You are currently viewing মাইকেল মধুসূদন দত্ত

মাইকেল মধুসূদন দত্ত

মাইকেল মধুসূদন দত্ত

মাইকেল মধুসূদন দত্ত আধুনিক বাংলা সাহিত্যের প্রথম বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত। তিনি ঊনবিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালি কবি, নাট্যকার এবং প্রহসন রচয়িতা। ব্রিটিশ ভারতের যশোর জেলার এক সম্ভ্রান্ত কায়স্থ বংশে ১৮২৪ সালে জন্ম গ্রহণ করেন।১৮৪৩ সালে মিশন রো-তে অবস্থিত ওল্ড মিশন চার্চ নামক এক অ্যাংলিক্যান চার্চে গিয়ে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন।তখন থেকেই তার নামের পূর্বে “মাইকেল” যুক্ত হয়।সেই সময় তার এই ধর্মান্তর ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলো।মধুসূদনের বাবা রাজ নারায়ণ দত্ত ছেলের এই ধর্মান্তরের জন্য তাকে ত্যাজ্যপুত্র করেন।খ্রিস্টধর্ম গ্রহণের পর তিনি বিশপস কলেজে পড়াশোনা করেন।এখানে তিনি গ্রিক,লাতিন,সংস্কৃত প্রভৃতি ভাষা শিখেন।মাতৃভাষা ছাড়াও তিনি আরো ১২টি ভাষা জানতেন।

বিশপস কলেজে পড়াকালীন মাদ্রাজের কয়েকজন ছাত্রের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়।কলকাতায় চাকরির চেষ্টায় ব্যার্থ হলে সেই বন্ধুত্বের সূত্রেই তিনি মাদ্রাজ চলে যান। কথিত আছে- আত্মীয় স্বজনের অজান্তে নিজের পাঠ্যপুস্তক বিক্রি করে সেই টাকায় তিনি মাদ্রাজে গিয়েছিলেন।মাদ্রাজে গিয়ে স্থানীয় খ্রিস্টান ও ইংরেজদের সহায়তায় একটি স্কুলে ইংরেজি শিক্ষকের চাকরি পান।তার জীবন যাপন ভালোই চলছিলো।সেই সময় তিনি ইংরেজি পত্রপত্রিকায় লেখালেখি শুরু করেন।মাদ্রাজ ক্রনিকল এবং হিন্দু ক্রনিকল দুটি পত্রিকায় ছদ্মনামে তিনি যথাক্রমে লেখালেখি এবং সম্পাদনার কাজ করতেন।কিন্তু অর্থাভাবে তা বন্ধ করে দিতে হয়।পঁচিশ বছর বয়সে নিদারুণ দারিদ্রতার মধ্যেই তিনি “দ্য ক্যাপটিভ লেডি” নামক তার প্রথম কাব্যটির রচনা করেন।এটি প্রকাশের পর একজন দক্ষ ইংরেজি লেখক এবং কবি হিসেবে তার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। “দ্য ক্যাপটিভ লেডি” বইটির এক কপি মাইকেল তার কলকাতার বন্ধু ‘গৌড়দাস বসাককে’ উপহার হিসেবে পাঠান।গৌড়দাস সেই বইটিকেই ‘জে ই ডি বেথুন’ এর কাছে উপহার হিসেবে পাঠান।বইটি পড়ে বেথুন অভিভূত হন এবং মাইকেল মধুসূদনকে চিঠি পাঠান কলকাতায় ফিরে আসতে এবং বাংলায় কাব্য রচনা করতে।

১৮৫৬ সালে মধুসূদন কলকাতায় ফিরে আসেন।সেই সময় তিনি তার পত্নীকে সঙ্গে আনেননি। মধুসূদনের পত্নীদের মধ্যে আঁরিয়েতা ছিলো তার সারাজীবনের সঙ্গিনী।

মধুসূদন প্রথম বাংলা সাহিত্যের অঙ্গনে পদার্পণ করেন নাট্যকার হিসেবেই। তিনি দুটি প্রহসনও রচনা করেন।যেমনঃ ‘একেই কি বলে সভ্যতা’, ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রো’। তিনি আরো রচনা করেছেন পদ্মাবতী, তিলোত্তমাসম্ভব,মেঘনাদ বধ কাব্য,ব্রজাঙ্গনা কাব্য,কৃষ্ণকুমারী নাটক,বীরাঙ্গনা কাব্য,চতুর্দশপদী কবিতাবলি, হেকটর বধ ইত্যাদি।

মধুসূদনের ব্যাক্তিগত জীবন ছিলো বেদনাঘন এবং নাটকীয়। তার শেষ জীবনও ছিলো চরম দুঃখ ও দারিদ্র্যের। কবি ইংল্যান্ডে আইন বিষয়ে পড়াশুনা করলেও সেখানকার আবহাওয়া এবং বর্ণবাদিতার কারণে সেখানে বেশিদিন থাকেননি। তারপর ১৮৬০ সালে তিনি ফ্রান্সের ভার্সাই নগরীতে চলে যান।কিন্তু তার আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ ছিলো।শুধুমাত্র “ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর” এর জন্যই তিনি আইন পড়া শেষ করে ভারতে ফিরে আসতে সক্ষম হন।কিন্তু ভারতে তিনি তার পড়ালেখাকে তেমন কাজে লাগাননি।

অবশেষে এই কিংবদন্তী, অমিত্রাক্ষর এবং সনেটের প্রবর্তক অমিতব্যয়ী হওয়ার কারণে অর্থাভাবে ১৮৭৩ সালের ২৯জুন আলিপুর জেনারেল হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।কলকাতার সাকুলার রোডে তাকে সমাধিস্থ করা হয়।

Leave a Reply