You are currently viewing কিয়ামতের ঘড়ি (Doomsday Clock) – মোঃ আশিকুল হাবিব

কিয়ামতের ঘড়ি (Doomsday Clock) – মোঃ আশিকুল হাবিব

  • Post category:Chapakhana

 

পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা কোনটা? 

এইরকম প্রশ্ন শুনে বেশিরভাগ মানুষের মাথায়  একটা  ঘটনা অবশ্যই আসবে,  আর তা হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।  প্রথমবারের মতো  মানব সভ্যতা স্বাক্ষী হয়েছিল  পারমাণবিক শক্তির ।  ট্রিনিটি প্রোজেক্টে,  রবার্ট ওপেনহাইমার যে শক্তির আবিষ্কার করেন,  কেউ কি ভেবেছিল একসময় সেই শক্তির দাপটে পৃথিবী  শাসন করবে আমেরিকা ? 

হয়ত হ্যা,  হয়ত না,  কিন্তু এখন এর উত্তর টা সবার জানা।  পারমাণবিক বোমার আবিষ্কারের পূর্বে সাধারণ বোমা ব্যাবহার করা হতো,  আরও  সুনির্দিষ্ট করে বললে “TNT” ট্রাই নাইট্রো টলুইন।  যুদ্ধে ব্যবহৃত হতো ,  যা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য  যথেষ্ট ছিলো।  কিন্তু  পারমাণবিক বোমা যেন পুরো অনুপাতকেই পালটে দিলো,  ১ কেজি নিউক্লিয়ার ফিশন বিক্রিয়ায় যে পরিমাণ  শক্তি উৎপন্ন হয়,  তা ছিলো ২ কোটি কেজি TNT থেকে উৎপন্ন  শক্তির  সমান।  আর এই শক্তির প্রয়োগ প্রথমবারের মতো করে  আমেরিকা,  জাপানের  বিরুদ্ধে ।  জার্মানী,  ইতালি যখন পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছে ,  জাপান তখন পরাজয় স্বীকার করতে নারাজ ,  ট্রুম্যানের নির্দেশে হিরোশিমা ও নাগাসাকি শহরে  দুইটা পারমানবিক বোমা কাঁপিয়ে  দিয়েছিল পুরো জাপান,  বোমারু বিমানের পাইলট পর্যন্ত বলে ওঠে ” এ আমরা কি করলাম! “,  বুঝতে আর বাকি থাকে নি কারও যে কিয়ামতের সময়  কাছে চলে এসেছে ।  

 আর এই সময়টা কখন হবে তা নির্ধারণের জন্য একটা সংস্থার সৃষ্টি  হয়  নাম ” The Bulletin of the Atomic Scientist “(BAS) বাংলায় করলে তা হয় “পারমানবিক বিজ্ঞানীদের বুলেটিন ”  শুনতে একটু অদ্ভুত মনে হলেও লেখকের কিছু  করার নেই।  যাইহোক,  ১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় এই সংস্থা ,  প্রতিষ্ঠাকালীন ১৫ জন বিখ্যাত বিজ্ঞানী নিয়ে যাত্রা  শুরু করে BAS , যার মধ্যে ১৩ জনই ছিলেন নোবেলজয়ী ।  যাদের প্রধান কাজ বিচার,  বিশ্লেষণ,  ক্যালকুলেশন করে  একটা ঘড়ির সময় ঠিক করা,  যার ঘন্টার কাটা সবসময় থাকে ১২ টায়,  আর মিনিটের কাটা নির্দেশ করে  ১২ টা বাজতে কত সময় বাকি থাকবে।  আর এই ঘড়িকেই বলা হয়  “Doomsday Clock” বা কিয়ামতের ঘড়ি।   যখন ঘড়িতে মিনিটের কাটাও ১২ টায় অবস্থান করবে,  সেই সময়টাকে বলা হয় মিডনাইট  বা মধ্যরাত,  অর্থাৎ সময় শেষ।  এখন অনেকেই বিষয়টাকে তুচ্ছ ভাবতেই পারেন কিন্তু তার আগে আমাদের  একটাবার ভাবা উচিত  কারা এই ঘড়ির  সময় নির্ধারণ করেন,  তারা কি আমার বা আপনার মতো সাধারণ মানুষ ?  না,  তারা নিসন্দেহে  পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মস্তিষ্ক ।  

 

ঘড়ির  সময় নির্ধারণের সময় তারা বিভিন্ন বিষয়কে এর মাত্রার মধ্যে  আনে,  যেমন ;

১. পারমাণবিক ঝুঁকি

২.যুদ্ধ

৩.জলবায়ু পরিবর্তন

৪. সাইবার সংকট

৫. বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

 

