You are currently viewing আন্দামানের এপিঠ-ওপিঠ – আকাশ মজুমদার

আন্দামানের এপিঠ-ওপিঠ – আকাশ মজুমদার

  • Post category:Chapakhana

 

                    “এখানে মনের দুঃখ মনে চাপা দিয়া,হৃদয়ের আগুন হৃদয়ে পোষণ করিয়া দুঃখ ভোগ করা বড়ই অসহনীয়।মানুষের মনের অবস্হা ও শক্তি সকলের সমান থাকে না;সকলেই যে সকল যন্ত্রণা নির্বিকারভাবে সহ্য করিয়া যাইতে পারে,দুঃখকেই যে সুখ বলিয়া মনে করিতে পারে নহে।শাসন সংযত কন্ঠে মরম বেদনা মনে লুকাইয়া রাখিয়া যেভাবে নিপীরণ হইতেছিল তাহা কাহারও ব্যক্ত করবার সাধ্য নাই।একজন চটুল চঞ্চল হইয়া উঠিলে অন্যে যে কিছু সাহায্য করিতে পারে তাহার কোনও উপায় নাই”

-মদনমোহন ভৌমিক

 

ঐতিহাসিকরা মনে করেন যে,প্রায় ২২০০ বছর আগে থেকে মানুষ আন্দামানে বসবাস শুরু করেছিল।তবে অনেকের ধারণা প্যালিওলিথিক যুগেও মানুষের বাস ছিল এখানে,যে সভ্যতা ৩০০০০ বছর আগে শেষ হয়ে যায়।চোল রাজা প্রথম রাজরাজ প্রথম আন্দামান দখল করে।তিনি প্রথম এই দ্বীপের নাম রাখেন নাককাভাব দ্বীপ।যার মানে চারদিকে খোলা বা নগ্নভূমি।মার্কোপোলোও এই দ্বীপকে নেকুভারণ বলেন।

১৭৫৫ সালে ব্রিটিশরা এই দ্বীপ দখল করে নেয়।পরবর্তীকালে ডেনিশ কলোনি হিসাবে ডেনমার্ক নামকরণ করে পরে যা ফ্রেডরিক দ্বীপ নামেও পরিচিত ছিল।অস্ট্রিয়া পরে এই দ্বীপটির নাম রাখে থেওসিয়া দ্বীপ।১৭৮৯ সালে পুনরায় ব্রিটিশরা দ্বীপে কলোনী গড়ে তোলে।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় দ্বীপটি চলে যায় জাপানের দখলে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের পরাজয় ঘটলে এই দ্বীপটি পুনরায় ব্রিটিশদের হাতে চলে যায়।স্বাধীনতার পর এই দ্বীপের দুটি খন্ড দুটি ভারতের অংশে পরিণত হয়।ইংরেজদের আন্দামান দখলের ব্যাপারটা ছিল অনেকটা কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার মতই।আন্দামানে সোনা মিলবে দিনেমারদের মতো এমন কোনো ধান্ধায় তারা আন্দামানে নেমেছিলেন না।আন্দামান থেকে মসলা নিয়ে ব্যবসা করা যাবে এমন ধান্ধায় ইংরেজরা ছিল না।তারা চেয়েছিল দীর্ঘ সমুদ্র যাত্রায় আন্দামানের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বা আন্দামানে একটু বিশ্রাম নেওয়ার সময় আন্দামানিজদের হাত থেকে এবং আন্দামানের বাহির থেকে আসা জলদস্যুদের হাত থেকে নিজেদের নিরাপদ রাখার একটি পাকাপাকি ব্যবস্হা করতে।

এমন নিরাপত্তা বূহ্য নেটিভদের দিয়েই রচনা করা যায়।যার মর্মে ইতোমধ্যেই ১৭৮৭ সালে ইংরেজরা নজির দেখিয়েছেন সুমাত্রার বেংকুইলিনে।এজন্য তাদের দরকার হয়েছে কিছু দুর্ধর্ষ কিন্তু বংশবদ প্রজা যাদেরকে তারা সংগ্রহ করেছে জেল থেকে।কিন্তু এই প্রজারা কারা ছিল?এদের নিয়ে আলোচনাটা একটু পরেই করছি…।

