You are currently viewing জাতিসংঘ

জাতিসংঘ

  • Post category:BCS / Study

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পৃথিবীতে স্থায়ী শান্তি স্থাপনের সামরিক, রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উদ্দ্যোগের ফসল UNO যা আমরা জাতিসংঘ নামে পরিচিত।  এটি গঠন করতে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের চার বছর সময় লেগেছিল। 

১২ই জুন ১৯৪১ সালে লন্ডন জেমস প্রসাদে লন্ডন ঘোষণা, ১৪ ই আগষ্ট ১৯৪২ সালে আটলান্টিক সনদ, ১ লা জানুয়ারি ১৯৪২ সালের ওয়াশিংটন সম্মেলনে চীন, ব্রিটেন, সোভিয়েত রাশিয়াসহ ২৬ টি দেশের অনুমোদন সাপেক্ষে জাতিসংঘের গঠিত হয় এবং পরবর্তীতে এর কার্যক্রম শুরুর সাথে সাথে সদস্য রাষ্ট্র বাড়তে থাকে। বর্তমানে এর মোট সদস্য ১৯৩ টি দেশ। বাংলাদেশ জাতিসংঘের ১৩৬ তম সদস্য। 

জাতিসংঘ সনদের ১নং ধারায় এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে সুস্পষ্ট বলা হয় যুদ্ধ ও যুদ্ধভীতি থেকে মুক্ত একটা আন্তর্জাতিক অর্থনীতি প্রতিষ্ঠা করাই এর প্রধান উদ্দেশ্য। এছাড়া আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা স্থাপন,  সকল জাতির মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করা, যুদ্ধের মূলোতপাটন করাই ছিল জাতিসংঘের মূল উদ্দেশ্য। 

জাতিসংঘ সনদে ৭ টি নীতির কথা ঘোষণা করা হয়েছে। প্রধানত ৬টি সংস্থা নিয়ে জাতিসংঘ গঠিত হয়। 

১. সাধারণ পরিষদঃ জাতিসংঘের সব সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে সাধারণ পরিষদ গঠিত। প্রতি বছর সেপ্টেম্বর মাসের তৃতীয় মঙ্গলবার সাধারণ পরিষদের অধিবেশন বসে। এই অধিবেশনে প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্র ৫জন প্রতিনিধি পাঠাতে পারে। সাধারণ পরিষদে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের মর্থনের প্রয়োজন হয়। জাতিসংঘ সুইজারল্যান্ড, ভ্যাটিকান,  পিএলও কে পর্যবেক্ষকের মর্যাদা দিয়েছে। 

নির্বাচন, অর্থ সম্পর্কিত, নির্বাহী সংক্রান্ত, শান্তির জন্য ঐক্য প্রতিষ্ঠার ক্ষমতা প্রভৃতি কাজ করে থাকে। 

২. নিরাপত্তা পরিষদঃ জাতিসংঘের মূল বিভাগ হলো নিরাপত্তা পরিষদ। জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত নিরাপত্তা পরিদের সদস্য ছিল ৫ টি স্থায়ী ও ৬ টি অস্থায়ী রাষ্ট্র। ১৯৬৫ সালের ৩১ শে আগষ্ট নিরাপত্তা পরিষদের  অস্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র ৬টির স্থানে ১০ টি করা হয়।। নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য ২ বছরের জন্য নির্বাচিত হয়। আর ৫ টি স্থায়ী সদস্যদের ভেটো দেবার ক্ষমতা রয়েছে। জাতিসংঘের স্থায়ী সদস্য  রাষ্ট্র হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স।

শান্তিভঙ্গ, ভীতি প্রদর্শনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষা, নতুন সদস্য গ্রহণ বিষয়ক ক্ষমতা, সদস্য বহিষ্কার ক্ষমতা প্রভৃতি কাজ করে থাকে।

৩. অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদঃ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আর্থিক, সামাজিক ও সংস্কৃতিক উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদ গঠিত হয়েছে।

অস্ত্রের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ, নিরস্ত্রীকরণ, শান্তিপূর্ণ উপায়ে বিরোধ সমাধান, মানবাধীকার প্রতিষ্ঠা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নারী উন্নয়নে এ পরিষদ অবদান রেখে চলেছে।

৪. অছি পরিষদঃ জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রের প্রশাসনিক বিন্যাস, শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা করা অছি পরিষদের দায়িত্ব। ১৯৪৫ সালে ১১টি দেশের দায়িত্ব নিয়ে এ পরিষদের যাত্রা শুরু হয় এবং ১৯৯৪ সালের পর থেকে অছি পরিষদের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।

৫. আন্তর্জাতিক আদালতঃ জাতিসংঘের মুখ্য বিচার প্রতিষ্ঠান অন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে এর প্রধান কার্যালয়। 

আন্তর্জাতিক আদালতের এখতিয়ার তিন ভাগে বিভক্ত। ১. সেচ্ছাধীন, ২. আবশ্যিক, ৩. পরামর্শমূলক এখতিয়ার। 

 ১৫ জন বিচারক নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালত গঠিত, যারা ৯ বছরের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত হন।

