You are currently viewing লিও টলস্টয়
লিও টলস্টয়

লিও টলস্টয়

  • Post category:Personality

“Everyone thinks of changing the world, but no one thinks of changing themselves.”

  • উক্তিটি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিকদের মধ্যে অন্যতম কাউন্ট লিও টলস্টয়ের। যিনি নিজেকে পরিবর্তনের কথা বলতেন। সত্যিই তিনি নিজেকে পরিবর্তন করতে পেরেছিলেন এবং সেই সাথে অসংখ্য মানুষকেও পরিবর্তন করেছিলেন। তিনি মানুষকে জীবনের উদ্দেশ্য বোঝাতে চেয়েছিলেন। তিনি মানুষের মধ্যে জীবনবোধ, মনুষ্যত্ববোধ, নীতিবোধ জাগ্রত করতে চেয়েছিলেন।লিও টলস্টয় রুশ সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক।এমনকি তঁাকে বিশ্ব সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

টলস্টয় সম্পর্কে উনিশ শতকের ব্রিটিশ কবি ও সমালোচক মেথু আর্নল্ড বলেন, “টলস্টয় শুধু এক শিল্পকর্ম নয়, বরং জীবনের একটা অংশ।” কথাটি তিনি যথার্থই বলেছিলেন। টলস্টয়ের লেখাগুলোতে জীবন ও নীতিবোধ ফুটে উঠেছে। তিনি ‘শিল্পের জন্য শিল্প’- এ মতবাদ বিশ্বাস করতেন না। তার মতে, সাহিত্য হবে জীবনের জন্য। মানুষের চিরায়ত কামনা ও শান্তির অন্বেষা টলস্টয়ের সাহিত্যকে অমর করে রেখেছে । 

  • টলস্টয়ের অধিকাংশ লেখায় অবাস্তব কল্পকাহিনী অনুপস্থিত। তাকে নিয়ে বিখ্যাত রাশিয়ান লেখক ম্যাক্সিম গোর্কি বলেন, “টলস্টয় নিজেই একটি পৃথিবী।” শুধু রুশ সাহিত্যের ইতিহাসে অন্যতম সেরা লেখকই নয়, বরং বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসে সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ লেখক ও সাহিত্যক হিসেবে বিবেচনা করা হয় তাকে। সাহিত্যমান ও লেখার বিচারে তার সমকক্ষ সাহিত্যিক খুব কমই দেখেছে বিশ্ব ।
  • তলস্তোয়ের জন্ম রুশ সাম্রাজের তুলা প্রদেশের ইয়াস্নায়া পলিয়ানা নামক স্থানে।তঁার পুরো নাম ছিল কাউন্ট লেভ নিকোলায়েভিচ টলস্টয়। তিনি ছিলেন পরিবারের চতুর্থ সন্তান। শিশু বয়সে তার বাবা-মা মারা যান এবং আত্মীয়স্বজনরাই তাকে বড় করেন। তিনি উপন্যাস ছাড়াও নাটক, ছোটগল্প এবং প্রবন্ধ রচনায় ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন।

নিজের চেষ্টায় আরো অনেক ভাষা শিখেছিলেন। তিনি লাতিন, ইংরেজি, আরবি, তুর্কো-তাতার, ইতালীয়, গ্রিক এবং হিব্রু ভাষা জানতেন। তিনি সংগীতশাস্ত্র এবং চিত্রাঙ্কন বিদ্যাতেও মোটামুটি পারদর্শী ছিলেন। তার একাগ্রতা ও পরিশ্রম করবার শক্তি ছিল অসাধারণ। তিনি মেধাবীও ছিলেন। বস্তুত তিনি ছিলেন স্বশিক্ষিত।তার জীবনীশক্তি ও কর্মোদ্যম ছিল প্রচন্ড দানবীয় রকমের ।। বন্ধু-বান্ধব বা সমাজ কী বলবে সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে নিজে যা উচিত এবং ন্যায্য বলে ভেবেছেন তাই করেছেন তিনি সবসময়।আইনের নামে বিচারের প্রহসন কিভাবে হয় তার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য দিনের পর দিন আদালত আর জেলখানায় ঘুরেছেন। এমন সততা ও সামাজিক দায়িত্ববোধ বিস্ময়কর। তার মনের গড়ন ছিলো ভাবুকের, দার্শনিকের। সে জন্যই তিনি যখন গল্প-উপন্যাস-নাটক ইত্যাদি সৃজনশীল সাহিত্য রচনা করতে শুরু করলেন, সেখানে কোথাও অবাস্তব রোমান্টিক কল্পনা আমরা দেখতে পাই না। তিনি সেসব মানুষ, সামাজিক স্তর বা জীবনযাত্রার ছবিই তার কাহিনী তে এঁকেছেন যা তিনি নিজে দেখেছেন। তার অভিজ্ঞতার পরিধিও ছিলো বিশাল-সমাজের সবচেয়ে নিচু তলার মানুষ থেকে শুরু করে রাজদরবারের লোকজনের সাথে তিনি মিশতে পারতেন। তিনি দীর্ঘজীবন লাভ করেছিলেন এবং নানা কারণে তার শিল্পী জীবনের সবটুকুই অশান্তির মধ্যে কেটেছে। এই অশান্তির একটি প্রধান কারণ ছিলো- সমাজে বা সভ্যতায় প্রচলিত কোন বিশ্বাস বা রীতিনীতি তিনি বিনা প্রশ্নে মেনে নেননি।

