You are currently viewing ডাল্টনের পরমাণুবাদ – মোঃ মাহমুদুন্নবী

ডাল্টনের পরমাণুবাদ – মোঃ মাহমুদুন্নবী

 

আগের মানুষ সহজেই তাদের জন্য যে সমস্ত জিনিস খাবার বা পোষাকের জন্য দরকারী তা খুঁজে বের করতে পারতো। কিন্তু সেগুলো কি দিয়ে তৈরী- সে ব্যাপারে তাদের কোন ধারনা ছিল না। এ ব্যাপারে সর্বপ্রথম ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করেন এম্পিডোক্লেস (Empedocles). খ্রীস্টপূর্ব পাঁচ শতকে সিসিলির দক্ষিণ উপকূলের অধিবাসী এই দার্শনিক প্রস্তাব করেন যে- প্রতিটি বস্তুই চারটি উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত: পানি, আগুন, বাতাস এবং মাটি। এই চার উপাদানের বিভিন্নানুপাতের কারণেই বিভিন্ন পদার্থ বা বস্তু বিভিন্ন হয়। যেমনঃ মনে করা হতো পাথরের বেশীরভাগ অংশই মাটি। আবার খরগোসের মাঝে রয়েছে উচ্চ পরিমাণে পানি এবং আগুন যার ফলে এটি নরম হয়েছে এবং এতে সঞ্চারিত হয়েছে প্রাণ। কিন্তু তার এই ধারণা বিপুল জনপ্রিয় হলেও তাতে কিছু সন্দেহের জায়গা ছিল। যেমন- পাথরকে যত টুকরাই করা হোক না কেন, তার মধ্যে আগুন, পানি, মাটি বা বাতাসের সরাসরি অস্তিত্ব পাওয়া যেত না।

 

এর কয়েক দশক পর ডেমোক্রিটাস এই সন্দেহের জায়গা একটু হলেও পরিস্কার করার চেষ্টা করেন। তিনি বলেন যে, আমরা পাথরকে যদি দুই টুকরো করি, তবে দু’টোতেই একই জিনিসই থাকে। কিন্তু তাকে টুকরো করতে-করতে যদি এমন একটা অবস্থায় যাওয়া যেত যে এরপর আর টুকরো করা সম্ভব না। তিনি এই ক্ষুদ্রাংশের নাম দেন এটোমোস (atomos) যার মানে অদৃশ্য। যদিও এরিস্টোটল এবং প্লেটোর মতো বিখ্যাত বিজ্ঞানীরা একে গ্রহণ করেননি।

আধুনিক রসায়নের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন প্রিস্টলি, লাভোইসিয়ের এবং সমসাময়িক অন্যান্যরা। তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় দেখা গেছে যে কিছু পদার্থ অন্যের সাথে নতুন পদার্থ গঠনের জন্য একত্রিত হতে পারে, অন্যান্য পদার্থগুলি পৃথক করে সরলগুলি তৈরি করতে পারে এবং কয়েকটি মূল “উপাদান” আর ভেঙে যেতে পারে না।

জন ডাল্টন এই টুকরোগুলি একত্র করে ১৮০৩ সালে প্রথম আধুনিক পারমাণবিক তত্ত্বের বিকাশ করেছিলেন। ডাল্টন প্রথম 1803 সালে তার পারমাণবিক তত্ত্বের প্রস্তাব করেছিলেন এবং পরে 1808 সালে তাকে সংশোধিত এবং পরিমার্জিত করে “এ নিউ সিস্টেম অফ কেমিক্যাল ফিলোসফি” নামে প্রকাশ করেন। এতে বিজ্ঞানী স্যার জন ডালটন পদার্থের গঠন সম্পর্কে একটি সুনির্দিষ্ট বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব প্রকাশ করেন এবং এই তত্ত্বটি ডালটনের পরমাণুবাদ [Dalton’s Atomic Theory] নামে খ্যাত । পরমাণুবাদের মূল কথাগুলি হল :0

 

