You are currently viewing এডগার অ্যালান পো (Edgar Allan Poe)

এডগার অ্যালান পো (Edgar Allan Poe)

  • Post category:Personality

এডগার অ্যালান পো (ইংরেজি Edgar Allan Poe)এর জন্ম জানুয়ারি ১৯, ১৮‌০৯। অ্যাডগার অ্যালান পো, একজন ইংরেজ কবি, ছোটগল্প লেখক, সাহিত্য সমালোচক এবং ইংরেজি সাহিত্যে প্রথম বিজ্ঞান কল্পকাহিনী ও গোয়েন্দা গল্পের স্রষ্টা। তার লেখা গল্প, উপন্যাস এবং কবিতার মাঝের ভৌতিকতা এবং রহস্যের আবহাওয়া আজও অপ্রতিদ্বন্দ্বী।তার বিখ্যাত কবিতাগুলির মধ্যে রয়েছে ‘হেলেনের প্রতি’, ‘স্বপ্ন’, ‘ইস্রাফিল’, ‘দাঁড়কাক’, ‘অ্যানাবেল লী’ প্রভৃতি। ‘দ্য রেভেন’ বা ‘দাঁড়কাক’ কবিতাটি রোম্যান্টিকতা, মোহন সুরেলা ছন্দোময়তা ও তার রহস্যময় পরিমণ্ডলের জন্য বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতারূপে স্বীকৃতি লাভ করেছে।তাঁর বেশ কয়েকটি ছোটগল্পে উল্লেখযোগ্য নৈপুণ্যের সঙ্গে রহস্যময়, ভুতুড়ে, মৃত্যুর গন্ধমাখা, খুনখারাবি ভরা, আতঙ্কতাড়িত পরিবেশ সৃষ্টি করেছেন। গোয়েন্দা-গল্পের ক্ষেত্রেও তাঁর অবদান স্মরণীয়। উপরি-উক্ত ধারার রচনার মধ্যে ‘আমন্তিলাডোর পিপা’, ‘কালো বিড়াল’, ‘রু মর্গের হত্যাকাণ্ড’ এবং ‘চুরি যাওয়া চিঠি’ তাকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দিয়েছে।তঁার নাম শুনলেই প্রথমে মাথায় চলে আসে খুন, রহস্যময় কোনো কাক, জীবন্ত কবর এবং মৃত্যুর পর ফিরে আসা অদ্ভুত কোনো মহিলার ছবি। নীল চোখের এবং কালো কোট পরা বিষণ্ণ চেহারার এই মানুষটির রহস্যময় মৃত্যু এবং সংগ্রাম ও বিচিত্রতায় ভরা জীবনও পাঠকদের আকৃষ্ট করে সমানভাবে। আর আজ বলা হবে তারই গল্প।এলিজাবেথ আর্নল্ড পো এবং ডেভিড পো জুনিয়র অভিনয়শিল্পী দম্পতির পরিবারে জন্ম নেন অ্যাডগার অ্যালান পো। সংস্কৃতিমনা এই দম্পতি শেক্সপিয়ারের ‘কিং লিয়ার’ থেকে ছেলের নাম দেন অ্যাডগার।জন্মের তিন বছরের মাথায় মা মারা গেলে  কিছুদিন পর তার বাবা তাকে সহ তার তিন ভাইবোনকে ফেলে রেখে চলে যান। এরপর জন অ্যালান নামের একজন ধনী তামাক ব্যবসায়ী অ্যাডগার অ্যালান পোকে তার নিঃসন্তান পরিবারে দত্তক নেন।ছোটবেলা থেকেই পো লেখাপড়ায় বেশ মেধাবী ছিলেন। জন অ্যালান চাইতেন, ছেলে বড় হয়ে তার মতো ব্যবসায়ী হবে। কিন্তু সংস্কৃতিমনা বাবা-মায়ের বীজ রয়ে গিয়েছিল তার মাঝে। তাই অল্প বয়সেই তিনি ইংরেজ কবি লর্ড বায়রনের বিশেষ ভক্ত হয়ে ওঠেন এবং তার মাঝে লেখক হওয়ার স্বপ্ন জেগে ওঠে।১৮২৬ সালে তিনি ভার্জিনিয়ায় আসেন ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়ায় পড়ার জন্য।সেখানে পড়া অবস্থায় তিনি প্রবল অর্থ সংকটে পড়েন।অর্থের জোগান দেয়ার জন্য তিনি জুয়ায় জড়িয়ে পড়েন এবং ধীরে ধীরে আরো নিঃস হয়ে পড়েন।এসময় তঁার অার্থিক অবস্থা এতই খারাপ হয়েছিল যে নিজের বাড়ির জিনিস পুড়িয়ে শীত থেকে বাচার চেষ্টা করতে হয়।চারদিকে ধারদেনা, লজ্জা আর দারিদ্র্যের কষাঘাত থেকে বাঁচতে তিনি ফিরে আসেন রিচমন্ড।সেখানে ফিরে এসে প্রেমিকার অন্যত্র বিয়ে তঁাকে অারো মর্মাহত করে।পুনরায় বোস্টন ফিরে আসেন তিনি।