You are currently viewing ইলন মাস্ক – কে, এম, মুহাইমেনুল ইসলাম তুহিন

ইলন মাস্ক – কে, এম, মুহাইমেনুল ইসলাম তুহিন

  • Post category:Personality

 

ইলন মাস্ক সাউথ আফ্রিকান । তার জন্ম ১৯৭১ সালে সাউথ আফ্রিকায় । বাবা ছিলেন সাউথ আফ্রিকান আর মা ছিলেন কানাডিয়ান নাগরিক । বাবা একজন মেকানিকাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রিকেল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন । আর মা ছিলেন মডেল ও ডায়েটেশিয়ান । তিন ভাই বােনের মধ্যে ইলন সবার বড় । স্কুলে থাকতেই আইজ্যাক আসিমভের ফাউন্ডেশন সিরিজ , লর্ড অব দ্য রিংস এসব ক্লাসিক বইগুলাে পড়ে ফেলেন । ১২ বছর বয়সে ‘ ব্লাস্টার ‘ নামের একটা ভিডিও গেমও বানিয়ে ফেলেন । একসময় তার বাবা – মায়ের বিচ্ছেদ হয় । মা কানাডায় চলে যান । মাস্ক বাবার সাথে সাউথ আফ্রিকাতেই থেকে যান ।  ছােটবেলা থেকেই আমেরিকার প্রতি তার আলাদা ফ্যাসিনেশন ছিল । বাবাকে প্রায়ই অনুরােধ করতেন আমেরিকায় স্থায়ী হওয়ার জন্য । কিন্তু তার বাবা  আবার তার দেশ ছাড়তে রাজি ছিলেন না । এক পর্যায়ে বাসার কাজের লােক বিদায় করে দেন ছেলেকে আমেরিকার লাইফস্টাইল কত কষ্টের সেটা সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার জন্য । এদিকে তখন বাধ্যতামূলকভাবে সেনাবাহিনীতে যােগ দিতে হয়। এটা এড়ানাের জন্য ১৭ বছর বয়সে মাস্ক কানাডায় চলে যান । মা কানাডিয়ান হওয়ায় কানাডার নাগরিকত্ব পেতেও সমস্যা হয়নি । কানাডাকে তিনি মূলত আমেরিকা যাওয়ার মাধ্যম হিসাবে বেছে নিয়েছিলেন ।

নব্বইয়ের দশকে আমেরিকায় অনলাইন ব্যবসার একটা বিপ্লব শুরু হয় । ইলন মাস্ক তখন ছােট ভাই কিম্বাল মাস্কের সাথে ‘ জিপ ২ ‘ নামে একটা অনলাইন কোম্পানি শুরু করেন । জিপ ২ মূলত ছিল একটা অনলাইন টেলিফোন ডিরেক্টরি , যেখানে তার আয় হতাে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে । ১৯৯৯ সালে কমপ্যাক কম্পিউটার ৩০৭ মিলিয়ন ডলার দিয়ে জিপ ২ কিনে নেয় । ইলন মাস্ক পান ২২ মিলিয়ন ডলার । এরপর তিনি ‘ এক্স ডট কম ‘ নামে একটা অনলাইন লেনদেনের মাধ্যম প্রতিষ্ঠা করেন । এক্স ডট কমের প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানি ছিল ‘ কনফিনিটি ’ , যার প্রতিষ্ঠাতাদের একজন ছিলেন পিটার থিয়েল । একসময় তাদের সাথে না পেরে মাস্ক এক্স ডট কমকে কনফিনিটির সাথে যুক্ত করে দেন । ২০০০ সালে মাস্ক যখন প্রেমিকা জাস্টিন উইলসনকে বিয়ে করে অস্ট্রেলিয়ায় হানিমুনে গেলেন , তখন কোম্পানির অন্য কর্মকর্তারা এক্স ডট কমের সিইও পদে মাস্ককে সরিয়ে নিযুক্ত করে দেয় পিটার থিয়েলকে । পিটার থিয়েল ২০০১ সালে এক্স ডট কম আর কনফিনিটি দুইটাকে আলাদা নামে রেখে একত্রিত করে ‘Paypal ‘ নাম দেন । কোম্পানির স্বার্থে ইলন মাস্ক তখন থিয়েলকে সমর্থন দেন । ২০০২ সালে eBay ১.৫ বিলিয়ন ডলার দিয়ে পেপাল কিনে নেয় । মাস্ক তখন তার প্রাপ্য ১৮০ মিলিয়ন ডলার নিয়ে পেপাল থেকে চলে যান । অর্থাৎ , পেপাল মূলত পিটার থিয়েলের কনফিনিট আর ইলন মাস্কের এক্স ডট কমের মিশ্রণ ছিল । এর প্রতিষ্ঠাতার কথা যদি বলতেই হয় , পিটার থিয়েলকেই বলতে হবে।

