You are currently viewing সীমাবদ্ধতার আস্ফালন ও নব্যতার ভবিষ্যত – সুমন চক্রবর্ত্তী

সীমাবদ্ধতার আস্ফালন ও নব্যতার ভবিষ্যত – সুমন চক্রবর্ত্তী

  • Post category:Chapakhana

 

(ভবিতব্যের ভারচুয়াল রিয়েলিটিতে এই লেখার সূত্রপাত)

 

দেখার ভিতরে অদেখা জিনিসটা সকলের কাছে বেশী দৃশ্যমান। কর্মীর পরিচয় না থাকলেও কর্মহীনের পরিচয় সর্বত্র। যে করে তার কর্মতে কর্মহীনের স্বীকৃতি আসে। পদদলিত হয় কর্মী। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে এটা অনেকটা আনন্দগন ও নিরাপদ মনে হলেও ভবিষ্যত ঠিক যতোটাই সম্ভাবনার ততোটাই অনিশ্চয়তার। তারপরও আমরা আমাদের বর্তমানকে নিজের আত্মগোঁড়ামীতে ও সংকীর্ণমান চিন্তায় বিপদগ্রস্ত  করে তুলি। অন্যের কাঁধে বন্দুক রেখে শিকার করার মজাটাই আলাদা। চিন্তাশীলতায় ব্যবহার কম হলে যে শরীরের বিকাশের ক্ষেত্রে কোন চোট লাগে না, সেটা আমরা বুঝি। অন্যকে খাটিয়ে নিজে রাজার মতো চলাটা মন্দ কিসে? সময়ে সৌভাগ্যতো নিজেরই পাওনা থাকে।  কিন্তু ভাবা উচিত মানবিক সভ্যতা ধীরে ধীরে যতোটা অবক্ষয় হচ্ছে, যন্ত্রসভ্যতা ঠিক তার বিপরীতে চক্রবৃদ্ধি হারে বিকশিত হচ্ছে।

