You are currently viewing নর্মাদা বাঁচাও আন্দোলন

নর্মাদা বাঁচাও আন্দোলন

  • Post category:Chapakhana

বিংশ শতকের শেষার্ধে সংগঠিত পরিবেশ সুরক্ষার আন্দোলনসমূহের মধ্যে “নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন” অন্যতম। এটি ১৯৮০-র দশকে দক্ষিণ ভারতে শুরু হওয়া অন্যতম প্রধান একটি আন্দোলন।

ভারতের বৃহত্তম একটি নদী নর্মদা নদী যা ভারতের মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ ও গুজরাটের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সবশেষে আরব সাগরে পতিত হয়েছে। ১৯৪০ এর দশক থেকেই নর্মদা নদী উপত্যকার উন্নয়নের জন্য আলোচনা শুরু হয়, ১৯৫০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে প্রায় ১৫ টি জায়গা চিহ্নিত করা হয় বাঁধ নির্মানের জন্য। জওহরলাল নেহেরু ১৯৬২ এর দিকে নর্মদা নদীর ওপর সর্দার সরোবর বাঁধ (যা নর্মদা বাঁধ নামেও পরিচিত) প্রকল্পের শিলান্যাস করেন। এই প্রকল্পের অধীনে ৩০ টি বৃহৎ বাঁধ, ১৩৩ টি মাঝারি বাঁধ ও ৩০০০ টি ছোট বাঁধ এবং এর সাথে ৭৫০০০ কিলোমিটার ব্যাপী বিস্তৃত ক্যানেল নেটওয়ার্ক নির্মানের পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু দেখা যায় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করলে প্রায় ২৯৭ টি গ্রাম প্লাবিত হতে পারে এবং ২০ লক্ষের মতো মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে যার মধ্যে অধিকাংশই আদিবাসী মানুষ। প্রকল্পটির বিশালতা বিবেচনা করে লেখক Claude Alvares এটিকে “পৃথিবীর সর্বাধিক পরিকল্পিত পরিবেশ বিপর্যয়” হিসাবে গন্য করেন।(১)

১৯৮০-র দশকের মাঝামাঝি সময়ে বিভিন্ন পরিবেশকর্মী ও NGO এই নর্মদা প্রকল্পটি নিয়ে পর্যালোচনা করার পর অনুধাবন করেন যে এই প্রকল্পের ফলে প্রচুর মানুষের স্থানচ্যুত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, ফলে তারা আগে থেকেই সমস্ত মানুষদের স্থানচ্যুতি সম্পর্কে সচেতন করতে শুরু করেন এবং তাদের পুনর্বাসনের নীতিগুলো সংশোধনের জন্য একত্রিত আন্দোলন শুরু করেন।

১৯৮০ থেকে ধীরস্থিরভাবে প্রতিবাদ চলতে থাকলেও বাঁধ বিরোধী আলোড়ন ঘনীভূত হতে শুরু করে ১৯৮৫ সাল থেকে যখন থেকে মহারাষ্ট্র, গুজরাট ও মধ্যপ্রদেশে নর্মদা বাঁধ নির্মানের প্রতিবাদে ‘do or die’ আন্দোলনের সূচনা হয়। (২)

১৯৮৯ সাল নাগাদ Narmada Dharangrast Samiti, Maharashtra Ghati, Navnirman Samiti, Narmada Asargrasta Sangharsha Samiti ও আরো কিছু সংগঠন একত্রিত হয়ে স্থাপন করেন “নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন বা Narmada Bachao Andolan (NBA)” সংগঠন। অন্যদিকে অপর এক সংগঠন Arch-Vahini রাজ্য সরকার কে এই প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের পুনর্বাসনে সাহায্য করতে থাকে। তবে নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন সংগঠন সঠিকভাবে পুনর্বাসনের দাবিতে অনড় থেকে বাঁধ বিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকে। (৩)

নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের প্রধান নেতৃত্বে ছিলেন মেধা পাটেকর, যিনি একজন সামাজিক কর্মী ও গবেষক ছিলেন। মুম্বাই এর Tata Institute of Social Science থেকে নর্মদা উপত্যকায় নির্মিত সর্দার সরোবর বাঁধের সমস্যা গুলি তুলে ধরার জন্য তাঁকে নিয়োগ করা হয়। কিন্তু গবেষণার কাজ করতে করতেই মেধা পাটেকর গরীব আদিবাসী শ্রেনীর মানুষদের জীবন ও সমস্যা নিয়ে আগ্রহী হয়ে পরেন। পরবর্তী কালে তিনি তার গবেষণা ছেড়ে দিয়ে এই নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনে অংশ গ্রহন করেন। তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ এই আন্দোলনের গতি ত্বরান্বিত করে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে এই আন্দোলন অভাবনীয় সমর্থন অর্জন করে। বুকার পুরস্কার বিজয়িনী অরুন্ধতী রায়, অভিনেতা আমীর খান এবং আম আদমি পার্টির অলোক আগরওয়াল এই আন্দোলনে সমর্থন জানান।

১৯৮৯ সালে NBA এক বিশাল বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেন। সেই সমাবেশে অংশগ্রহণ করেন বাবা আমটে, সুন্দরলাল বহুগুনার মতো প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ। ১৯৯০ এ NBA এই বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প স্থগিতের জন্য দাবি জানায়। বিভিন্ন সমালোচনার মুখে আছে জানার পরও ১৯৮৫ সালে সর্দার সরোবর বাঁধ প্রকল্পকে বিশ্বব্যাংক আর্থিক সাহায্য প্রদান করে। তবে ১৯৯২ সালে এই প্রকল্পের সমালোচনা উল্লেখপূর্বক একটি রিপোর্ট তৈরী করা হয় এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক NGO ও NBA বিশ্বব্যাংককে উক্ত বরাদ্দকৃত অর্থ প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য করে।

১৯৯৪ খ্রিস্টাব্দে নর্মদা বাঁচাও আন্দোলনের উপর চলচিত্র নির্মাতা আলি কাজিমি “নর্মদা: এ ভ্যালি রাইজেস” নামে একটি সিনেমা তৈরি করেন। আনন্দ পাটোয়ারধান নামে অপর এক চলচিত্র নির্মাতা ১৯৯৬ খ্রিস্টাব্দে ‘এ নর্মদা ডাইরি’ নামে একটি সিনেমা তৈরি করেন।

উক্ত আন্দোলনে বিভিন্ন উচ্চবর্গীয়, মধ্যবর্গীয় ব্যক্তিবর্গের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরাও সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। এই আন্দোলন বিশ্বের অন্যান্য পরিবেশ আন্দোলনসমূহের মধ্যে অন্যতম অনুপ্রেরণামূলক একটি আন্দোলন।

(তথ্যসূত্র ১, ২, ৩ : bhugolhelp.com)

সানজিদা রশীদ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

Leave a Reply