সুমাত্রার সফলতাকে পুঁজি করে ঠিক হলো আন্দামানেও এমনটাই করা হবে।ঠিক হলো জেল থেকে বেছে বেছে দুর্ধর্ষ প্রজাদের ধরে এনে আন্দামানে রাখতে হবে।তাদেরকে দিয়েই আবাদ করা হবে দুনিয়ার সকলের কাছে ভীতিকর এই ভূমি।আন্দামানিজরা দুর্ধর্ষদের সাথে লড়াই করবে এবং মরবে।আন্দামানের জঙ্গল পরিষ্কার করতে এরা হাড়ভাঙ্গা শ্রম দিবে এবং মরবে।আর এইসব মারামারির মধ্য দিয়েই গড়ে উঠবে ইংরেজদের নতুন উপনিবেশ আন্দামান।

১৭৮৭ সালে বেংকুইলিনে স্হাপিত পেনাল সেটেলমেন্টের সফলতার ধারাবাহিকতায় গর্ভনর জেনারেল লর্ড কর্ণওয়ালিস নির্দেশে ১৭৮৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আন্দামানের চাথাম দ্বীপে ক্যাপ্টেন আর্চিবল্ড ব্লেয়ার ও কর্ণেল কোলব্রুক কয়েকটি কয়েদি নিবাস পত্তনের উদ্যােগ নেন।চাথাম দ্বীপ ও আশপাশের কয়েদি পত্তনের পুরো এলাকার তখন নামকরণ হয় পোর্ট কর্ণওয়ালিস।পরবর্তীতে এই কয়েদি নিবাস তথা শহরের পরিবর্তিত নাম হয় পোর্ট ব্লেয়ার ও কর্ণেল কোলব্রুক কয়েকটি কয়েদি নিবাস পত্তনের উদ্যােগ নেন।চাথাম দ্বীপ ও আশপাশের কয়েদি পত্তনের পুরো এলাকার তখন নামকরণ হয় পোর্ট কর্ণওয়ালিস। পরবর্তীতে এই কয়েদি নিবাস তথা শহরের পরিবর্তিত নাম হয় পোর্ট ব্লেয়ার।

~এবার আসি ব্রিটিশরা আন্দামান দ্বীপে আসার আগে কেমন ছিল আন্দামানিজদের ভাষা,সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রা?

অন্যান্য সংস্কৃতির মতোই আন্দামানিজদের ছিল বিচিত্র সাংস্কৃতিক চর্চা।আর তাদের জীবনযাত্রার সার্বিক রুপরেখা সম্পর্কে জানতে হলে পাঠকদের অবশ্যই পড়তে হবে নৃবিজ্ঞানী এ.আর. রেডক্লিফ ব্রাউন এর লেখা “The Andaman Islanders “(1922) গ্রন্থটি।বৃহৎ বইটির একটি ক্ষুদ্র অংশ আমি এই আলোচনায় তুলে ধরছি।যেমনটি বলা যায় ‘নৃত্য’ র কথা..

আন্দামানিজদের সামাজিক জীবনে নৃত্য’র গুরুত্ব ছিল অপরিসীম…

যেখানে একজন Dancer তার  ব্যক্তিগত দক্ষতা ও চেতনাকে    অন্যদের সামনে উপস্থাপন করার সুযোগ পায় এই নৃত্য’র মাধ্যমে এবং তাঁর ব্যক্তিগত অহংকারবোধকেও প্রদর্শন করে।এবং নৃত্যের মাধ্যমে dancer সকলের সমর্থন অর্জন করে এবং প্রশংসার পাত্র হয়ে উঠে।এছাড়াও নৃত্যের মাধ্যমে dancer তার মনের অনুভূতি সকলের সামনে ফুটিয়ে তুলতে পারে।

       নৃত্য’র মাধ্যমে তাদের আনন্দের অনুভূতিগুলো তারা একে অপরের মাঝে ভাগাভাগি করে নেয়।এতে     করে সমাজে একটি collective expression প্রকাশিত হয়।আন্দামান দ্বীপের মানুষদের মাঝে নৃত্য সম্পূর্ণ সম্প্রদায়ে এমন একটি সম্পর্ক তৈরি করে যার মাধ্যমে তাদের সমাজ আরো বেশি functional হয়।