আরও  অনেক  বিষয়  ধরা হয় এই ঘড়ির সময় গণনার ক্ষেত্রে ।  এখন দেখা যাক,  বিভিন্ন সময়ে,  এই ঘড়ি কেমন সময় রয়েছে বলে ভবিষ্যতবাণী করেছে,  কিন্তু তার আগে আমাদের একটা বিষয়  বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন  তা হলো,  এই ঘড়ি প্রতিকী সময় প্রদান করে,  অর্থাৎ আমরা ধ্বংসের  কতটা কাছে সেটা বোঝানোর জন্য ।  ঘড়িতে যদি দেখানো হয় মধ্যরাত হতে ৫ মিনিট বা ২ মিনিট  বাকি,  এর অর্থ এই না যে,  ৫ মিনিট পর পৃথিবী ধ্বংস  হয়ে যাবে,  এর অর্থ ৫ মিনিট বাকি অর্থ,  আমাদের  হাতে কিছু  সময় রয়েছে কিন্তু যদি ২ মিনিট হয় তাহলে আমরা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে,  পরিস্থিতি এইভাবেই চলতে থাকলে সব ধ্বংস  হয়ে যাবে,  আমাদের উচিত  সতর্ক হওয়া।  আশা করি পরের অংশ  পড়লে বিষয়টা পরিষ্কার হবে  ;

১৯৪৭ সালে ঘড়ির মিনিটে কাটা প্রথমবারের মতো ৭ মিনিট দূরে নির্ধারণ করে BAS।  ১৯৪৯ সালে যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন  প্রথমবারের মতো পারমাণবিক শক্তির মালিক হয়,  তখন প্রকৃতভাবে শুরু  হয় ঠান্ডা যুদ্ধের,  যা স্থায়ী ছিল পরবর্তী প্রায় ৫০ বছর।  আর এই আবিষ্কারের ফলে ঘড়ির সময় কমিয়ে রাখা  হয় মাত্র ৩ মিনিটে ,  অর্থাৎ মধ্যরাত থেকে মাত্র  ৩ মিনিট  দূরে ।  ১৯৬২ সালে,  কিউবা সংকটের সময় সময় কমিয়ে আনা হয় ২ মিনিটে ।  এরপর পারিপার্শ্বিক অস্থার উন্নতি ঘটে।  পৃথিবীতে সবচেয়ে  কম সংকটাপন্ন সময় ছিল ১৯৯১,  সোভিয়েত ইউনিয়নের ভেঙে যাওয়ার সাথে সাথে  শেষ হয় স্নায়ুযুদ্ধ  এবং একক শক্তি হিসেবে প্রকাশ পায় আমেরিকা।  আর এইসময় মিনিটের কাটা মধ্যরাত থেকে  ১৭ মিনিট দূরে  রাখা হয়৷  যা এযাবৎকাল পর্যন্ত সবচেয়ে  শান্তির সময়।  কিন্তু এর কিছুদিন পরই এর পরিবর্তন ঘটে ,  গল্ফ ওয়ার,  নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয়  পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়।  

জানুয়ারি ২০১৮ তে,  এই সময়টা করা হয় মাত্র  ২ মিনিট,  ২০১৯ এ অপরিবর্তন থাকে এই সময়।  আর এইসময় উল্লেখ করা হয় পারমানবিক ঝুঁকির চেয়ে  জলবায়ু পরিবর্তন,  এই বৈশ্বিক অচলাবস্থার জন্য দায়ী ।  এরপরে  আসে ২০২০ সালের  রিপোর্ট,  বিভিন্ন মিডিয়া রিপোর্টের শিরোনাম করে “100 second to midnight ” অর্থাৎ এইবার সময় রাখা হয় মাত্র ১ মিনিট ৪০ সেকেন্ড দূরে।  উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক ঝুঁকি ,  রেকোর্ড পরিমাণে সিএফসি গ্যাস নির্গমণ,  মরুভূমিতে তুষারপাত,  মেরু অঞ্চলে  বরফ গলা,  আমাজনে সর্বকালের ভয়াবহ দাবানল,  ক্যালিফোর্নিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় দাবানল,  ইরানের ইউরেনিয়াম মজুদ এর পাশাপাশি ২০২০ এর মূল ঘটন, কোভিড-১৯,  যা মেডিকেল ও বায়োটেকনোলজির নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে মুখোমুখি।  এই সব বিষয়  আমাদের ঠেলে দিয়েছে মধ্যরাতের সবচেয়ে নিকটে। আমরা কি পারবো ঘুরে দাড়াতে, কি হবে আমাদের মুক্তির পথ ?  প্রশ্ন থাকলো পাঠকের কাছে,

আশাকরি মানবসভ্যতা ঘুরে দাঁড়াবে এই অচলাবস্থা থেকে,  মিনিটের কাটা সরিয়ে দিবে মধ্যরাত থেকে অনেক দূরে।

 

লিখেছেন: মোঃ আশিকুল হাবিব, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

 

 

Leave a Reply