তল্‌স্তোয়কে রাশিয়ান সাহিত্যের অন্যতম ব্যক্তিত্ব হিসাবে বিবেচনা করা হয়। নিজের রচনায় তলস্তয় দেখিয়েছেন প্রাক-বৈপ্লবিক রাশিয়ার জীবন, ফুটিয়ে তুলেছেন সেই সময়ের পরস্পরবিরোধী পরিস্থিতি যাতে গড়ে উঠত রুশ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি ও স্তরের মানসতা।তাঁর রচনাগুলিতর মধ্যে ‘যুদ্ধ ও শান্তি’ এবং ‘আন্না কারেনিনা’ উল্লেখযোগ্য। তার কল্পকাহিনী লেখা বাস্তব জীবনকে নিয়ে লেখা।”যুদ্ধ ও শান্তি “বইটি ১৮৬৫ থেকে ১৮৬৭ সালে ধারাবাহিকভাবে ও ১৮৬৯ সালে বই আকারে প্রকাশিত হয়। এই উপন্যাসের বিষয়বস্তু হচ্ছে নেপোলিয়ন বোনাপার্ট-এর রুশ অভিযান। যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং শান্তির জন্য মানুষের সংগ্রামই এই উপন্যাসের মূল বক্তব্য।”আন্না কারেনিনা “১৮৭৮ সালে বই আকারে প্রকাশিত হয। উপন্যাসটিতে তৎকালিন সময়ের বাস্তবিকতা এবং পারিবারিক জীবনের ব্যক্তিগত অবস্থার প্রকাশ পেয়েছে। তার রচনার পরিমাণ বিশাল: ছোটগল্প, বড়গল্প, উপন্যাস, নাটক, শিশুসাহিত্য, প্রবন্ধ, ডায়েরি, চিঠিপত্র সব মিলিয়ে তার রচনা সমগ্র প্রায় ৯০ খণ্ডে বিভক্ত।

২০০৯ সালে তল্‌স্তোয়ের জীবনের শেষ বছরের দিনগুলো নিয়ে একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়”The Last Station” এই চলচ্চিত্র Jay Parini উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি করা হয়।

তলস্তয় শেষ বয়সে খুব সাধারণ যাপন করতে চেয়েছিলেন। নিজের কাজ তিনি নিজে হাতে করতেন, এমনকি নিজে জুতো তৈরি করে পরতেন, চাষাভুষোর মতো সাধারণ ও অল্প আহার করতেন, পরতেন খেতমজুরের পোশাক। শেষ বয়সে তিনি কাউকে না জানিয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন। পথিমধ্যে ঠাণ্ডা লেগে তার নিউমোনিয়া হয়।এতেই তিনি বাড়ি থেকে দূরে এক রেলস্টেশনে ২০শে নভেম্বর ১৯১০ সালে মারা যান। মৃতুর সময় তার বয়স হয়েছিলো ৮২ বছর। পরে তার মরদেহ গ্রামে নিয়ে সমাহিত করা হয়।

  • তল্‌স্তোয়ের মৃত্যুর ঠিক আগের দিনগুলোতে স্বাস্থ্যের বিষয়ে পরিবারের সদস্যরা উদ্বিগ্ন ছিলো। তার সক্রিয়ভাবে প্রতিদিন তার যত্নে নিযুক্ত ছিলেন। মৃতুর শেষ কয়েকদিন তিনি যা বলেছেন তাই লেখা হয়েছিলো। তিনি তার অভিজাত জীবনধারাকে ত্যাগ করে সাধারন জীবন-যাপন করতে চেয়েছিলেন। তাই স্ত্রীর সাথে সম্পর্ক বাদ দিয়ে শীতের রাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান এবং অসুস্থ হয়ে পথিমধ্যে মৃত্যুবরণ করেন।

This Post Has One Comment

  1. Adnan

    usefull

Leave a Reply