      দ্বীপের মানুষদের সমাজের অস্তিত্ব মূলত ঐক্য এবং সাদৃশ্যের উপর নির্ভর করে যার ফলে নৃত্য এই সামাজিক ঐক্য গঠনে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।যখন একটি গ্রুপ আরেকটি গ্রুপের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয় তখন যুদ্ধের আগে তারা নৃত্যের আয়োজন করে থাকে সকলকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য এবং যুদ্ধের সময় সকলকে সচেতন থাকার জন্য।

        যে কোন যুদ্ধের পূর্বে তারা  Pig eating ceremony (শুকর খাওয়ার অনুষ্ঠান) পালন করে থাকে এবং সেখানেও তারা নৃত্যের আয়োজন করে থাকে কেননা তারা মনে করে যে শুকর হত্যার মত তারা তাদের শত্রু দের বধ করবে।

       দ্বীপের আদিবাসীরা বিভিন্ন  স্থানীয় গ্রুপে বিভক্ত। এই স্থানীয় গ্রুপগুলো কিছুদিন পর পর যখন একত্রিত হয় তখন তারা dance meeting এর আয়োজন করে থাকে যার মাধ্যমে তাদের মাঝে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হয়।

       আদিবাসীরা  Mourning ceremony পালন করার সময় তারা নৃত্যের আয়োজন করে থাকে তবে তখন নৃত্য ‘র ধরণ ভিন্ন হয়ে থাকে।এই অনুষ্ঠানে নৃত্যের মাধ্যমে তারা মৃত ব্যক্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে থাকে।

   নৃত্য ‘র মূলত প্রধান কাজ হচ্ছে প্রত্যেক ব্যক্তির মনে সামাজিক গোষ্টিগত ঐক্যের একটি ধারণা জাগিয়ে তোলা।

         নৃত্যে অংশগ্রহণকারীরা প্রত্যেকে নিজেদের শরীরকে লাল এবং সাদা রং দ্বারা সজ্জিত করে।  তারা শরীরে বিভিন্ন নকশা অংকন করে থাকে এবং বিভিন্ন অলংকার পরিধান করে থাকে।তারা নিজেদেরকে সজ্জিত করে কারণ dancer রা মনে করে এর মাধ্যমে সে নিজেকে আরো আকর্ষনীয় করে তোলে।

        এছাড়াও নৃত্য’র সময় তারা নিজেদেরকে সজ্জিত করে থাকে তাদের বিভিন্ন প্রথা অনুযায়ী এবং তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রথা অনুযায়ী নৃত্যের ধরন বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে।

ব্রিটিশদের চাটুকারিতায় একসময় এই দ্বীপ পরিণত হয়েছিল তুমুল যুদ্ধক্ষেত্রে। এই আন্দামানের আদিবাসীরা একসময় পরিচিত হয়েছিল “রাক্ষস” নামে।

~কেন আন্দামানিজরা রাক্ষস নামে পরিচিত হয়েছিল?

সৌমেন দত্তের লেখা “আন্দামানে আদিম কলকাতায় রাক্ষস”(সংস্করণ:২০১৬)  বইটিতে লেখক অবলোকন করেন কিভাবে আন্দামানের আদিম আদিবাসীরা কলকাতায় রাক্ষস নামে পরিচিত হয়েছিল।

পাঠকদের বোঝার সুবিধার্থে এই আলোচনাটা না হয় একটু ভিন্নভাবেই শুরু করলাম!

ব্রিটিশরা যখন ভারতীয় উপমহাদেশে নিজেদের কর্তৃত্ব হাসিল করছিলো তখন তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে বাংলার মানুষদের দ্বারা সংগঠিত হয়েছিল অসংখ্য আন্দোলন। নীল বিদ্রোহ, সিপাহী বিদ্রোহ সহ আরও অনেক।আর ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যারা বন্দি হতো এই বন্দিদেরকে নির্বাসিত করা হতো আন্দামান দ্বীপে যেটি তখন ব্রিটিশদের কারাগার হিসেবে পরিচিত ছিল।আর এই দ্বীপে নির্বাসিত বন্দিদের কাজে লাগিয়ে দেওয়া হতো জঙ্গল পরিষ্কার আর দ্বীপের আদিবাসীদের ধরে এনে বন্দি করা।নির্বাসিত বন্দিরা তখন ব্রিটিশদের আদেশে তুমুল যুদ্ধ করে দুই একজন আদিবাসীদের ধরে আনতে সমর্থ হতো।তখন এই বন্দি আদিবাসীদের কলকাতায় এনে এক্সিবিশনের আয়োজন করতো ব্রিটিশরা।সাধারণ মানুষদের চেয়ে এদের শারীরিক গঠন ভিন্ন থাকায় কলকাতায় এদেরকে বলা হতো “রাক্ষস”। “রাক্ষস” পরিচয়ে এক্সিবিশন করে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করতো ব্রিটিশরা।