 যেহেতু আমরা আমাদের মনকেই নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারছি না। কি কর্মক্ষেত্রে, কি পরিবারে, কি সমাজে আমাদের অস্থিরতা ও হামবড়া ভাবই দৃশ্যমান হচ্ছে। এই সুযোগে যন্ত্র তার আপন গতিতে অনন্য উচ্চতায় পরিশীলিত হচ্ছে। আমরা কি বুঝতে পাচ্ছি আগামী তথ্য প্রযুক্তি ও রোবোটিক দুনিয়ায় আমাদের অবস্থান কোথায় হবে? মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে আমাদেরকে যে এক সীমাহীন প্রতিযোগিতায় নামতে হবে। হয়ত এমন হবে চাকুরীর বাজারের সিংহভাগ জায়গা দখল করবে যন্ত্রমানবেরা। এখন কর্মজীবনে কর্ম করতে আমাদের যতো অনীহা তারই ফলশ্রুতিতে ভবিষ্যতে  ন্যূনতম বেতনে উচ্চ শিক্ষিত দিনমজুরের সংখ্যা বাড়তে থাকবে। প্রথম শ্রেনীর পদগুলো দখল করবে যন্ত্রমানবেরা। শিল্পখাত,বস্ত্রখাত সমস্তকিছুই ধূলিসাৎ হয়ে যাবে প্রাইভেসি তথা সিকিউরিটি কোডের কারনে। সমস্তকিছুই তৈরি হবে পাসওয়ার্ডের আদলে। কি পোশাক, কি চিন্তা চেতনা, কি যন্ত্রপাতি, কি বসবাসের জায়গা? শেয়ার বাজারের শেয়ারের মতো তখন সকলেই প্রাইভেসি তথা সিকিউরিটি কোড কিনবে।  বর্তমানের আইসিটি বিশেষজ্ঞরা যেখানে সফটওয়ার ও ওয়েব সাইড ডিজাইনিং করছে, তখন এই বিশেষজ্ঞদের কর্মপরিধি কি হবে? এখন যে আমাদের মানবিক সভ্যতায় যতো সমস্যা। হারালে যে পাওয়ার মতো কিছুই থাকে না। কল্পনা আর দৃশ্যমান জগতের মাঝে যখন কোন পার্থক্য থাকবে না, তখন অনুভূতির কি কোন মূল্য থাকবে? জগতটা চলবে পূর্ণাঙ্গ প্রকৃত অভিনয়ের আওতায়। এখন যেভাবে বিশ্রাম নিয়ে আমাদের সমস্ত কার্যকলাপ ও আচরনিক বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পাচ্ছে,  তখন কি আমাদের এক সেকেন্ড বসার সময় থাকবে? সোফিয়ার মতো একটা রোবটই নিজের অবস্থান থেকে জানান দিয়ে গেলো- আগামীতে কি হতে যাচ্ছে ? সে নাকি সন্তান চায়। পরিবার হলে তার আরো ভালো লাগবে। কোন অবস্থানে আছেন- বিশ্বাস করেন। সেই সময় আর বেশী দূরে নয় থ্রিডি ভাসর্নের বদৌলতে কল্পনা হবে বাস্তব আর বাস্তব হবে কল্পনা। চিন্তা করুন,ভাবুন আর অনুমান করুন জাগতিক বিশ্বে এক বিশাল পরিবর্তন আসছে। এখন কথা বলতে পারা ও কথার বিপরীতে শ্রুতিমধুর উত্তর দেওয়াকে বাহাদুরী ভাবি। কিন্তু যখন কল্পনার বিপরীতে বাস্তবতা রূপ লাভ করবে ও যন্ত্রমানবদের কল্পনা বুঝার বোধশক্তি অর্জিত হবে; তখনকার মানবজাতির অবস্থানটা কি হবে ভেবে দেখেছেন একবার? কম্পিউটারে একপাতা টাইপ করে,একটি বেতনের সেলারী সিট তৈরি করে নতুবা একটি দামী এন্ডোয়েট  মোবাইল ব্যবহার করাকে আমরা অনেক সময় অমূলক বাহাদুরী হিসাবেই বিবেচনা করি। সামান্য ছবি,শব্দ,ভিডিও ও এনিমেশানিক সম্পাদনা দেখিয়ে আমরা কিছু একটা হয়ে যাই। কিন্তু শব্দ ও ছবির পাশাপাশি অতীন্দ্রিয় কল্পনা ও স্পর্শ যখন সকলের দৃষ্টিগোচর হবে তখন সেলিব্রেটিদের ডুপ্লিকেট কপির সাথে বাস্তবতাকে মিলাতে পারবো না। এখন যেখানে শুধু সফটওয়্যার ব্যবহার করে একজন হাজার জন হয়ে কথা বলছে। তখন সফটওয়্যারের জায়গায় ব্যক্তি মানুষের জীবন্ত কার্বন কপি কথা বলবে। বিশ্বাস করতে পারেন কি হতে যাচ্ছে? এক সেকেন্ডের অনুভূতিকে আমরা পুরো দিনব্যাপী উদযাপিত করি। অনেক সময় মাস গড়িয়ে বছর শেষ হয়। তারপরও অনুভবের কমতি নেই। আর ভবিতব্যে বছরের অনুভব সেকেন্ডেই হারিয়ে যাবে। নবজাগতিক বিশ্বে নিজের অবস্থানকে ধরে রাখতে হলে মস্তিষ্কের যাবতীয় চেতনাকে বিকশিত করতে হবে, তা না হলে আমাদের এই তথাকথিত আস্ফালন শুধু নিজের মাঝেই সীমাবদ্ধ থাকবে। মূল্যহীন হয়ে পড়বে আমাদের কথাবার্তার সাথে চিন্তাচেতনা। কারন আমাদের কর্মহীনতা ও আলস্যকে নতুনভাবে প্রতিস্থাপন করবে যন্ত্রমানবেরা – তাদের গুনগত ও পরিমানগত কর্ম সাফল্যে।  পরীক্ষামূলকভাবে কাজ করা এই যন্ত্রমানবের কর্মক্ষমতা দেখে কি ভবিষ্যতকে অনুমান করা যায় না, কি হতে যাচ্ছে?  যন্ত্রমানব ও আধুনিক সভ্যতার বিকাশে নিজের অবস্থান তখনি বিবেচিত হবে, যখন আমরা পরিবর্তনশীলতার সাথে পুরোপুরিভাবে খাপ খাওয়াতে পারবো। এগিয়ে চলুন ব্যক্তিত্ব ও নিজের পারদর্শিতায় আগামীর সভ্যতায়নে। সমস্তকিছুতে অবস্থান ধরে রাখতে স্বীকৃত হোন নিজেকার বিলাসিত কর্ম-সংস্থাপনে।

 

লিখেছেন,

সুমন চক্রবর্ত্তী

সহকারী শিক্ষক

জুলেখা আমিনুর রহমান সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয়

 

(এই প্রবন্ধের মতামত লেখকের নিজস্ব এবং আমাদের নীতিকে প্রতিফলিত করে না।)

 

Leave a Reply