পেপাল থেকে বের হওয়ার পর তার মাথায় ভূত চাপে স্পেস বা মহাকাশ নিয়ে । ক্যালিফোর্নিয়া থেকে তখন লস এঞ্জেলেসে চলে আসেন এবং মার্স সােসাইটিতে যােগ দেন । রাশিয়ায় কয়েকবার ভ্রমণ করেন রকেট কেনার জন্য । কিন্তু তারা মাস্কের বাজেটের দ্বিগুণ দাম চাইল । তাকে নিয়ে হাসাহাসিও করল । রাগ করে মাস্ক ঠিক করলেন নিজেই রকেট বানানাে শুরু করবেন । রকেট নিয়ে তার চিন্তাভাবনা অবশ্য একটু আলাদা ছিল । তিনি চাইলেন রকেটের দাম শুধু সরকার বা বড় বড় কোম্পানি না , সাধারণ মানুষেরও কেনার সাধ্যের মধ্যে নিয়ে আসা । তখন তার বন্ধুবান্ধবরা তার মানসিক সুস্থতা নিয়ে সন্দেহ করা শুরু করেছিলেন । রকেটকে বাণিজ্যকভাবে ব্যবহারের প্রধান অন্তরায় ছিল এর অত্যাধিক দাম । এত ব্যয়বহুল হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে , রকেট একবার ব্যবহার করলে আর ব্যবহার করা যেত না । মাস্ক চাইলেন রকেটকে যেন পুনরায় ব্যবহার করার উপযােগী করে উড্ডয়ন করা যায় । এটা করা সম্ভব হলে রকেটের দাম কমে আসবে , মঙ্গলে বসতি স্থাপন করা যাবে , স্পেস ট্যুরিজমেরও প্রসার ঘটবে । এই উদ্দেশেই ২০০২ সালে যাত্রা শুরু করে ইলন মাস্কের ‘ স্পেসএক্স ‘ । এটি ছিল আমেরিকার সর্বপ্রথম বেসরকারি রকেট নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান । বর্তমানে এটা অনেকটাই সফল কোম্পানি বলা যায় । নাসার সাথেও চুক্তি আছে স্পেসএক্সের ।

 ২০০৩ সালে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার মার্টিন এবারহার্ড ও তার ব্যবসায়িক পার্টনার মার্ক টারপেনিং শুরু করেন টেসলা মােটর কোম্পানির । গ্যাসের বদলে বিদ্যুৎ চালিত গাড়ি নির্মাণ করাই ছিল এই কোম্পানির উদ্দেশ্য । ২০০৪ সালে ইলন মাস্ক ৭.৫ মিলিয়ন ডলার বিনিয়ােগ করে কোম্পানিটির সবচেয়ে বড় অংশীদার হয়ে যান এবং চেয়ারম্যান হিসাবে যােগ দেন । এবারহার্ড ছিলেন সিইও । ২০০৬ সালে টেসলা মােটরের ‘ রােডস্টার ’ গাড়ির প্রদর্শনী হয় । এতে উপস্থিত ছিলেন হলিউড অভিনেতা আর্নল্ড শােয়ার্জেনেগার ও ডিজনির সাবেক সিইও মাইকেল এইজনার । গাড়ির দাম প্রকাশ করা হয় ৯০ হাজার ডলার । এবং একবার চার্জ করলে গাড়িটি ২৫০ মাইল যেতে সক্ষম ছিল।ইলন মাস্ক সবাইকে আশ্বস্ত করেন ৩ বছরের মধ্যে ৫০ হাজার ডলারের গাড়ি চলে আসবে । রােডস্টার গাড়িটি কিনতে ৩০ জন আগ্রহ প্রকাশ করেন যাদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য গুগলের ফাউন্ডার লেরি পেইজ এবং সার্গেই ব্রিন । 

তখন এবারহার্ড ও মাস্কের মধ্যে মতের অমিল হওয়ায় কোম্পানির মধ্যে দুই ভাগ হয়ে যায় । ২০০৭ সালের আগস্টে এবারহার্ডকে সিইও থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় এবং সাময়িকভাবে মাইকেল মার্কস ও জিভ ডােরি সিইওর দায়িত্ব পালন করেন । এবারহার্ডকে টেকনােলজি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব দেওয়া হয় | টেসলার পেছনে এবারহার্ডের অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি । একইসাথে একে সবার কাছে জনপ্রিয় করে তােলার পেছনে মাস্কের অবদানও কম ছিলনা । তাই কোম্পানির চাকুরীজীবিদের মধ্যে দুইপক্ষের বিভাজনের সৃষ্টি হয়েছিল । শেষ পর্যন্ত টেসলার প্রতিষ্ঠাতা এবারহার্ড ও টারপেনিং ২০০৮ সালে টেসলা ছেড়ে চলে যান এবং তখন থেকে ইলন মাস্ক টেসলার সিইও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন । অর্থাৎ , টেসলা ইলন মাস্ক প্রতিষ্ঠা করেননি , তিনি টেসলা প্রতিষ্ঠার প্রায় দুই বছর পর এই কোম্পানিতে এসেছিলেন । ২০১৬ সালে তিনি ‘ দ্য বােরিং কোম্পানি ‘ নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন | এটি শহরের নিচে টানেল তৈরির কাজ করছে যেটা ট্রাফিক জ্যাম দূর করতে সহায়তা করবে।গাড়ি চলতে পারবে ঘন্টায় ২০০ কিমি গতিতে।  এটাই হাইপারলুপ নিয়ে কাজ করছে । এছাড়া সম্প্রতি আলােচনায় আসা নিউরালিংক নামে আরেকটি কোম্পানিও আছে মাস্কের ।

ইলন মাস্কেরই অনেক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড আছে , যার কারণে টেসলার শেয়ারে কয়েকবার ধ্বস নামে । এমনকি সিইও পদ থেকে সরে যাওয়ার মুখেও পড়েছিলেন কয়েকবার । ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে ক্যামেরার সামনে মারিজুয়ানা খেয়ে বিতর্ক তৈরি করেছিলেন । দুইটি বিয়ে করে সেগুলাে টেকাতে পারেননি । প্রেমিকা তাে বিভিন্ন সময়েই পরিবর্তন করেছেন ।

 

 

লিখেছেন,

কে, এম, মুহাইমেনুল ইসলাম তুহিন

 

Leave a Reply