You are currently viewing হোমার

হোমার

  • Post category:Personality

ইলিয়াড ও ওডিসি মহাকাব্য এবং হোমারীয় স্তোত্রাবলির রচয়িতা হলেন হোমার যিনি ছিলেন এক প্রাচীন মহাকাব্য গ্রিক কবি।পাশ্চাত্য সাহিত্য ধারার শুরু হোমারের মহাকাব্য গুলো থেকে।সাহিত্যের ইতিহাসে তাঁর মহাকাব্যের গুরুত্ব অপরিসীম।

হোমারের সময়কাল নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে।হেরোডোটাসের মতে তিনি হেরোডোটাসের জন্মের চারশ বছর আগে বিদ্যমান ছিলেন।হোমার’ একটি গ্রীক শব্দ। এর দুটো অর্থ হতে পারে- অন্ধ ও জিম্মি। এ থেকে ধারণা করা হয় হোমার একজন গ্রীক ক্রীতদাস ছিলেন, যিনি আবার অন্ধও ছিলেন। নামের অর্থ ছাড়াও আরো এক জায়গায় হোমারের অন্ধত্বের প্রমাণ মেলে।বাস্তব জীবনে অন্ধ হয়ে থাকলেও আত্মিকভাবে অন্ধ ছিলেন না। অন্তর দিয়ে চারপাশ অনুভব করতেন। অন্ধ জগতেই তিনি ট্রয়ের ময়দানে দেবতা আর মানুষদের লড়াই দেখতে পেয়েছেন। তার দুই মহাকাব্যে তা দৃঢ়ভাবে ফুটেও উঠেছে। হোমারের অন্ধত্ব নিয়ে আর কোনো সুস্পষ্ট দলিল নেই।

আগেই বলেছি হোমারকে সাহিত্যজগতে সম্রাটে আসনে বসিয়েছে তার দুই অমর কীর্তি ইলিয়াড এবং ওডিসি। তবে এই দুই মহাকাব্যের বাইরেও হোমার ঈশ্বর বন্দনামূলক বিভিন্ন চারণ কাব্য রচনা করেছেন। এগুলোর মধ্যে মাত্র ২৩ টি কাব্য বর্তমানে রক্ষিত আছে।

আমরা জানি,পৃথিবীতে জাত মহাকাব্য চারটি।এগুলো হলো রামায়ন যা বাল্মীকি রচিত,মহাভারত যা মহর্ষি বেদব্যাস রচিত এবং ইলিয়াড ও ওডিসি যা হোমার রচিত।জাত মহাকাব্য হলো যে সকল মহাকাব্য আদি রচনার সময় থেকে ধাপে ধারে পরিবর্তিত এবং পরিবর্ধিত হয়ে বর্তমান পর্যায়ে এসে পৌছেছে।এসব রচনাগুলো যুগে যুগে ধাপে ধাপে কিছুটা পরিবর্তনের মাধ্যমে কিছুটা পরিবর্ধিত রুপ লাভ করে।

হোমারের রচিত ইলিয়াড ও ওডিসি কাহিনী সংক্ষেপ :

ইলিয়াড:

ট্রয় যুদ্ধের ঘটনাকে কেন্দ্র করে লেখা মহাকাব্য ইলিয়াড।দেবী থেতিসের পুত্র আকিলিসের ক্রোধ, প্যারিস কর্তৃক হেলেন অপহরণ এবং ট্রয় যুদ্ধের চূড়ান্ত পরিণতিকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে ইলিয়াডের ঘটনাবলী।ট্রয় যুদ্ধের মাধ্যমে মানুষ এবং দেবতাদের রূপকথাময় জগতের সংমিশ্রণে এক অপরূপ কাব্য হিসেবে ইতিহাসের পাতায় ভাস্বর এই ইলিয়াড। ইলিয়াডকে পশ্চিমা সাহিত্যের জগতে অন্যতম সেরা মহাকাব্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।ইলিয়াডের ঘটনাকে নিয়ে পররর্তীতে বেশ কিছু সিনেমা রচিত হয়েছিল।

ওডিসি:

সাহিত্যিকদের দৃষ্টিতে ইলিয়াডে যে হোমারের যাত্রা শুরু হয়, তা ওডিসির ছন্দে পূর্ণতা লাভ করে।পঙক্তি বিন্যাস এবং বিভিন্ন উপমার ব্যবহারের মাধ্যমে যেন এক নতুন হোমারকে আবিষ্কার করা হয় এই কাব্যে।ট্রয় যুদ্ধের পরবর্তী সময়ে গ্রিক বীর ওডেসিয়াসের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন মুখ্য হয়ে উঠেছে এখানে।ওডিসির মাঝে ব্যবহৃত ভাষাশৈলী বর্তমান যুগের সাহিত্যিকদের জন্য আদর্শ হিসেবে চিহ্নিত হয়।ওডিসির কাহিনী নিয়েও সিনেমা রচিত হয় পরবর্তীতে।