বিষয়টা ঠিক এমন দাঁড়ালো,যারা আন্দামানের আদিবাসী অথচ কলকাতায় তারা “রাক্ষস” নামে পরিচিত।

পূর্বেই আলোচনা করা হয়েছিল,ব্রিটিশদের দ্বারা আন্দামান দ্বীপে নির্মিত কারাগারে নির্বাসিত করা হতো বন্দিদের।কারা ছিল সেই বন্দিরা?আর আন্দামান দ্বীপে নির্বাসিত হওয়ার পর কেমন কাটতো তাদের বন্দিদশা?

মদনমোহন ভৌমিকের লেখা “আন্দামানে দশ বৎসর”(১৯৩০) বইটি পড়লেই আমরা এর নিখুঁত চিত্র দেখতে পাই।পাঠকদের উদ্দেশ্যে আমি এই পর্যায়ে  বইটির রিভিউ তুলে ধরছি…

ব্রিটিশদের দ্বারা আন্দামান দ্বীপে নির্বাসিত হওয়া একজন বন্দির দশ বছরের জেল জীবন নিয়ে।কেমন ছিল সেই বন্দিদশা…

তিনি “আন্দামানে দশ বৎসর” বইটির লেখক..

~মদনমোহন ভৌমিক

“এখানে মনের দুঃখ মনে চাপা দিয়া,হৃদয়ের আগুন হৃদয়ে পোষণ করিয়া দুঃখ ভোগ করা বড়ই অসহনীয়।মানুষের মনের অবস্হা ও শক্তি সকলের সমান থাকে না;সকলেই যে সকল যন্ত্রণা নির্বিকারভাবে সহ্য করিয়া যাইতে পারে,দুঃখকেই যে সুখ বলিয়া মনে করিতে পারে নহে।শাসন সংযত কন্ঠে মরম বেদনা মনে লুকাইয়া রাখিয়া যেভাবে নিপীরণ হইতেছিল তাহা কাহারও ব্যক্ত করবার সাধ্য নাই।একজন চটুল চঞ্চল হইয়া উঠিলে অন্যে যে কিছু সাহায্য করিতে পারে তাহার কোনও উপায় নাই”

ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র ছিলেন মদনমোহন ভৌমিক।১৯১৪ সালে বরিশাল ষড়যন্ত্র মামলায় অসুস্হ অবস্হায় গ্রেপ্তার হন এবং ১০ বছরের সাজা হয় আন্দামান দ্বীপে।জেল এর প্রথা অনুযায়ী বেশ-ভুষা পেলেন—তিন পোয়া হাত লম্বা ডবল সূতোয় বোনা দুটি জাঙ্গিয়া,পৌনে দু’হাত হাত-কাটা জামা,আড়াই হাত লম্বা গামছা,একটা টুপী,ঘোড়ার গায়ের কম্বলে তৈরি একটা কম্বলে তৈরি একটা কম্বল-কোট ও দুটো কম্বল;আর অলঙ্কার হল মোটা লোহার তারের একটা গোলাকার চাকার মধ্যে ঝোলানো ত্রিকোণাকার কাঠের “গলার হাসলী” তাতে লেখা 8162,10y, উপরে 29.11.15 নিচে 28.11.25 একটা নম্বর,একটা দন্ডের মেয়াদ,একটা দন্ডের তারিখ এবং শেষটা মুক্তির তারিখ।

এই ছিল তার বঙ্গভঙ্গ প্রতিরোধ ও সশস্ত্র পথের স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে  উপহার।

