You are currently viewing উদ্যোক্তা কথন (পর্ব – ০১) – সুমাইয়া তাসনীম

উদ্যোক্তা কথন (পর্ব – ০১) – সুমাইয়া তাসনীম

THE MORE RISK,THE MORE GAIN 

” All our dreams can come true,if we have the courage to pursue them”

                                                                                   -Walt Disney

বর্তমান সময়ে উদ্যোক্তা শব্দটির সাথে আমরা কমবেশি পরিচিত কিন্তু আমরা অনেকেই এই শব্দের অর্থ ও গুরুত্ব বুঝতে পারিনা। অনেকেই মনে করেন,ব্যবসায়ী বলতে উদ্যোক্তা। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।

“সকল উদ্যোক্তাই ব্যবসায়ী কিন্তু সকল ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা নয়”

প্রথমেই পার্থক্যটা বুঝে নেয়া যাক। মনে করেন,যদি বলি আপনাকে ৫০ হাজার টাকা দেওয়া হবে আপনি এটা দিয়ে বড় ব্যবসায়ী হবেন । তখন আপনি বলবেন কম টাকা দিয়ে ব্যবসা করা যাবে কিন্তু বড় ব্যবসায়ী হওয়া যাবে না । এবার যদি আপনাকে ১০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয় তখন আপনি এলাকায় একটা দোকান খুলে ব্যবসা শুরু করবেন তাই নয়কি ?

ধরি, আপনি এলাকায় একটা মুদিমালের দোকান দিলেন আপনার প্রতিমাসে গড়ে ৫০ হাজার টাকা লাভ থাকলে ২ বছরে হবে ১২ লক্ষ টাকা। এইভাবে বড় ব্যবসায়ী হওয়া যাবে না। অর্থাৎ বড় ব্যবসায়ী হতে হলে আপনাকে অনেক বেশী পরিমাণের টাকা বিনিয়োগ করতে হবে এবং বড় ব্যবসা করতে হবে।

কিন্তু যদি আপনার মেধা, শ্রম, বুদ্ধি, অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও বাস্তবধর্মী আইডিয়া থাকে তাহলে আপনি উদ্যোক্তা হতে পারবেন অর্থাৎ বড় ব্যবসায়ী হতে পারবেন। কিন্তু কিভাবে?

ধরলাম আপনার কাছে বেশী মূলধন নাই কিন্তু উদ্যোক্তা বা বড় ব্যবসায়ী হবেন । তাহলে বাস্তবধর্মী আইডিয়া / বুদ্ধি বের করতে হবে এবং সাথে অদম্য ইচ্ছাশক্তি লাগবে কারণ আপনাকে অনেক বেশী পরিশ্রম করতে হবে এবং প্রথম দিকে ধৈর্য্য ধারণ করে লেগে থাকতে হবে ।

শুরু করা যাক ব্যবসা, প্রথমেই আপনি এলাকার খোলা বাজার থেকে মরিচ, হলুদ, মসলা বা যেখানে এসব বেশি উৎপাদন হয় ও দাম কম সেখান থেকে কিনে আনবেন । এবার মরিচ, হলুদ, মসলা স্থানীয় মেশিনে গুঁড়ো করে ঘরে ২ জন কর্মী রেখে সুন্দর ডিজাইন করা প্যাকেটে প্যাকেটজাত করবেন । তারপর স্থানীয় বাজারে বিভিন্ন দোকানে গিয়ে নিজের পণ্যের গুণাগুণ বর্ণনা করলেই দেখবেন আপনার পণ্যের চাহিদা সৃষ্টি হবে । কারণ আপনি দোকান মালিককে ১০০% আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে পারবেন আপনার পণ্যে কোন ভেজাল নাই এবং আপনি অন্যান্য কোম্পানীর পণ্যের চাইতেও কম দিয়ে দোকানে বিক্রয় করতে পারবেন । কারণ অন্যান্য কোম্পানীর মত আপনার বিজ্ঞাপন খরচ নাই । আপনি হয়ত চিন্তা করছেন, বাজারের খোলা মরিচ, হলুদ প্যাকেটজাত করণ এটা তেমন কি ভিন্নধর্মী আইডিয়া ? যিনি বা যারা প্রথম এই আইডিয়া বা প্যাকেটজাত মরিচ, হলুদ বাজারজাতকরণ করেছিলেন তারাই এখন সফল ব্যবসায়ী । তাদের বিনিয়োগ ছিল কম কিন্তু সফলতা অনেক বেশী।

অর্থাৎ যারা বংশ পরিক্রমায় পূর্ব পুরুষের ব্যবসা পরিচালনা করেন এবং অনেক বেশি মূলধন নিয়ে সচরাচর বা প্রচলিত লাভজনক ব্যবসাগুলো শুরু করে থাকেন তাদের মূলত ব্যবসায়ী বলা হয়।