বোস্টনে এসে তিনি একটি বায়রনিক বই প্রকাশ করেন।এরপর তিনি নিউইয়র্ক এবং পরে বাল্টিমোর যান।এখানে এসে তার জীবনের মোড় ঘুড়ে যায়।তিনি ছোট গল্প লেখা শুরু করেন।১৮৩৩ সালে তার ‘মিস ফাউন্ড ইন অ্যা বটল’ বইটি প্রকাশিত হয় এবং বইটি ‘বাল্টিমোর উইকলি’ থেকে ৫০ ডলার পুরষ্কারও জেতে। একই সালে তিনি রিচমন্ডের ‘সাউদার্ন লিটারেরি মেসেঞ্জার’ এ সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন এবং সাহিত্য সমালোচক হিসেবে বিশেষ সুনাম অর্জন করেন।আর এ সময়ই তিনি তার ফুপাতো বোন ভার্জিনিয়া ক্লেমের সঙ্গে ভালোবাসার সম্পর্কে জড়িয়ে যান, অতঃপর তারা বিয়েও করেন।ভার্জিনিয়া এবং পোর সুখের সংসার থাকলেও চিরচেনা দারিদ্র্য কখনোই পিছু ছাড়েনি তার। কষ্ট ভুলতে তাই একসময় মদ খাওয়া শুরু করেন তিনি এবং এ দোষেই তার চাকরি চলে যায়। চাকরি হারিয়ে তিনি রিচমন্ড থেকে আবার নিউইয়র্ক চলে আসেন, কিন্তু মদের নেশা আর ছাড়তে পারেন না।এমন অবস্থায় ১৮৩৮ সালে তিনি তার ‘দ্য ন্যারেটিভ অফ আর্থার গরডন প্যম’ বইটি প্রকাশ করেন এবং ১৮৩৯ সালে তিনি ফিলাডেলফিয়ায় ‘বার্টনস জেন্টেলম্যানস ম্যাগাজিন’ এ সহ-সম্পাদক নিযুক্ত হন। একই সালেই তার ‘টেলস অফ গ্রোটেক্স অ্যান্ড অ্যারাবস্ক’ বইটিও প্রকাশিত হয়।পো-র উচ্চমানের রচনাশৈলী এবং প্রতীকবাদী দৃষ্টিভঙ্গি পরবর্তী কালের অনেক শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক কর্তৃক উচ্চ প্রশংসিত হয়েছে।১৮৪০ সালে তিনি তার চাকরিটি ছেড়ে দেন এবং ‘গ্রাহামস লেডিস অ্যান্ড জেন্টেলম্যান’ থেকে ইতিহাসের প্রথম গোয়েন্দা উপন্যাস ‘দ্য মার্ডার ইন দ্য রিউ মর্গ’ প্রকাশ করেন। ১৮৪৩ সালে তার ‘দ্য গোল্ড বাগ’ গল্পটি ফিলাডেলফিয়ার ‘ডলার নিউজপেপার’ থেকে ১০০ ডলার পুরষ্কার জিতলে এটি তাকে বেশ জনপ্রিয়তা এনে দেয়।১৮৪৫ সালের ২৯ জানুয়ারি ‘আমেরিকান রিভিউ’ থেকে তার কালজয়ী কবিতা ‘দ্য র‍্যাভেন’ প্রকাশিত হয়। এটি রাতারাতি তাকে দেশজোড়া খ্যাতি এনে দেয়। এর পর বিভিন্ন পত্রিকায় তিনি বেশকিছু ছোটগল্প এবং আরো কিছু বিখ্যাত লেখা প্রকাশ করেন। ভৌতিক এবং রহস্য গল্পের জন্য তার খ্যাতি বাড়তে থাকে।১৮৪৭ তার স্ত্রী ভার্জিনিয়া টিউবারক্যুলোসিসে মারা যান। পোর জীবনে নেমে আসে বিষণ্ণতার আরেকটি গাঢ় অধ্যায়। মৃত স্ত্রীর স্মৃতি ভোলার জন্য তিনি নিউইয়র্ক ছেড়ে চলে আসেন এবং বাউন্ডুলের মতো বহু জায়গায় ঘুরে বেড়াতে থাকেন। ঘুরতে ঘুরতে প্রভিডেন্স রুধ আইল্যান্ডে তার দেখা হয়ে যায় প্রাক্তন প্রেমিকা সারাহ এর সাথে। সারাহও তখন বিধবা অবস্থায় ছিলেন, কয়েক বছর আগে স্বামী মারা গিয়েছিল তার। সারাহকে পেয়ে তখন পোর কষ্ট কিছুটা লাঘব হয়। সারাহ তাকে তার আর্থিক এবং মানসিক বিধ্বস্ত অবস্থা কাটিয়ে উঠতে নানাভাবে সাহায্য করেন এবং একসময় তারা বিয়ের সিদ্ধান্তও নেন। কিন্তু বিয়ের মাত্র দশদিন আগে ১৮৪৯ সালের ৭ই অক্টোবর অ্যাডগার অ্যালান পোর আকস্মিক মৃত্যু হয়।

সোর্স :https://commons.m.wikimedia.org/wiki/Commons:Wiki_Loves_Monuments_2020_in_Bangladesh/bn

https://roar.media/bangla

Leave a Reply