আন্দামান দ্বীপে নির্বাসিত হওয়ার পর দ্বীপের অবস্হা তিনি ঠিক এভাবে বর্ণনা করেছেন…

“পলায়ন করিয়া জঙ্গলে গেলেও মুক্তি নাই,জলে কুমির, স্হলে বাঘ–ইহাই এই স্হানের অবস্হা।কেন্দ্রের অধীনে থাকিলে কাজের ও পোকামাকড় বিশেষ করিয়া জোঁকের যন্ত্রণা,আর জঙ্গলে গেলে জংলিদের ভয়।যে সকল আদিম অধিবাসী কখনও লোকালয়ে আসে না তাহারা কোনও লোক দেখা মাত্রই তীর নিক্ষেপে হত্যা করে।”

আন্দামানে থাকা কালে তাঁর উপর অকথ্য অত্যাচার চালানো হয়েছিল।

যার করুণ পরিস্হিতি তিনি এক পর্যায়ে বর্ণনা করেছেন…

“কয়েদী জীবনের কোনও মূল্য নাই। এ স্হানে কয়েদির সঙ্গে শুধু স্বার্থের সম্বন্ধ। সে স্হানে স্বার্থের সম্ভাবনা নাই সে স্হানেও কোনও সম্বন্ধ নাই।যাহার দ্বারা যত ভাল কাজ হইতে পারে ততই তাহার আদর। এ স্হানে ভক্তিশ্রদ্ধার বিনিময়ে যে স্নেহ ভালবাসা পাইবে তাহার কোনও আশা নাই”

১০ বছর পর মুক্তির পরও তিনি বিপ্লবীদের সান্নিধ্যে কাটান।দেশ বিভাগের পর রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে স্বগ্রামে ফিরে যান।

এবার পুরো আলোচনাটির ইতি টানছি ১৯৪৭ সালের দেশভাগের আলোচনা দিয়েই।কিন্তু দেশভাগের সাথে আন্দামান দ্বীপের সম্পর্কটা কোথায়?

দেশভাগ নিয়ে আলোচনা করতে গেলে ইতিহাসের পাতা থেকে আজও রক্ত পড়ে।টুপটাপ।দীর্ঘ বঞ্চনার নিরবচ্ছিন্ন কান্নার স্রোত আজও চলকে পড়ে ভূগোলের রক্তমাখা মানচিত্রের চরাচরে।নির্মম রাজনৈতিক রসিকতার তিরে বিদ্ধ হয়ে স্বাধীনতার পরে যাদের প্রায় ৭০ টি শারদীয়া কেটে গিয়েছে স্বাধীকারহীন ‘দেশহীন দেশে’।দুই রাজার আমুদেপনার আর ভূগোলের মানচিত্র চিড়ে ভারত বিভাজন।

 যেখানে দুই বাংলার বহু মানুষ উদ্ভাস্তু হয়ে তাদের ভিটেমাটি হারিয়েছিলো।দেশভাগের কারণে অসংখ্য মানুষের নতুন পরিচয় নির্মিত হয়েছিল “শরণার্থী” নামে।আর এই সকল শরণার্থীদের পুর্নবাসনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ক্যাম্পের পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য একটি স্হান ছিল আন্দামান দ্বীপ।যেখানে দেশভাগের শিকার প্রায় লক্ষাধিক মানুষকে পুর্নবাসন করা হয়েছিলো।বাংলার স্বয়ংসম্পূর্ণ এই পরিবারগুলো আন্দামান দ্বীপের গভীর জঙ্গল পরিষ্কার করে বহু বন্য শ্বাপদ- সঙ্কুল মোকাবেলা করে তৈরি করেছিলো নিজেদের নতুন বাসস্হান।

 

 

গ্রন্থপঞ্জী:

The Andaman Islanders—-A.R. Redcliffe Brown.

আন্দামানে আদিম কলকাতায় রাক্ষস—-সৌমেন ভৌমিক

আন্দামানে দশ বৎসর—-মদনমোহন ভৌমিক

উদ্বাস্তু (ইতিহাস ও আখ্যানে)—আশিস হীরা

হৃদয়ের টুকরোয় গাঁথা—ঝর্ণা বসু

ক্ষুধার্ত বাংলা —-জনম মুখোপাধ্যায়

 

লিখেছেন,

আকাশ মজুমদার

 

 

Leave a Reply