হোমারিও প্রশ্ন:

হোমারের রচনার ভিন্নধর্মীতার জন্য কোনো কোনো সাহিত্যিক দাবী করেন যে,হয়তো হোমার একজন ছিলেন না,হোমার নামের আড়ালে ছিলেন কয়েকজন কবি।এই নিয়ে যে প্রশ্ন তা সাহিত্যে হোমারিও প্রশ্ন বা ‘Homeric Question নামে পরিচিত।জার্মান সাহিত্য সমালোচক অগাস্ট উলফ ইলিয়াড এবং ওডিসির বর্ণনায় বিভিন্ন অসঙ্গতির দিকে আঙুল তুলে ধরেন।তিনি ধারণা করেন, ইলিয়াড এবং ওডিসি বেশ কয়েকজন কবির দ্বারা ধারাবাহিকভাবে বর্ণিত হয়েছে। এমনকি ইলিয়াডের মাঝে ঘোড়ার গতির প্রশংসা করে হোমার বেশ কয়েকটি পঙক্তি রচনা করেছেন। কিন্তু ওডিসির মাঝে এ ধরনের কোনো পঙক্তির উল্লেখ নেই। এমনকি প্রাণীর সবরকম বর্ণনা থেকে বিরত থেকেছেন তিনি। হয়তো দুজন আলাদা কবি ওডিসি এবং ইলিয়াড রচনা করেছেন।এ প্রশ্নের কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর খুঁজে পাওয়া যায়নি। কিন্তু একজন হোমারে বিশ্বাসী সাহিত্যিকদের মতে, ইলিয়াড রচনাকালে হোমার যুবক ছিলেন। কিন্তু ওডিসি রচনাকালে তিনি কাব্য বিন্যাসে যথেষ্ট দক্ষ হয়ে উঠেছিলেন। তাই দুটি মহাকাব্যে দুই ধরনের বর্ণনা বিদ্যমান। কিন্তু দিনশেষে হোমারিয় প্রশ্নের কোনো সুনির্দিষ্ট উত্তর নেই।

হোমারের জন্মসালের ন্যায় মৃত্যুসাল নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। অনেকের মতে, তিনি ৭০১ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মৃত্যুবরণ করেছিলেন। কিন্তু গবেষকগণ সুনির্দিষ্টভাবে তার মৃত্যুসাল বের করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তবে হোমারের মৃত্যুকে ঘিরে একটি মজার গল্প প্রচলিত আছে। ৫ম শতাব্দীর দার্শনিক হেরাক্লিটাসের বর্ণনানুযায়ী, একবার একদল বালক হোমারের নিকট হাজির হলো। তারা হোমারকে উকুন সম্পর্কিত একটি জটিল ধাঁধার উত্তর জিজ্ঞাসা করেন। হোমার সারাদিন ভেবেও তার উত্তর বের করতে পারেননি। এ ধাঁধার ব্যর্থতা মাথায় নিয়ে হোমার মৃত্যুবরণ করেন। তবে এ ঘটনার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।

হোমারের লেখনী পরবর্তী তিন সহস্র বছর ধরে প্রভাবিত করে গিয়েছে তাঁর উত্তরসূরী বিখ্যাত লেখক কবিদের।এরিস্টটল এর মতে হোমারের ইলিয়াড কেবলমাত্র মহাকাব্য নয়,এটি বিশ্বের প্রথম সার্থক ট্রাজেডি। হোমারের রচিত ওডিসির মৃত্যুপুরীর কাহিনী নিয়ে রোমান কবি ভার্জিল রচনা করেন “ইনিড”।যেটির অনুসরণে দান্তে রচনা করেন “ডিভাইনা কম্মেদিয়া”।পরবর্তীতে অারো কবি সাহিত্যিকগণ ইলিয়াড ও ওডিসি দ্বারা প্রভাবিত হন।ইংরেজী সাহিত্যের বিখ্যাত কবি মিল্টন,কিটস্ এবং টেনিসম প্রমুখ হোমারের লেখনি দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন।

হোমার একজন নাকি বহুজন ছিলেন তা নিয়ে বিতর্কের অবসান না হলেও সময়ের সাথে এর যথাযথ উত্তর মিলবে আশা করা যায়।তবে যাই হোক না কেনো সাহিত্যে হোমারের ইলিয়াড ও ওডিসির অবদান অনস্বীকার্য তা বলাই যায়।

Leave a Reply