You are currently viewing আপ্পিকো আন্দোলন

আপ্পিকো আন্দোলন

  • Post category:Chapakhana

১৯৮৩ খ্রিস্টব্দের ৮ই সেপ্টেম্বর কর্নাটকের সির্সি অঞ্চলের সালকানি বনাঞ্চলের ৭০জন স্থানীয় গ্রামবাসী বনভূমি প্লাবিত হওয়ার আশংকায় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। এটিই আপ্পিকো আন্দোলন (Appiko Movement) নামে পরিচিত। আপ্পিকো শব্দের শাব্দিক অর্থ হলো কান্নায় ‘আলিঙ্গন’ বা ‘জড়িয়ে ধরা’,যা গাছের সুরক্ষার প্রতীক। দক্ষিন ভারতের প্রথম বৃহৎ আকারের পরিবেশগত এই আন্দোলনের প্রতিষ্ঠা ও নেতৃত্বে পরিবেশকর্মী পান্ডুরাঙ্গা হেগডে মূখ্য ভূমিকা পালন করেন।

উত্তর ভারতে গাছ আলিঙ্গন করে বন সংরক্ষণ আন্দোলন চিপকো থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে হেগডে আপ্পিকো আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। পরবর্তীতে এই আন্দোলন কর্ণাটক ও কেরালার অন্যান্য পার্বত্য জেলাতে ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করে।এপিকো ও চিপকো উভয় আন্দোলনেই নারী সমাজের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল

৩৮বছর আগে কর্নাটকের কালসে বনাঞ্চল রক্ষার জন্য একটি জোট রাজ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষ হতে সাহায্য না পেয়ে বনের গাছগুলোকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে ছিল৷ উত্তর কন্নর বনাঞ্চল ১৯৫০সালে যেখানে ৮০শতাংশ ছিল মাত্র ৩০ বছর পর ১৯৮৩ সালের দিকে সংকুচিত হতে হতে তা ২৫শতাংশে নেমে আসে। প্লাইউড কারখানা ও কাগজ কতগুলোর পাশাপাশি সেই সময় এ অঞ্চলে জলবিদ্যুৎ বাঁধ নির্মাণ বনাঞ্চল ধ্বংসের জন্য দায়ী ছিল। এর ফলে এই বনের উপর নির্ভরশীল হাজার হাজার আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এ সম্পর্কে হেগডে বলেছেন, “এই ঘটনায় ৩০মিলিওনেরও বেশী লোক বিরূপ প্রভাবিত হয়েছে।”  আপ্পিকো আন্দোলন অরণ্য সুরক্ষিত এবং বনজ সম্পদের উপর নির্ভরশীল উপজাতি গোষ্ঠীর জীবন রক্ষার জন্য একটি অহিংস ক্রুসেড হিসেবে শুরু হয়েছিল। আপ্পিকো আন্দোলনে মহিলাদের ভূমিকা কিছুতেই অস্বীকার করা যায় না। কেরেহোসাহল্লির মহিলামন্ডল এই আন্দোলনের সমর্থন বাড়িয়েছে। সালকানি বনাঞ্চলের প্রতিবাদী ৭০জন গ্রামবাসীর মাঝে মাঝে ৩০জন-ই ছিলেন মহিলা এবং তারাও শ্রমিকদের কুড়াল ফেলে না দেওয়া অবধি গাছকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। অপব্যবহার ও অপ্রতুলতা সত্ত্বেও মহিলারা তাদের রণাঙ্গনে এসে আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। আন্দোলনের প্রথম দিনগুলিতে মহিলাদের একটি অবদান হিসেবে ছিল, তারা এক মুষ্টি করে শস্য জমা রাখতেন, যা পরিবাশকর্মীরা ক্রমাগত বনের মধ্যে গাছগুলির প্রতি পাহারা দিত যারা তাদের কাছে শস্য জমা দিতেন।

আপ্পিকোর প্রতিষ্ঠাতা হেগডে বলেছেন ,যে বনাঞ্চলের বর্ধন এই অঞ্চলগুলিকে সংবেদনশীল করে তোলে, অরণ্য অঞ্চলকে অবিচ্ছিন্নভাবে অপসারণ করার ফলে লাজুকরণ হয়, অর্থাৎ আবাদযোগ্য বনাঞ্চলকে পাথুরে,পর্বতমালার প্যাচে রূপান্তরিত করা হয় এবং গাছের বৃদ্ধির জন্য অযোগ্য উপস্থাপন করে। পান্ডুরাঙ্গা হেগডে আরও বলেছেন, “বনে এক্সেস সরবরাহ না করা হলে মহিলারা সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত হয়।” শ্রমের জেন্ডার বিভাজনের কারণে ঘরোয়া কাজ সামলানো ও সন্তান লালান-পালনই নারীদের কাজ হিয়ে ওঠে। তাই নারীসমাজ এই সামাজিক আন্দোলনে অংশ নিয়ে প্রচুর গর্বিত হন।

সির্সি তালুকের সালকানি গ্রামে ছোট্ট একটি আন্দোলনের সূচনা হওয়ার পরে,তা কেবল কর্ণাটকেরই নয়,কেরালার পার্বত্য জেলা ওয়ায়ানাদেও ছড়িয়ে পড়ে। পশ্চিমী ঘাটগুলো রক্ষার জন্য আপ্পিকো আন্দোলন আরও বড় লক্ষ্য নিয়েছে। আপ্পিকো আন্দোলনটি এই অঞ্চলের বাস্তু শাস্ত্রের ভঙ্গুর সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে উবুসু(সংরক্ষণ করুন), বেলসু(বৃদ্ধি) এবং বালাসু(যুক্তিসঙ্গত ব্যবহার) স্লোগান দিয়ে চলেছে। ১৯৮৩ সাল থেকে এটি দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়েছে এবং অন্যান্য পরিবেশগত আন্দোলনের মতো উন্নয়নের আখ্যানকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে এবং পরিবর্তে টেকসই উন্নয়নের পক্ষে হয়, যেখানে মানুষ,মানবিক ক্রিয়াকলাপ এবং বাস্তুশাস্ত্র সামঞ্জস্যতা বজায় থাকে।

নামঃ শামসুন্নাহার রুমী
কলেজঃ ঢাকা মহিলা কলেজ, দ্বাদশ শ্রেণী

Leave a Reply