষড়যন্ত্রে ফিল্ড মার্শাল সারাথ ফনসেকার নাম উঠে এসেছে। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে তা ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে।

সিরিসেনারাজাপক্ষে পুনর্মিলন

২০০৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত শ্রীলঙ্কাকে নেতৃত্ব দেন রাজাপক্ষে। ২০১৫ সালের নির্বাচনে রাজাপক্ষেকে পরাজিত করতে বিক্রমা সিংহের সঙ্গে জোট বেঁধেছিলেন সিরিসেনা। রাজপক্ষে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ আনেন সিরিসেনার বিরুদ্ধে। কারণ তাঁরা একই রাজনৈতিক দলের হলেও তাঁকে হারানোর জন্য বিক্রমা সিংহের সঙ্গে জোট বাঁধেন সিরিসেনা। পুরনো মিত্র থেকে শত্রুতে পরিণত হওয়া রাজাপক্ষের সঙ্গেই আবার জোট বাঁধলেন সিরিসেনা।

সংবিধান কার পক্ষে

শ্রীলঙ্কার বেশ কয়েকজন সংবিধান বিশেষজ্ঞ মনে করেন, প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত করা বৈধ নয়। তিন বছর আগের সংশোধনী অনুসারে প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্তের এখতিয়ার নেই প্রেসিডেন্টের। ড. নিহাল জয়বিক্রমের মতে, ‘১৯তম সংশোধনীতে প্রেসিডেন্টের প্রায় সব নির্বাহী ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সাংবিধানিকভাবে একমাত্র পার্লামেন্টই পারে প্রধানমন্ত্রীকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে।’ প্রেসিডেন্ট সংবিধানের যে ধারার কথা তুলেছেন, সেটির ন্যায্যতা সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞরা।

চলছে উত্থানপতন

শপথ নিলেও প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে উঠতে পারেননি রাজাপক্ষে। তবে থেমে নেই সরকারি কর্মকাণ্ড। এগিয়ে চলেছে মন্ত্রিসভা গঠনও। এদিকে ১১৮ জন আইনপ্রণেতা স্পিকারের কাছে সিরিসেনার পদক্ষেপকে অসাংবিধানিক উল্লেখ করে পার্লামেন্টের অধিবেশন শুরুর আহ্বান জানান।

সমাধান কোন পথে

এই সাংবিধানিক সংকটের সমাধান একমাত্র পার্লামেন্টেই হতে পারে বলে মনে করছেন বিক্রমা সিংহের দলের নেতারা। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পার্লামেন্টে রাজাপক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারার কারণেই সিরিসেনা অধিবেশন পিছিয়ে দিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে বিক্রমা সিংহের দল থেকে এমপিদের দলবদলের চেষ্টা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে পাঁচজনকে দলবদলে সক্ষম হয়েছেন রাজপক্ষে। দেশটির সংসদে মোট আসন হয়েছে ২২৫টি। প্রধানমন্ত্রীকে অপসারণে ১১৩ জন সদস্যের ভোট প্রয়োজন। ১৬টি আসনের তামিল ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স রাজাপক্ষের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। অবশিষ্ট ছয়টি আসনের পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট জানিয়েছে, তারা কোনো পক্ষকে সমর্থন জানাবে না। পার্লামেন্টের স্পিকার বলেছেন, অহিংস উপায়ে তিনি সংকট সমাধানের জন্য চেষ্টা করছেন। কিন্তু যদি তিনি ব্যর্থ হন, তাহলে বিকল্প পদক্ষেপ বিবেচনা করবেন

লেখকঃ

নাজমুন নাহার

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

Leave a Reply