যিনি মেধা,শ্রম,বুদ্ধি, অদম্য ইচ্ছেশক্তি,সৃজনশীলতা এবং স্বপ্ন ও সাহস নিয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করেন তাকে উদ্যোক্তা বলা হয়।


যদি ক্যারিয়ার হিসেবে উদ্যোক্তা হওয়ার ইচ্ছে থাকে,তবে দেখা নেয়া যাক একজন উদ্যোক্তার কি কি গুণাবলি থাকা দরকারঃ

১। আত্মবিশ্বাস যত বেশি,সাফল্য ততো বেশি। উদ্যোক্তাকে হতে হবে স্থির ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন যা আত্মবিশ্বাসকে বৃদ্ধি করে পৌঁছে দেবে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে।

২। একজন উদ্যোক্তা হতে হলে আপনকে  সহনীয় ক্ষমতা অনুযায়ী ঝুঁকি গ্রহণ করার মানসিকতা রাখতে হবে। সহনীয় ঝুঁকি সম্পন্ন পরিস্থিতিতে যুক্তিযুক্ত অগ্রাধিকার সমূহ প্রদান করতে হবে।

৩। একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আপনার কাজই হচ্ছে নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কার করা। উদ্ভাবন থেকে বিরত না থেকে নতুনকে সবার মাঝে তুলে ধরা। পিছনে হাজার মানুষ হাজারটা কথা বলবেই। তাকে নিয়ে বসে থাকলে আপনি কখনো সফল উদ্যোক্তা হয়ে উঠতে পারবেন না। তাই সব সময় নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন।

৪। আপনাকে হতে হবে নমনীয় এবং চৌকস। তিল তিল করে গড়ে তোলা ছোট্ট ব্যবসাকে শিল্প সাম্রাজ্য গড়ার ক্ষেত্রে সততা এবং কঠোর পরিশ্রমের বিকল্প নেই।

৫। নতুন কিছু করতে গেলে আপনাকে নানা সমস্যার মুখে পড়তে হবে। তাই যত পারুন আপনার আশেপাশের মানুষের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করুন। এটি আপনাকে নানা তথ্য দিয়ে সাহায্য করবে। সেই সাথে আপনার জন্য এই যোগাযোগ আপনার জন্য কাজ করবে নেটওয়ার্ক হিসেবে।

৬। এমনভাবে কাজ করুন যেন তা প্রচলিত মানের চেয়ে ভাল হয় বা অতীত  কাজের চেয়ে উন্নতর হয় । গুণগত মান ঠিক রেখে ভালভাবে, দ্রুত ও সস্তায় দক্ষতার সাথে  কাজ করবার চেষ্টা করুন ।

৭। একজন সফল উদ্যোক্তা হতে হলে আপনাকে অবশ্যই অধ্যবসায়ী হতে হবে। জীবনে চলতে গেলে বাঁধা আসবেই, তাই বলে থমকে গেলে চলবে না, সামনে যতই বাঁধা আসুক না কেন অবিরাম বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে সে সমস্ত বাঁধাকে দূর করতে হবে।

৮। একজন উদ্যোক্তা জানেন কখন কার কাছ থেকে সাহায্য চাইতে হবে। আপনি সবজান্তা নন,তাই নিজের দূর্বলতা সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকা অতীব প্রয়োজন।

৯। ‘না’ বলতে পারেন। নতুন উদ্যোক্তাদের সামনে যেসব সুযোগ আসে, সবগুলোই লোভনীয় মনে হতে পারে। নতুন সম্ভাবনাময় কোনো বাজার বা গ্রাহকের শেষ সময়ে অনুরোধ রাখতে গিয়ে তাঁরা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে নিতে পারেন। সব সুযোগ নিতে গেলে সাফল্য ধরা দেয় না, বরং সঠিক সুযোগটাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার মধ্য দিয়েই পূরণ হয় কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য। অ্যাপল কম্পিউটারের সহপ্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত স্টিভ জবস যেমন বলেছেন, ‘যেসব কাজ করিনি, সেগুলোর জন্যও আমি গর্বিত। নতুন কিছু অর্জন করতে গেলে “না” বলাটাও জানতে হবে।

১০। বড় বড় উদ্যোক্তারা বুঝতে পারেন যে ব্যবসা মানে যতটা না অর্থ-বিত্ত আর বিক্রয়, তার চেয়ে বেশি জনগণের সঙ্গে যুক্ত হওয়া। তাই সহানুভূতিশীল হোন। সারা দিনের কাজের জন্য ছুটে বেরিয়ে পড়ার বদলে বাড়তি ১৫ মিনিট ব্যয় করুন কোনো গ্রাহক বা সহযোগীর জন্য। এ সময় তাঁর সঙ্গে কথা বলুন বা মনোযোগ দিয়ে তাঁর কথাগুলো শুনুন। এটাই হতে পারে সারা সপ্তাহে আপনার সবচেয়ে মূল্যবান বা ফলপ্রসূ ১৫ মিনিট।



লিখেছেন,

সুমাইয়া তাসনীম

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

Leave a Reply