(১) সব পদার্থই অসংখ্য অতি ক্ষুদ্র অবিভাজ্য নিরেট কণা দ্বারা গঠিত । পদার্থের এই ক্ষুদ্রতম কণার নাম পরমাণু [atom]

(২) পরমাণুগুলিকে রাসায়নিক প্রক্রিয়া দ্বারা ভাঙ্গা যায় না, সৃষ্টি করা যায় না বা ধ্বংস করা যায় না । পরমাণু অবিনশ্বর ও অবিভাজ্য ।

(৩) একই মৌলিক পদার্থের পরমাণুগুলি ওজনে ও ধর্মে অভিন্ন ।

(৪) বিভিন্ন মৌলিক পদার্থের পরমাণুগুলি ওজনে ও ধর্মে ভিন্ন ।

(৫) পরমাণুসমূহ সরাসরি রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশ নেয় ।

(৬) বিভিন্ন মৌলিক পদার্থের পরমাণুগুলি পূর্ণসংখ্যার সরল অনুপাতে পরস্পর যুক্ত হয়ে যৌগিক পদার্থ উত্পন্ন করে । যেমন — 1 : 1,  1 : 2,  2 :  3 ইত্যাদি ।

(৭) একই মৌলিক পদার্থের পরমাণুগুলি এক বা একের অধিক অনুপাতে যুক্ত হয়ে একাধিক যৌগিক পদার্থ উত্পন্ন করে । যেমন — NO,  NO2,  H2O,  H2O2 ….. ইত্যাদি ।

 

এ মতবাদের কিছু সীমাবদ্ধতাও আছে। যা নিম্নরূপঃ

১. ডাল্টনের পরমানু মতবাদে মৌলিক ও যৌগিক উভয় পদার্থের ক্ষুদ্রতম অংশের নাম পরমাণু বলা হয় । কিন্তু এদের মধ্যে বিশেষ কোন পার্থক্য দেখান হয়নি ।

২. এ মতবাদ অনুসারে একই মৌলের পরমাণুর ভর একই । কিন্তু আধুনিক রসায়নের মতে একই মৌলের বিভিন্ন ভরের পরমাণু আছে, যাদেরকে পরস্পরের আইসোটোপ বলা হয় । যেমন- হাইড্রোজেনের তিনটি আইসোটোপ হলঃ

(ক) প্রোটিয়াম

(খ) ডিউটেরিয়াম

(গ) ট্রিটিয়াম

৩. এ মতবাদ অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন মৌলের পরমাণু ভরে ও ধর্মে ভিন্ন । কিন্তু আধুনিক রসায়নের মতে, ভিন্ন ভিন্ন মৌলের আইসোটোপ সমূহের ভর পরস্পর সমান হতে পারে। যেমন- নিকেল, তামা ও দস্তা এই তিনটি মৌলের একটি করে আইসোটোপ আছে যাদের প্রত্যেকের ভর ৬৪ একক ।

(ক) নিকেল

(খ) তামা

(গ) দস্তা

৪. ডাল্টনের মতবাদ অনুসারে পরমাণুসমূহ অবিভাজ্য । কিন্তু আধুনিক রসায়নের কল্যাণে আমরা জানি যে, পরমাণুকে ভাঙলে ইলেক্ট্রন, প্রোটন ও নিউট্রন নামক স্থায়ী মৌলিক কণিকা পাওয়া যায় ।

যদিও ডাল্টনের পরমাণু মতবাদে কিছু ত্রুটি আছে, কিন্তু এটি আধুনিক রসায়নের পথিকৃৎ।

 

রেফারেন্সঃ

১। https://www.visionlearning.com/en/library/Chemistry/1/Early-Ideas-about-Matter/49

২। https://digiexamguide.com/586-2/

৩.https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AA%E0%A6%B0%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A3%E0%A7%81

৪। https://m.somewhereinblog.net/mobile/blog/Tajbiha_Rony/29384737

 

 

লিখেছেন,

মোঃ মাহমুদুন্নবী

 

Leave a Reply