৬. সচিবালয়ঃ জাতিসংঘের বিশাল কর্মকান্ডের কেন্দ্রবিন্দু সচিবালয়। সকল প্রশাসনিক কাজ সচিবালয়ে থেকে পরিচালিত হয়। সচিবালয়ের প্রধান কে মহাসচিব বা সেক্রেটারি জেনারেল বলা হয়। নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশক্রমে সাধারণ পরিষদ কতৃক পাঁচ বছরের জন্য মহাসচিব নির্বাচিত হন। মহাসচিব নির্বাচনের জন্য পাঁচটি স্থায়ী  সদস্যর সম্মতির প্রয়োজন হয়। জাতিসংঘের প্রথম মহাসচিব হলেন নরওয়ের ট্রিগভেলি এবং বর্তমানের মহাসচিব হলেন পর্তুগালের আন্তেনিও গুতেরেস।

জাতিসংঘের অধীন বা সহযোগী সংস্থা আছে ১৪ টি। UNDP, UNDP, UNCTA, UNICEF ইত্যাদি। 

জাতিসংঘের বিশেষ সংস্থা ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ১৭ টি। যেমন – ILO, WHO, IMF, IDA, UNESCO, FAO, UPU ইত্যাদি।

‌সোভিয়েত ইরান বিরোধ, বার্লিন অবরোধ,  ইন্দোনেশীয় সংকট সমাধান, আরব-ইসরাইল বিরোধ,  ফকল্যান্ড যুদ্ধ প্রভৃতি সমস্যা সমাধান করে জাতিসংঘ গঠনের উদ্দেশ্য সফলতা প্রকাশ করে। 

‌নিরাপত্তা পরিষদে বৃহত শক্তির ভেটো ক্ষমতা জাতিসংঘকে পঙ্গু করে রেখেছে।ফিলিস্তিনি সমস্যা, ইন্দোচীন সমস্যা, নেবাননের গৃহযুদ্ধ  আফগান সমস্যা, ইরাক সমস্যা, আফ্রিকার বর্ণবাদী সমস্যা প্রভৃতি সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘ ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে।

জাতিসংঘে শান্তি স্থাপনে বাংলাদেশঃ 

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা অপারেশনের অংশ হিসাবে একাধিক দেশে সক্রিয়ভাবে জড়িত রয়েছে। ১৯৮৮ সালে সর্বপ্রথম দুটি অপারেশনে অংশগ্রহণ করে,একটি হল ইরাক UNIIMOG এবং নামিবিয়া UNTAG। এই সময় তৎকালীন সরকার প্রধান ছিলেন, লেফটেনেন্ট জেনারেল হুসেন মুহাম্মদ এরশাদ এবং ১৯৮৮ সালে UNIIMOG সঙ্গে প্রথমবার এই পদক্ষেপ নেন।

উপসাগরীয় যুদ্ধ্বের সময় UNIKOM যান্ত্রিক পদাতিকবর্গ বাহিনীর অংশ হিসাবে কুয়েত এবং সৌদি আরব বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর (আনুমানিক ২১৯৩ জন) পাঠানো হয়েছিলো। তারপর থেকে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী UNPKO অলশ হিসাবে প্রায় পচিঁশটি দেশে ত্রিশটিরও বেশি মিশনে অংশ গ্রহণ করেছে। যে সকল দেশের মিশনে বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করেছে এর মধ্যে রয়েছে, নামিবিয়া, কাম্বোডিয়া মধ্যে, সোমালিয়া, উগান্ডা, রুয়ান্ডা, মোজাম্বিক, প্রাক্তন যুগোস্লাভিয়া, লাইবেরিয়া, হাইতি, তাজিকিস্তান, পশ্চিম সাহারা, সিয়েরা লিয়ন, কসোভো, জর্জিয়া, পূর্ব তিমুর, কঙ্গো, আইভরি ডি ইভয়ার এবং ইথিওপিয়া।

সেপ্টেম্বর ২০১০ পর্যন্ত, বাংলাদেশ থেকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সর্বোচ্চ সেনা অংশগ্রহণ করেছে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ১০,৮৫৫ জন (সামরিক এবং আইন প্রয়োগকারী) জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীর আওতায় বিভিন্ন দেশে কর্মরত ছিলেন। 

২০১০ সালে প্রথম ৮১ নারী পুলিশ সদস্য বাংলাদেশ এফপিইউ (ফর্মেড পুলিশ ইউনিট) হিসেবে কঙ্গোয় মিশনে যান। এ পর্যন্ত ৭১০ নারী পুলিশ সদস্য মিশন শেষ করে দেশে ফিরেছেন।

শান্তিরক্ষা মিশনের অংশগ্রহণকারী প্রথম পুলিশের নারী কর্মকর্তা ডিআইজি ও বর্তমানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার  মিলি বিশ্বাস।

[N.B. তথ্যসূত্রঃ  উইকিপিডিয়া]

জাতিসংঘ বিশ্ব শান্তির জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়। জাতিসংঘ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য সফলভাবে পালন করছে। তবে অনেক ক্ষেত্রে এই সংগঠন ব্যর্থ। যদি এর কারণ উল্লেখ করা যায় তবে এর স্থায়ী সদস্যর ভেটো ক্ষমতা এবং তাদের একাছত্র আধিপত্য বিস্তার উল্লেখযোগ্য। নিজেদের ক্ষমতার বিস্তার করার জন্য এই স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র জাতিসংঘের নিয়ম ভঙ্গ করছে এবং তাদের বিরুদ্ধে কেউ কোন অভিযোগ তুলতে সাহস করছে না।

লেখকঃ

মুহাইমেনুল ইসলাম তুহিন

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

Leave a Reply